হল চালাবে প্রশাসন, ছাত্রলীগ কেন : ডাকসু ভিপি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন ১৯ নভেম্বর ২০১৯
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ও ছাত্ররাজনীতির সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। সাক্ষাতকার নিয়েছেন মোরশেদ মুকুল।
নয়া দিগন্ত : বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। একজন ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে কিভাবে দেখছেন?
নুরুল হক : যে ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন করছে, আমি মনে করি সেটির যথাযথ কারণও রয়েছে। বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগসহ বিভিন্ন ঘটনায় যৌক্তিক প্রতিবাদ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নোটিশ দিয়েছে। একইভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেখানে ভিসি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটুক্তিও করেছেন।
দেখা যায়, বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিসি থেকে প্রক্টরিয়াল বডির পদগুলোতে যারা নিয়োগ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। সে কারণেই বেশির ভাগে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অদক্ষ লোকগুলোই এসব পদে আসছেন। রাজনৈতিক আনুগত্য দেখে এই পদগুলোতে বসানো হয়। তাদের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ছাত্ররা আজ প্রতিবাদ করছে। তাদের চলমান আন্দোলন যথাযথ ও যৌক্তিক।
নয়া দিগন্ত : দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যদিও আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি ঢাবির ভিসি গেস্টরুম ও গণরুম থাকবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির কতোটুকু বাস্তবায়ন দেখছেন?
নুরুল হক : শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে অবস্থাটা আরো প্রকট। দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিলে হলে থাকা যায়, অন্যথায় নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পান না।
সম্প্রতি বুয়েটের হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারা হলো- সেই ঘটনা যখন সারা দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছে তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল যে তাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন তৈরি হতে পারে। কারণ একই চিত্র যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও আগে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় হলে সিট দেওয়া হবে। আর কোন বহিরাগত হলে থাকতে পারবে না। এটি তারা কতোটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবে কিংবা তাদের সদিচ্ছার বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। কারণ এখনো পর্যন্ত আমরা দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখিনি।
ভিপি হিসেবে আমি গত সাত মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও হলগুলোর প্রভোস্টদেরকে বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়েছি। তাদের সাথে কথা বলেছি এই দাবিতে যে, হলগুলো প্রশাসনিকভাবে চলবে। হল কেন ছাত্র সংগঠন চালাবে? হলে হাউস টিউটর থাকেন, প্রাধ্যক্ষ থাকেন। বেতন নেন সুযোগ সুবিধাও ভোগ করেন। সেখানে ছাত্রলীগ হল চালাবে কেন? কিন্তু আজ পর্যন্ত হলগুলোতে তারা পরিবর্তন আনতে পারেনি। সুতরাং সেক্ষেত্রে আস্থার চেয়ে অনাস্থাটাই বেশি। আশার বাণী হচ্ছে ছাত্ররা যদি একবার জেগে উঠে তাদের দাবিতে- তাহলে প্রশাসন সেখানে বাধ্য হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীদেরকে জাগরণটা তৈরি করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বিশেষ করে প্রধান দুটি দলের ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের সহায়ক না হয়ে কি প্রতিবন্ধক হচ্ছে বলে মনে করছেন?
নুরুল হক : এক্ষেত্রে প্রধান দু’টি দল তারা- বিশেষ করে অতীতে ছাত্রদের ও বিভিন্ন সমস্যায় মানুষের পাশে দাড়িঁয়েছে। নব্বুই দশকের পরবর্তীতে যদি আমি তাদের গতি প্রকৃতি দেখি তারা ছাত্রদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেনি কিংবা শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ রক্ষার কথাও বলেনি। শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিয়েও তারা কথা বলেনি। বরং তারা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে এতোটাই জড়িয়েছে যে খুন-খারাবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে। তাদের সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য শিক্ষক লাঞ্চনাসহ নানা ধরণের অপকর্ম করেছে। এক কথায় তারা ছাত্রবান্ধব কোন কাজ করছে না।
নয়া দিগন্ত : যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়ে আপনি নির্বাচনে নেমেছিলেন- যেমন, হলগুলোতে গেস্টরুম থাকবে না, গণরুম থাকবে না। এতোদিনে আপনাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি কতোটুকু রাখতে পেরেছেন?
নুরুল হক : প্রতিশ্রুতি কতোটুকু রাখতে পেরেছি কিংবা ব্যর্থ হয়েছি সেটা শিক্ষার্থীরাই বলবে। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে যেটা মনে করি ডাকসুতে নুর একা নয়, ভিপি কিংবা জিএসও একা নয়। ডাকসু শিক্ষার্থীদের একটি প্লাটফর্ম। সার্বিকভাবে মনে করি, ডাকসু যে ভূমিকাটা রাখার কথা ছিল- ২৮ বছর পরে নির্বাচন হয়েছে- শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করবে সে ক্ষেত্রে ডাকসু অনেক কাজ করতে পারেনি। সামনে এখনো আরো চারমাস সময় আছে। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার জন্য। তাদের সাথে নিয়ে দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামার। সেক্ষেত্রে যদি তারা রেসপন্স করে তাহলে আমরা দাবিগুলো পুরণ করতে পারবো।
নয়া দিগন্ত : কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে আপনি আজকে ডাকসু ভিপি। জানেন নিশ্চয়ই, ভিন্ন একটি প্লাটফর্ম থেকে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। এই দাবির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
নুরুল হক : বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই দাবির কিছুটা যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা যেটা দেখেছি বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতেও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সেটি অবশ্য চাকরির বয়স ৩২ করার ক্ষেত্রে। তারা ২০১২ সাল থেকে আন্দোলন করছে। সরকার ছাত্র-শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি সুরাহা করতে পারতো। চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কিছুটা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও যে অবসরের সীমা, শিক্ষা ব্যবস্থা সার্বিক বিবেচনায় কিছুটা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
নয়া দিগন্ত : কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়া ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে। কতোটুকু সাড়া পাচ্ছেন?
নুরুল হক : বর্তমান যে রাষ্ট্র কাঠামো সেখানে গণতান্ত্রিক মানুষদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ঠিক একই ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সেই একই ধরণের বাধার মুখে ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’ও। যেমন প্রোগ্রাম করতে গেলে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।