বছরের কয়েকটি মাসের প্রতি আওয়ামী বলয়ে বিশেষ প্রীতি বা অতিরিক্ত ভক্তি লক্ষ্য করা যায় । এই ধরণের মাসোয়ারী ভক্তি বা প্রীতি জগতের অন্য কোথাও দৃষ্টিগোচর হয় না । কোন মাসে সংঘটিত একটি ঘটনার জন্যে পুরো মাসটিকেই বুক করে ফেলা হয় ।
তাদের এই মাসোয়ারী -প্রীতির সাথে মনে হয় মাসোয়ারী ভীতি বা মাসোয়ারী অস্বস্তিও রয়ে গেছে । আওয়ামী বলয়ের সেই অস্বস্তির মাসটি হলো নভেম্বর মাস ।
নভেম্বর মাসের প্রতি সরকারের এই ভীতি বা অস্বস্তির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে । একটি হলো ৭ই নভেম্বর , জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস । এই দিবসটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্পিরিটটির কারণেই এই দেশটিকে পুরাপুরি সিকিম বানানো সম্ভব হচ্ছে না । আধিপত্যবাদী শক্তি এবং তাদের এদেশীয় দোসররা দিবসটির প্রতি একারণেই এত বেশি আক্রোশ পোষণ করে । এই আক্রোশ থেকেই দিবসটি নিয়ে বিএনপিকে কোন সমাবেশ করতে দেয় নি । ৭ই নভেম্বরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে । কিন্তু মানুষের মন থেকে ৭ই নভেম্বরের চেতনা মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না । আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে সরকার যত নতজানু হচ্ছে – জনগণের মধ্যে ৭ই নভেম্বরের চেতনা তত বেশী জাগ্রত হচ্ছে ।
এই নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ আবার মাওলানা ভাসানীর মৃত্যু দিবস । আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেও আওয়ামীলীগ এই দিনটিতে নীরব থাকে । কারণ আধিপত্যবাদী শক্তির আতংক মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী তাঁর এই স্পিরিটটি তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাতে অর্পন করে গেছেন । মাওলানার প্রতি সকল আওয়ামী মেশিনারিজের মূল গোস্বাটি সম্ভবত একারণেই । বলতে গেলে ভাসানী সমর্থকদের বড় অংশই এখন বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন অর্থাৎ মজলুম জননেতা ভাসানীর রক্ত এখন বিএনপির ধমনীতেই বেশি প্রবাহিত হচ্ছে ।
এই মাসটিকে নিয়ে সরকারের তিন নম্বর অস্বস্তি বা ভীতি হলো ২০শে নভেম্বর । মাওলানা ভাসানী এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার চেতনার মশালটি এখন যার হাতে পড়েছে , ঘটনাক্রমে সেই তারেক রহমানের জন্মদিনও পড়েছে এই নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার খোয়াব দেখা আওয়ামী লীগের জন্যে বিষয়টি আসলেই চিন্তার কারণ হতে পারে ।
তারেক রহমানই সম্ভবত: বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র নেতা যার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারের উপর কোন আদালত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে । তিনি ভুল বা অশুদ্ধ কিছু বললে তা ধরিয়ে দেয়ার মত ব্যক্তি বা মিডিয়ার অভাব আওয়ামী লীগের কোন কালেই ছিল না । এই কাজটি না করে আদালতের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচারে বাঁধা দিয়ে তাঁর ব্যাপারে মানুষের আগ্রহটি আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
কাজেই এই দেশটিকে যারা এখনও স্বাধীন সার্বভৌম ও মাথা উঁচু করে দেখতে চান ; তাদের প্রত্যাশার চাপটি এই তরুণ নেতার উপরেই বেশি পড়েছে । অনেকগুলো কঠিন কাজ তাঁর সম্মুখে হাজির হয়ে পড়েছে । বিরোধী শক্তির চরম ও অন্ধ বিদ্বেষ তাঁর জন্যে যেমন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে , তেমনি নিজ দলের সুযোগ সন্ধানী মানুষ গুলোও তাঁর জন্যে কম হুমকি নয় । বিরোধীপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে যে সব প্রচার প্রপাগান্ডা এযাবৎ চালিয়েছে , সময় তার অনেকগুলির জবাব দিয়ে দিয়েছে । তারপরেও কিছু পাবলিক পারসেপশন বা কিছু সন্দেহ এখনও রয়ে গেছে । সেগুলো দূর করার জন্যে তাঁকেই উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে ।
কাজেই তাঁর ৫২তম জন্ম দিনে আমার মত অনেকের প্রত্যাশা , এই নভেম্বরের স্পিরিট নিয়ে এই মাসে জন্ম নেয়া এই নেতার হাত ধরেই এদেশে একদিন গণতন্ত্র পুন:রুদ্ধার হবে । তাঁর শরীরে শুধু জিয়ার রক্তই নহে , নভেম্বরের স্পিরিটটিও তাঁর ধমনীতে সমানভাবে প্রবাহিত । কাজেই অন্য কারো বন্ধুর চেয়ে জিয়ার সন্তান হিসাবেই তাঁকে এদেশের মানুষ বেশি দেখতে চান ।
সেজন্যে বেশি না , তিনি যদি একটি কাজ তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরন করে করতে পারেন তবে তাঁকে আর পেছনে ফিরতে হবে না । তাঁর পিতা যেমন সমাজের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেধাবী , সৎ ও দক্ষ মানুষগুলিকে খুঁজে খুঁজে বের করেছেন -তিনিও সেই কাজটি শুরু করবেন এটা সকলের প্রত্যাশা । দলে মেরিটক্রেসির চর্চ্চা শুরু হলে দলের অভ্যন্তরে ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠাও সহজ হয়ে পড়বে । এভাবে বিএনপি যত শক্তিসালী হবে , এদেশে বাকশালের টিকে থাকা তত কঠিন হবে ।
কারো প্রতি শুধু অন্ধ বিদ্বেষ কিংবা অন্ধ ভক্তি নয় । জাতীয় নেতৃত্বকে নিয়ে একাডেমিক পর্যালোচনা/সমালোচনা শুরু হোক । এই সব দিবসে শুধু মাত্র একজন ব্যক্তির সফলতা নয় – তার বা তাদের সীমাবদ্ধতাও একই সঙ্গে আলোচনায় আসুক । তখন এই সব আলোচনা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দল উপকৃত হতে পারে । জাতির অনেক রোগ এই সব পর্যালোচনা বা সমালোচনার মাধ্যমে সেরে যেতে পারে ।