- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জুলাই ২০২৩, ২২:৩৭
ছোট-বড় ৩৬টি রাজনৈতিক দল নিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি এবং তার যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে দেয়া হবে যৌথ কর্মসূচি।
তারা একই সাথে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচনের পরের সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করবেন। তাদের এক দফা দাবি হলো, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।
যদি সরকার নিজে থেকে পদত্যাগ না করে, তাহলে তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে দাবি আদায়ের কথা জানিয়েছেন। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দ্রুত নিজেদের দাবি এবং আন্দোলন পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন তারা।
বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের সমমনা দল ও শরিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করার কাজটি অনেকটা শেষ করে এনেছে। ১০ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে তাদের সর্বশেষ বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি জানান, ‘আমরা বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন বৈঠকের পর এক দফার আন্দোলন নিয়ে একমত হয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই সরকার আদালতের রায়কে বিকৃত করে সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় আছে। এটা তো হতে দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের জন্য সহজ পথ হলো, আদালতের রায়কে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা। তাদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেয়া। সেটা না করলে জনগণ এই সরকারকে বিদায় করবে।’
তার কথায়, ‘আন্দোলনের জন্য পর্যাপ্ত সময় আছে। এখনো হাতে ছয় মাস আছে। আমরা ১০ জুলাই বিএনপির সাথে বৈঠক করব। এরপর সবকিছু চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হবে।’
গণতন্ত্র মঞ্চ সাতটি রাজনৈতিক সংগঠনের একটি জোট। গণঅধিকার পরিষদ এই জোট থেকে বের হয়ে গেছে। তবে তারা যুগপৎ আন্দোলনে আছে।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে আছে ১১টি রাজনৈতিক দল। এই জেটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিএনপির সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে গতমাসের ৮ তারিখে। আমরা বর্তমান সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একমত হয়েছি।’
চলতি মাসের ১৫ তারিখের চূড়ান্ত যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে আমরা আর সময় দিতে চাই না।’
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে আছে ১২ দলীয় জোট। যুগপৎ আন্দোলনে আরো আছে গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবীদের একটি জোট।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবাই এক দফার দাবিতে একমত। এখন চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার অপেক্ষা। আমাদের মূল দাবি এই সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আমরা দ্রুতই যৌথ বা আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন অথবা ঢাকায় একটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের যুগপৎ চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
জানা গেছে, ওই দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের কাজ চলছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচির মধ্যে ঘেরাও, অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
সরকারের অবস্থান অনুযায়ী মাঠের কর্মসূচিকে কঠোর করবেন বলে জানান তারা। নেতারা আরো বলছেন, তারা একই কর্মসূচি যুগপৎভাবে যার যার অবস্থান থেকে পালন করবেন। তবে তারা একপর্যায়ে একই মঞ্চে কর্মসূচি পালন করবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা আছেন তাদের সবার সাথেই আমাদের মেটামুটি কথা বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের সিদ্ধান্ত হলো ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আমরা যুগপৎ চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছি। এক দফার আন্দোলন মানে সরকারের পতনের আন্দোলন। সরকার পদত্যাগ করলে আমাদের অন্য দাবি এমনিতেই পূরণ হবে।’
হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও ছাড়া আর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি। এর বাইরে আরো নতুন কোনো কর্মসূচি আসবে কি-না তা সময়ই বলে দিবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের সমাবেশের কর্মসূচির সময় দেখেছি যে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। আমরা কর্মসূচির দিনও পরিবর্তন করে দেখেছি, তারাও পরিবর্তন করে। তারা তো বলেছে যে তারা পাহারা বসিয়েছে। আমরা এবারো শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করব। তবে সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করবে সেটা কেমন হয়।’
এসবের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপির এই এক দফার আন্দোলনে দেশের মানুষ ভীতু নয়, আওয়ামী লীগও ভীতু নয়। তবে বিএনপি আন্দোলনের নামে যদি কোনো সহিংসতা করে, যদি ২০১৩-১৪ সালের মতো গান পাউডার দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করে জনগণ তাদের প্রতিরোধ করবে।’
কামাল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকবে। আমরা আমাদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী দেশী-বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করব।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে