কেন উইলিয়ামসনকে আউট করার পর বাঁধভাঙা উল্লাস মিরাজ-শান্তদের। ছবি: এএফপি
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন সকালে ফোনে জানতে চান, স্পিনাররা খুব টার্ন পাচ্ছেন কিনা। ৪৭ রানে চার উইকেট পড়ে গেলে এ ধরনের প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। ৭০ মিনিটে চার উইকেটের পতন কিছুটা বিস্ময়করও। কিন্তু তখন তো জানা ছিল না আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে। এক দিনে ১৫ উইকেটের পতন টেস্টের জন্য বড় ঘটনা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টে সেটাই ঘটেছে। তাই তো দিনশেষের আলোচনা জুড়ে ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ডি মেরিট পয়েন্টের শঙ্কা।
টেস্টে শেষে পিচের মূল্যায়ন কী হবে তা নিয়ে ভাবছে না বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা জুড়ে আছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়। দেশে খেলার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জিতে নেওয়া। মেহেদী হাসান মিরাজের কথায়ও তা পরিষ্কার। প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় দলের এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘সব দেশই দেশে খেলার সুবিধা নেয়। নিউজিল্যান্ডে খেলা হয় পেস ও বাউন্সি উইকেটে। স্বাভাবিকভাবে মিরপুরে স্পিন উইকেটে খেলি।’ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং উইকেটে ১৫০ রানে টেস্ট জয়ী দল মিরপুরে ঘোর লাগা স্লো ও লো উইকেটে খেলার অর্থ হলো, যে কোনো মূল্যে জিততে চাওয়া। বাংলাদেশ দলের এ কৌশল কিউইদের ভালো করেই জানা। এ কারণে মিচেল স্ট্যান্টনার সংবাদ সম্মেলনে বলতে পারেননি মিরপুর টেস্ট তৃতীয় দিনে গড়াবে কিনা।
কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মিরপুরের উইকেট বোঝার জন্য অনেক সময় এক দুই সেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশ দলেরই যখন এই হাল, তখন নিউজিল্যান্ডের অবস্থা কী হতে পারে ভাবা যায়! এ কারণে হয়তো লিটন কুমার দাস এক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মিরপুরে বেশি সময় অনুশীলন করলে ব্যাটিং ভুলে যেতে হবে। একে তো কালো মাটির পিচ, উপরন্তু ‘হোম অ্যাডভান্টেজের’ নামে স্লো ও লো করা নিয়ম করে ফেলেছে বিসিবি।
এশিয়ার বাইরের দলগুলোকে হারাতে এ কৌশল সেই ২০১৫ সাল থেকে কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশ। বিসিবিকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হাথুরুসিংহে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই মিরপুরে টেস্ট জয়ের পেছনেও ছিল হাথুরুসিংহের এই কৌশল। কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা-কোচ হাথুরুসিংহের এ রসায়ন পরবর্তী সময়ে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে করে দ্রুত সাফল্য পেলেও দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নয়। ভারত বিশ্বকাপে সাকিবদের ভরাডুবির পেছনেও স্লো ও লো উইকেটে খেলার প্রভাব রয়েছে। মিরপুরে স্পিন জাদুকররা ভারতে ছিলেন ম্লান। পেস বোলিংয়ের উত্থান মাটি হয়ে গেছে।
ভারতের চেন্নাইয়ের ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে দেশে নিম্নচাপ, ঢাকার আবহাওয়া গুমোট। গতকাল তো দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। উভয় দলের বোলাররাই গুমোট আবহাওয়ার সুবিধা কাজে লাগাতে পারলেও ব্যাটাররা ভালো করতে পারেননি। টপঅর্ডারে জুটি হয়নি একটিও। গুমোট আবহাওয়ার মতো উভয় দলের ব্যাটিংও ছিল গুমোট। মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান নড়বড়ে ছিলেন প্রথম থেকে।
নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক বল বুঝতে পারছিলেন না। মুশফিকুর রহিম ও সাহাদাত হোসেনের জুটি কিছুটা আশা দেখাচ্ছিল। এই জুটির ভাগ্যের শিকেও ছেড়েনি। ৫৭ রানেই জুটির বিচ্ছেদ মুশফিকের ভুলে। ৪০.৪ ওভারে কাইল জেমিসনের বল সামনে বেড়ে ডিফেন্ড করার পরও অবিশ্বাস্য ভুল করে বসেন উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। অফ স্টাম্পের বাইরের দিকে বাঁক নেওয়া বল হাত দিয়ে থামালে কিউইদের আবেদনে আউট হন তিনি। ১০৪ রানে পাঁচ উইকেট হারানো স্বাগতিক দল পরের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারায় ৬৮ রানে। ভুলের পর ভুল শট খেলে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
স্বাগতিকরা ৬৬.২ ওভার টিকে থাকলেও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সেটাও হয়তো সম্ভব হবে না। গতকাল ১২.৪ ওভারেই ৫৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে টালমাটাল তারা। তাইজুল, মিরাজ, নাঈমরা আজ সকালেই গুটিয়ে দিতে পারেন তাদের। ৭০ থেকে ৮০ রানের লিডও থাকতে পারে বাংলাদেশের।
সমকাল