জাকের পার্টির মত ইসলামি দলগুলোর নেতাদের কেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ভারত?
ভারতের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্যতম ইসলামী দল জাকের পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন দিল্লি সফর করছেন – তারা দেখা করছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গেও।
গত মাসদুয়েকের মধ্যে ভারত সরকার বা সরকারেরই কোনও সংস্থার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যেমন দিল্লি সফরে এসেছেন – তেমনি তরিকত ফেডারেশন বা জাকের পার্টির মতো ছোট দলগুলোও একই ধরনের আমন্ত্রণ পেয়েছে।
বাংলাদেশে এই নির্বাচনের বছরে ভারত কেন এই দলগুলোকে প্রকাশ্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে? আর দিল্লিতে এসেই বা তারা ঠিক কী করছেন – তা নিয়ে রীতিমতো আলোচনাও চলছে।
গত কয়েক সপ্তাহের ভেতর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা এইচ টি ইমাম বা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যেমন দিল্লিতে ঘুরে গেছেন, তেমনি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নাজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীও ভারত সফরে এসেছেন।
একইভাবে এই মুহুর্তে ভারতের দিল্লি, পুনে, মুম্বাই শহরে সফর করছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদি।
তাদের সবার সঙ্গেই একান্ত বৈঠক করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কিংবা তাদের ডেপুটিরা। এমন কী বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনায় বসছেন তারা।
জাকের পার্টির নেতা মি. মুজাদ্দেদি বিবিসিকে বলছিলেন, “ভারত সরকার আমাদের ভাল চায়, আমাদের সাথে একসাথে থাকতে চায়, সেটা আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি।”
“আর এটা যেমন ভারতের স্টেবিলিটি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য জরুরি, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্যও কিন্তু এই উদ্যোগটা খুব পজিটিভ একটা ব্যাপার। ফলে এখানে দুজনেরই দুজনকে খুব প্রয়োজন”, বলছিলেন জাকের পার্টির প্রধান।
তিনি আরো জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব দরকার এবং, এর গুরুত্বের কথা তারা ভারতের নেতামন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের সময় তুলে ধরেছেন।
ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে বহু বছর কাজ করে আসা নিরাপত্তা বিশ্লেষক শান্তনু মুখার্জি বলছিলেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এই ছোট দলগুলোকেও ভারত কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুর্ভাবনায় ভারত?
বৃহৎ ইসলামী জোটের স্বপ্ন দেখছে ঐক্যজোট
তার কথায়, “দেখুন, আজ যেভাবে সন্ত্রাসবাদের জমি তৈরি হচ্ছে বা ইসলাম ক্রমশ মৌলবাদের দিকে ঝুঁকছে, তাতে ভারতের দিক থেকে কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে এটা খুবই স্বাগত। একটা পার্টি যতই অকিঞ্চিৎকর হোক, তাদের মূল্য যত সামান্যই হোক, তাদের মুখ্য ধারায় রাখাটা আসলে খুব দরকার।”
“আর তার কারণটাও খুব সহজ, এই দলগুলো আমাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে থাকলে তারা অন্য শিবিরে যাবে না!”
শান্তনু মুখার্জি আরও মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেশী বলে নিজেদের প্রমাণ করে দিয়েছে অনেক আগেই – তাই সে দেশের সব রাজনৈতিক শক্তিকেই ভারতের নিজের সঙ্গে রাখাটা খুব দরকার।
“এমন কী বিএনপি নেতারাও যেভাবে সম্প্রতি দিল্লি ঘুরে গেলেন, তাতেও এটা পরিষ্কার যে সবাই একটা অপরচুনিটি খুঁজছে”, বলছিলেন তিনি।
কিন্তু তরিকত ফেডারেশনের মতো দল, যাদের মাত্র দুজন এমপি – কিংবা জাকের পার্টি, যাদের পার্লামেন্টে কোনও প্রতিনিধিত্বই নেই, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতের কী লাভ?
এই প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেহাতই গৎবাঁধা উত্তর দিচ্ছেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
তবে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক ওআরএফ, তার সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য জবাবে বলছেন, “আসলে বাংলাদেশ মানেই যে শুধু দুটো বড় রাজনৈতিক দল নয়, ওটা একটা বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ – বোধহয় সেই ধারণাটাই তৈরি করার একটা চেষ্টা চলছে।
“ভারতের মানুষকেও এই বার্তাটা দেওয়া হচ্ছে যে বাংলাদেশের সব ধরনের দলের সঙ্গেই আমরা মতবিনিময়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।”
কিন্তু ভারতের এই ‘আউটরিচে’র আওতা থেকে একটা দলই অবধারিতভাবে বাইরে থাকবে – আর সেটা জামায়াতে ইসলামী।
“জামায়াতের সম্পর্কে সঙ্গত কারণেই ভারতের একটা আপত্তির জায়গা থাকবে, আর সেটা খুবই স্বাভাবিক। ভারত একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হলেও ধর্মকে বাদ দিয়ে কিন্তু আমাদের সেক্যুলারিজম নয়।”
“বাংলাদেশে যে পার্টি লিবারাল ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করবে, ভারতও তাদেরকেই স্বাগত জানাবে। আমার মনে হয় এই সব আমন্ত্রণে সেই ভাবনারই প্রতিফলন ঘটছে”, বলছিলেন মিস ভট্টাচার্য।
জাকের পার্টি বা তরিকত ফেডারেশনের মতো সূফী ভাবধারার দলগুলো ঘোষিতভাবে জামাত-বিরোধী, আর সেটাও তাদের দিল্লিতে গুরুত্ব পাওয়ার একটা বড় কারণ।
অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ উঠত, এখন বৃহত্তর স্বার্থে ভারত যে সেটাকেও উপেক্ষা করতে রাজি – এই সব আমন্ত্রণের মাধ্যমে সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
বিবিসি বাংলায় আরো খবর:
কোন দেশে লেখাপড়ার খরচ সবচেয়ে বেশি?
সাফ ফুটবল: ধারাভাষ্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস