সেনাপ্রধান ও বন্ধুর টেলি কথোপকথন নিয়ে সেনা সদরের বক্তব্য: আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তা কাট-পেষ্ট ও এডিট করে প্রচার করা হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে মুখ খুলেছে সেনা সদর। সেনা প্রধান আজিজ আহমদ ও তাঁর এক বন্ধুর ( অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল শহিদ উদ্দিন খান) টেলিকথোপকথন দুই দফায় প্রকাশ হওয়ার পর আন্তবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) দফতর থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর প্রধানের সাথে বন্ধুর কথোপকথনের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়েছে- “সম্প্রতি কয়েকজন অবাঞ্চিত ঘোষিত (পিএনজি) অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বিদেশ হতে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য সম্বলিত গল্প এবং বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত মান্যবর ব্যক্তিদের কথোপকথনকে সংগ্রহ করতঃ আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তা কাট-পেষ্ট ও এডিট করে তাদের উদ্দেশ্য মাফিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপনের মাধ্যমে সেনাসদস্য ও দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়ে ক্রমাগত দেশ এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।”
এখানে উল্লেখ্য, এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনা সদর থেকে সেনাপ্রধান ও তাঁর বন্ধুর টেলিকথোপকথনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বক্তব্য কাট-পেষ্ট ও এডিট করা হয়েছে। সুতরাং এতেই স্পষ্ট সেনাপ্রধান ও তাঁর বন্ধুর প্রকাশিত কথোপকথন অসত্য নয়। এছাড়া আই এস পি আর সেনা প্রধানের টেলি কথোপকথনের কথা সরাসরি বলা হয়নি। আইএসপিআর-এর বক্তব্যে ‘মান্যবার’ ব্যক্তিদের কথোপকথন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আই এস পি আর-এর বক্তব্যটি হুবহু নিচে পাঠকদের জন্য দেয়া হল-
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত ও পেশাদার বাহিনী এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে তৈরী ৪৯ বছরের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ এই সেনাবাহিনী বর্তমানে পেশাগতভাবে দক্ষ ও পরিপক্ক, যা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সর্বশেষ আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে হাসিমুখে উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সেনাসদস্যরা উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রস্তুত করে পেশাদারিত্বের সাথে দেশে এবং দেশের গন্ডি পেরিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথেই কাজ করে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে
গ্রহণযোগ্যতা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা ও তার উন্নত প্রশিক্ষণ ও পেশাদারিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ গভীরভাবে ধারণ করে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশমাতৃকার সেবায় সর্বদা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে। দেশে বিভিন্ন দূর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভূয়সী প্রশংসা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে অত্যন্ত সুসংহত করে চলেছে। চলমান করোনা মহামারীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ হিসেবে ঘোষনা করার পর, তাঁর নির্দেশে সেনাবাহিনী করোনা যুদ্ধে জনগণের পাশে থেকে অভূতপূর্ব সেবা প্রদান করে। ফলশ্রুতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন চাকুরী করার পর অবসর গ্রহণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অবসরপ্রাপ্ত প্রতিটি সেনাসদস্য অবসর জীবনে নিজেকে একজন প্রাক্তন সেনাসদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন এবং সৎ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করেন। তবে অবসর জীবনে যদি কোন প্রাক্তন সেনাসদস্য শৃঙ্খলা বিবর্জিত জীবনযাপন করে যা সামরিক ও বেসামরিক পরিমন্ডলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করে, তখন তাকে সংশোধনের জন্য দেশের সকল সেনানিবাস সমূহে অবাঞ্চিত বা Persona Non Grata (PNG) ঘোষণা করা হয়।
সম্প্রতি কয়েকজন অবাঞ্চিত ঘোষিত (চঘএ) অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বিদেশ হতে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য সম্বলিত গল্প এবং বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত মান্যবর ব্যক্তিদের কথোপকথনকে সংগ্রহ করতঃ আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তা কাট-পেষ্ট ও এডিট করে তাদের উদ্দেশ্য মাফিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপনের মাধ্যমে সেনাসদস্য ও দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়ে ক্রমাগত দেশ এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তাদের এহেন কর্মকান্ড তাদেরকে চঘএ করাটা যে যথার্থ ছিল তাই প্রমাণ করে। তাদের এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘৃণ্য অপকর্মে প্রতিটি সেনাসদস্য অত্যন্ত মর্মাহত। কাল্পনিক, বাস্তবতা ও নৈতিকতা বিবর্জিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত এসব গল্প বা বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং দেশের জনগণ বিশ্বাস করেনা বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে।