Minar Rashid
আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা হিসাবে পরিচিত ও বিভিন্ন উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে ইতোমধ্যে জাতির মনে চরম বিরক্তি উদ্রেককারী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ । তিনি বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনকে ‘তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন । দলের টপ নেতৃত্ব আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল বলেই সম্ভবত তিনি এই কথাটি বলেছেন । অথচ তাদের নিজেদের দলটিও আজতক এ থেকে ভিন্ন কিছু দেখাতে পারে নি । এক বুড়ি অন্য বুড়িকে নানী ডেকে যেমন নিজেকে অল্প বয়স্কা প্রমাণ করতে চায় , হানিফদের প্রচেষ্টাটিও হুবহু তেমনি । এদেশে শক্তিসালী সুশীল সমাজ না থাকাতেই এই অর্বাচিনরা এই ধরনের ‘আগডুম বাগডুম ‘ করে পার পেয়ে যাচ্ছে । কারণ কেউ এদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে না । সাংবাদিক সমাজ এদের সামনে ভেড়া হয়ে পড়েছে ।
এই চিকনা বুদ্ধির হানিফরা মনে করেন যে তাদের জন্যে যা জায়েজ তা অন্যের জন্যে নাজায়েজ । নিজেরা গণতন্ত্রের কতটুকু ক্ষতি করেছে – সেদিকে কোন খেয়াল নেই । অথচ অন্য দল কীভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করলো , সেটা নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই । যদিও সেই একই সীমাবদ্ধতা তাদের নিজেদের মধ্যেও আরো প্রকটভাবে উপস্থিত রয়েছে ।
এই হানিফরা কথা বলার সময় মানুষের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে সামান্য চিন্তা ভাবনা করে না । মুখে যা আসে তাই বলে বসে । হানিফের সমগোত্রীয় হাছান মাহমুদ পৃথিবীতে যত অঘটন ঘটে সবকিছুর সাথে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে জড়িয়ে ফেলেন । এই ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ কিভাবে একটি দলের প্রচার সম্পাদক হতে পারে , তা গবেষণার বিষয় । অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় , হাছান মাহমুদের স্ত্রীর পেটে ব্যাথা হলেও সম্ভবত মনে করে এটা বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানের কাজ ।
দেশে বিদেশে শেখ মুজিবের জন্মদিনের আলোচনা সভাকেও এদের নেতা পাতি নেতারা জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি বিদ্বেষ সভায় পরিণত করে ফেলেছে । এরকম দুয়েকটি সভা থেকে এই ধরনের সংবাদ কানে এসেছে । জিয়াকে গালি দিয়ে এরা মুজিবের প্রতি তাদের মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করে । আমিও দুয়েক জনকে জানি , যারা আজ জিয়াকে গালি দিচ্ছে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এরা শেখ মুজিব ও শেখ পরিবারকে একই ভঙ্গিতে গালি দিবে । পরবর্তি সরকারের প্রিয় পাত্র হতেও এদের সময় লাগবে না । এরা সত্যিই সমাজের আজব এক চিড়িয়া ।
আওয়ামী লীগের টপ থেকে বটম পর্যন্ত জিয়াকে গালি না দিলে পেটের ভাত হজম হয় না । তার পরেও বেগম জিয়া আজকের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবকে যথাযোগ্য সম্মানের সাথে স্মরণ করেছেন । তাঁর এই বক্তব্যের ভেতর জাতির জন্যে নতুন এক দিক নির্দেশনা রয়েছে । ভিশন-২০৪১ যেখানে জাতিকে ডুবোতে বসেছে , ভিশন-২০৩০ সেখানে জাতিকে উদ্ধার করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস ।
আমি আমার এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে নারীদের চেয়েও অবলা এদেশের জ্ঞানী গুণী মানুষজন । কারণ টাকা ও পেশী শক্তি এখানে রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়ে পড়েছে । ফলে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভালো ও জ্ঞানীগুণী মানুষগুলির পক্ষে রাজনীতিতে আসা এবং জায়গা করে নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে । কাজেই নারীদের জন্যে যেমন সংসদে আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে ,সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা জ্ঞানী গুণী মানুষজনের জন্যেও কিছু আসন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । আমার মনে হয় সেই উদ্দেশ্য টি বাস্তবায়ন হতে পারে বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে । এর মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সমাজ ও রাজনীতিতে পেশী শক্তির বিপরীতে মেরিটোক্রেসি জায়গা করে নিতে পারে ।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই মেরিটোক্রেসির কোন বিকল্প নেই । কাজেই বেগম জিয়ার ভিশন -২০৩০ জাতির মনে নতুন আশাবাদ জাগাতে পারে ।