৭শ ইসরাইলি নিহত : বেকায়দায় নেতানিয়াহু । হতে পারে বড় যুদ্ধ

 

বাংলাদেশ ক্রনিক্যাল ডেস্ক :  হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭ শ ছাড়িয়ে গেছে বলে ইসরাইলের গনমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এরমধ্যে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু বিদেশি নাগরিকও আছে। এছাড়া হামাস ও ইসলামিক জিহাদ দাবি করেছে তাদের হাতে ১৩০ জন ইসরাইলি বন্দি আছে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। গাজায় অব্যাহতভাবে বিমান ও মিসাইল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে নারী ও শিশুসহ শত শত নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়েছে।

হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলকে সহায়তা প্রদানের অংশ হিসেবে রণতরির পাশাপাশি যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই রণতরিটির সাথে রয়েছে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ও গাইডেড মিসাইল ক্রুজার। এছাড়া অন্যান্য সামরিক সাহায্যও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সিএনএন ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মার্কিন নৌবাহিনীর পরমাণু শক্তিচালিত বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ডকে ভূমধ্যসাগরের দূরবর্তী এলাকা থেকে ইসরাইলের কাছাকাছি পাঠানো হচ্ছে। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার প্রেক্ষাপটে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান অষ্টিন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলকে দেওয়া হবে সমরাস্ত্রও। গতকাল রোববার থেকেই এ নিরাপত্তা সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের দু:সাহসী হামলা শুরুর পর থেকেই ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর শক্তি বাড়াতে আরো যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা এফ-৩৫ ও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছেন। এই দুই বিমানই আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। এছাড়া এফ-১৬ এবং এ-১০ বিমান পাঠানো হতে পারে। ঠিক কতগুলো বিমান পাঠানো হবে, তা স্পষ্ট করে বলেননি ঐ কর্মকর্তা। তবে সংখ্যাটি ২০-২৫টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২.
ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, হামাসের এই হামলার পরিকল্পনায় ইরান সহায়তা করে থাকতে পারে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। একারণেই তারা ইসরাইলের সমর্থনে যুদ্ধ বিমান ওরনতরী পাঠানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সঙ্গত কারণেই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধটি ইসরাইলের সীমান্তের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হামাস এখনো ইসরাইলের দক্ষিনাঞ্চলে লড়াই করে যাচ্ছে। রোববার তেল আবিবে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই নগরীর বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামাস ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। হামাসও দাবি করেছে, বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরসহ ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে তারা। এদিকে হারেৎস জানিয়েছে আগামি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করতে পারে ইসরাইল।

হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরাইল গাজার বেসামরিক ঘরবাড়ি টার্গেট করে হামলা চালানোয় তারাও ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে। হামাসের গত দুই দিনের হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি সূত্রগুলো। গাজা সীমান্তের কাছে একটি সঙ্গিত উৎসবেই নিহত হয়েছে অন্তত ২৬০ জন। হামাসের সদস্যরা সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে বন্দীও করেছে বলে জানা গেছে।

৩.
ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ নিহতের সংখ্যা ৭শর বেশি বলে সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় আহত হয়েছেন ২ হাজার ১৫৬ জন ইসরাইলি নাগরিক। ক্ষোভ ও ভীতি এড়াতে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা ধীরে ধীরে প্রকাশ করা হচ্ছে। অন্যদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩ জনে দাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২০০০ এর বেশি মানুষ।

এদিকে হামাসের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেছেন, আমরা ইসরাালে কোনও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছি না। আল জাজিরাকে তিনি গতকাল বলেন, আপনাকে বসতি স্থাপনকারী ও বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। কারণ বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ করেছে।

ইহুদি বসতিকে অবৈধ উল্লেখ করে হামদান বলেন, বসতি স্থাপনকারীরা দখলদার ও ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর অংশ। তারা বেসামরিক নাগরিক নন। দক্ষিণ ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকদেরকে বসতি স্থাপনকারী বিবেচনা করা হয় কিনা জানতে চাইলে হামদান বলেন, সবাই জানে সেখানে বসতি রয়েছে।

