
গত বছরের শেষ চার মাস ধরে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২৮ শতাংশে।
ব্যাংকারদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে আমানতের নিম্ন প্রবৃদ্ধির পেছনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তারল্য সংকট এবং কিছু ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থার অভাব অন্যতম কারণ।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪৪ শতাংশ, যা তার আগে সেপ্টেম্বরে ছিল ৭.২৬ শতাংশ, অক্টোবরে ৭.২৮ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৭.৪৬ শতাংশ।
এর আগে, ব্যাংক খাত আমানতের এত কম প্রবৃদ্ধি দেখেছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, সেবার ৬.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাশরুর আরেফিন সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন, অনেক ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ও তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে, ফলে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে ভালো ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে। অর্থাৎ, অর্থাৎ ভালো ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা কমেনি’।
গত বছর গণ-অভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার আগে থেকেই ডলার সংকট, রিজার্ভের পতন, রেমিটেন্স কমে যাওয়াসহ অর্থনীতিতে নানা সংকট ছিল।
যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থান কিছুটা উন্নতি করলেও, অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে তেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি।
২০২৪ সালের অগাস্টে ব্যাপক সহিংসতা ও অস্থিরতার মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ৯.৫০ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধির তথ্য উঠে আসে। এর আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপর থাকা উচিত, আর বাংলাদেশের মতো দেশে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ হওয়া উচিত।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মানুষ দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও, আয় বাড়েনি ৫ শতাংশও। ফলে মানুষের সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে ওঠে আসায় এখনও মানুষের হাতে অনেক টাকা রয়েছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’
জানুয়ারিতে ব্যাংকে ফিরেছে ২১৪০ কোটি টাকা
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে থাকা প্রায় ২ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পুনরায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরেছে।
জানুয়ারির শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ২.৭৪ লাখ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ২.৭৬ লাখ কোটি টাকা।
একটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, গত ছয় মাসে ছয় লাখের বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং গ্রাহকেরা তুলনার চেয়ে বেশি অর্থ জমা করছেন। গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের চেয়ে জমা রাখছে বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী মাসগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং গ্রাহকদের হাতে থাকা অলস অর্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসবে।