নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় আগুনে অন্তত ৫২ জনের মৃত্যুর পর শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি আইন অমান্য করে শিশু শ্রম ব্যবহারের বিষয় আবার আলোচনায় এসেছে।

কারখানাটিতে নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ জন শিশু থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।

সরকারের কারখানা পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কম বেতনে শিশুদের কাজে নেয়ার অভিযোগে তারা গত ৩০ জুন ওই কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছিল।

তবে শুধু রূপগঞ্জের কারখানা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ৪০ লাখ শিশু কাজ করছে বলে ধারণা করছে জাতিসঙ্ঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের সোমারাণি বর্মণ এখন অন্তত তার শিশুকন্যার লাশ চাইছেন। তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়তো।

তাদের এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় তার মেয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিল কারখানাটিতে আগুন লাগার বার দিন আগে।

সোমারাণি বর্মণ আগুন লাগার খবর পাওয়ার সাথে সাথে মেয়ের খোঁজে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ছুটে আসেন কারখানার সামনে। সেখান থেকে ঢাকায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এসে মেয়ের লাশ পেতে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন।

সোমারাণি বর্মণ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে তাদের পরিবারের কর্তার রোজগার কমে যাওয়ায় অভাবের কারণে শিশু কন্যাকে কারাখানায় কাজে পাঠিয়েছিলেন। ‘মেয়ের লাশটা চাই। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চাই’ বলেন সোমারাণি বর্মণ।

হাশেম ফুডসের বিরুদ্ধে শিশুশ্রম নিয়ে মামলা
রূপগঞ্জের কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের আগেই গত ৩০ জুন কারখানা পরিদর্শন বিভাগ ওই কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেছিল কম বেতনে শিশুদের কাজে নেয়ার অভিযোগে।

কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফরের নারায়ণগঞ্জের উপ মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেছেন, তারা মামলা করার আগে কারখানাটিকে নোটিশও দিয়েছিলেন।

‘এরিয়ার (এলাকার) যে অফিসাররা আছেন, তারা এটা পরিদর্শন করেছেন, তারা শিশু শ্রমিক এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের দেখতে পান’ বলে জানান বড়ুয়া।

তিনি বলেছেন, তাদের কর্মকর্তাদের কারখানা পরিদর্শনের পর শিশু শ্রমিক নিয়োগ না করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল, কারখানার মালিকপক্ষ তার জবাব দেয়নি।

তিনি উল্লেখ করেন, নোটিশের জবাব না পাওয়ার পর গত ৩০ জুন তারা শ্রম আদালতে মামলাটি করেছিলেন।

কারখানাটির কর্তৃপক্ষ সরকারি অধিদফতরের ব্যবস্থাকে আমলে নেয়নি বলে নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা বলেছেন।

ইউনিসেফের উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, কারখানাটিতে নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন বা তারও বেশি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, স্বজনরা যে দাবি করছেন, তার ভিত্তিতে নিহতদের মধ্যে ১৬ জন শিশু থাকতে পারে, যা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে তিনি বলেছেন, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিহতদের বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত করে তারা বলতে পারছেন না এবং ডিএনএ পরীক্ষায় কিছুটা সময় প্রয়োজন।

ইউনিসেফ কেন উদ্বিগ্ন?
এদিকে বিভিন্ন খাতে শিশু শ্রমের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষা আইন থাকলেও ৪০ লাখের বেশি শিশু বিভিন্ন খাতে কাজে রয়েছে এবং এর মধ্যে ৩০ লাখের বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজে করছে।

ঢাকায় ইউনিসেফ এর চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা ফাতেমা খায়রুন্নাহার বলেছেন, পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক বলে তারা মনে করেন।