কর্মী নয়, পুলিশেই ভরসা শেখ হাসিনার
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বিশেষ প্রতিনিধি
পুলিশকে চাঙ্গা রেখে মাঠ ধরে রাখতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী ঘরানার যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, তাদেরকে দিয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদেরকে উজ্জীবিত রাখতে নানা নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাদেরকে বোঝানো হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে; যার সুফল পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা পাবে। যে কারণে মার্কিন ভিসানীতি এবং নিষেধাজ্ঞা তারা থোরাই কেয়ার করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে কোন মূল্যে মাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর এই মাঠ ধরে রাখতে তারা যতোটা না তার কর্মী বাহিনীর উপর নির্ভর করতে চাচ্ছে, তার চেয়ে বেশী নির্ভরশীল হয়ে উঠছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর। যে কারণে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যেকোন উপায়ে চাঙ্গা রাখতে চায়। আর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ বাহিনীকে চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একেবারেই আওয়ামী ঘরানার পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর। এর মধ্যে বর্তমান আইজিপি, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকাসহ সকল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, ঢাকার ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ, ঢাকার সবক’টি জোনের ডিসিসহ অন্তত শ’খানেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। সরকার তাদেরকে ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নানা দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ওইসব পুলিশ কর্তাদের বিভিন্ন স্থানে দেয়া বক্তব্যে এই চিত্র দিনদিন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘আগামী দিনে নির্বাচন বা আইনশৃঙ্খলা-জনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে। তারা আগামী দিনে আইনশৃঙ্খলা-জনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘যার দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, সেই বাঙালির হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে শত চক্রান্ত করেও মুছে ফেলা যায়নি। আমরা এখন দেখছি আমাদের বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক বেশি আগ্রহী। তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়াশুনা করতে চাচ্ছেন। উনার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে তারা জানতে আগ্রহী।’ গত ২২ আগষ্ট অপর চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হবিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অজয় চন্দ্র দেবকে দেখতে গিয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশ কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দেয় না। গত ১৬ আগষ্ট অপর এক অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্য আমরা আমাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আছে। যারাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রায় একই ধাঁচের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী ঘরানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারাও। অপরদিকে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া দলের নেতারা বলছেন, পুলিশ বিনা কারণেই তাদের উপর হামলা চালাচ্ছে এবং নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল ৮ সেপ্টেম্বরে যাত্রাবাড়ী এলাকার জামায়াতের মিছিলের উদ্ধৃতি দিয়ে কয়েকজন নেতা বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত মিছিল শেষে পথসভা করে নেতা-কর্মীরা যখন চলে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই পুলিশ তাদের উপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং গুলি চালায়। পুলিশ সেখান থেকে পথচারীসহ ৪৬জনকে গ্রেফতার করে। মিছিল ও পথসভাটি অনেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যম ও যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছিলেন। জামায়াত সূত্র বলেছে, ওখানে আইনশৃঙ্খলা-জনিত কোন ঘটনাই ঘটেনি। কিন্তু তারপরেও পুলিশ সেখানে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি চালিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের মেয়াদ যতো ঘনিয়ে আসছে ততোই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সামনে তারা আরো ভয়ানক-রূপ নিয়ে মাঠে নামবে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। সরকারকে টিকিয়ে রাখতে কিছু শীর্ষ কর্তারা এমনই নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যে কারণে তারা মার্কিন ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞাকে থোরাই কেয়ার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যের বক্তব্য হচ্ছে এমন, ‘ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ওইসব ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞায় তাদের কিছুই আসে যায় না।’