৪.
হামাস ইসরাইলি সেনা সদস্য ও সাধারণ মানুষসহ জিম্মি করেছে ১০০ জনেরও বেশি লোককে। অন্যদিকে, ইসলামিক জিহাদ ৩০ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রধান জিয়াদ আল নাখলা। আটক সবাইকে গাজা উপত্যকার নিরাপদ স্থানে আটক রাখা হয়েছে বলে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ সূত্রগুলো জানিয়েছে।

হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা টেলিগ্রামে পোষ্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগন ও ইসরাইলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সুসংবাদ হচ্ছে, তাদের হাতে কয়েক ডজন ইসরাইলি সেনা সদস্য ছাড়াও বেশ কিছু বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশু আটক রয়েছে। তাদের সবাইকে গাজা উপত্যকার নিরাপদ টানেলে আটকে রাখা হয়েছে।
ইসরাইল যদি গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে এর প্রভাব ইসরাইল বন্দিদের উপরও পড়বে বলে তিনি হুশিয়ার করে দেন। তাদের হাতে বন্দি ইসরাইলি সেনা ও সাধারণ মানুষের সংখ্যা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

ইসরাইলে হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে ৪ জন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন বলে গতরাতে এক ব্রিফিংয়ে কংগ্রেস সদস্যদের জানিয়েছেন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা। হোয়াইট হাউস কয়েকজন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোববার সকালে মার্কিন কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল হারজগ।

জাতিসংগে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মধ্যে কয়েক ডজন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন হামাসের হাতে জিম্মি থাকা মার্কিনীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তাদের মুক্তি দিতে হামাসকে রাজী করাতে তুরস্ক, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরনব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সাথে দুই দফা টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ।

৫.
গাজা উপত্যকার কাছাকাছি থাকা সব ইসরাইলিকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ইসরাইলে ঢুকে পড়া হামাস যোদ্ধাদের মোকাবিলা করতেই তারা এ পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত সব ইসরাইলিকে গাজার আশপাশ থেকে সরিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, হামাসের হাতে অপহৃত হওয়া বন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে গাজায় হামলা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে হামাসের কয়েকশ সদস্যকেও হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি।

বার্তা সংস্থা এপির এক বিশ্লেষনে বলা হয়েছে হামাস ও আল জিহাদের হাতে আটক সেনা সদস্য নাগরিকেদের মুক্তির বিষয়টি এখন নেতানিয়াহুর জন্য কঠিন এক ফাঁদে পরিনত হয়েছে। একদিকে তাকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হবে আবার তাদের মুক্ত করার উদ্যেগ নিতে হবে। এজন্য হামাসের সাথে আলোচনা করতে হবে। তাদের অনেক শর্ত পুরন করতে হবে। যা নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এছাড়া গাজায় বড় অভিযান বন্দিদের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৬.
ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই এর মধ্যেই হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ইরনা নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু হামাস নেতার সঙ্গেই নয়, ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্টের মহাসচিব জিয়াদ আল-নাখালাহের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। জানা গেছে, আলাদা ফোন কলে এই দুই নেতার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসকে পরাজিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। হামাসের বিরুদ্ধে গতকাল ইসরাইল আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষনার পর এই হুমকি দেন তিনি। এই যুদ্ধ শেষ হতে সময় লাগবে বলেও ইসরাইলি টেলিভিশনে দেয়া বক্তৃতায় দেশটির নাগরিকদের জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর দিয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেন, যা ঘটেছে তা ইসরাইলে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এই কালো দিনের শক্তিশালী প্রতিশোধ নেয়া হবে। হামাস যেসব স্থানে লুকিয়ে রয়েছে তার প্রত্যেকটি জায়গায় ইসরাইল অনুসন্ধান চালাবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের বন্দি সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও তাদের সুস্থতার জন্য হামাস দায়ী থাকবে। হামাসের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চলাকালে গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।