১২ জানুয়ারী ২০২৩
অলিউল্লাহ নোমান
জরুরী আইনের সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর মধ্যস্থতার দায়িত্বে ছিলেন ড. গওহর রিজভী। মেজর জেনারেল অব: ড. এ টি এম আমিনের সাথে গওহর রিজভীর যোগাযোগ এবং বিভিন্ন বৈঠক ও বিদেশে দূতিয়ালির জন্য টাকা লেন-দেনের ই-মেইল রেকর্ড এসেছে আমার দেশ-এর হাতে। এসব ই-মেইল বার্তায় দেখা যায়, ড. গওহর রিজভীর পক্ষ থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জেনারেল আমিনের কাছে ই-মেইল করে মিটিংয়ের খরচের বিল চেয়েছেন। এই বিল কিভাবে এবং কোন ঠিকানায় পাঠাতে হবে সেটার নির্দেশনা রয়েছে ই-মেইলে।
২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবরের দুটি ই-মেইল বার্তায় দেখা যায়, ২ হাজার ৫ শত ৮৩ ডলারের একটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে গওহর রিজভীকে। সেনাবাহিনীর কোন অথরিটি বা কোন তহবিল থেকে জেনারেল এটিএম আমিন আমেরিকান ডলারে এই বিল পরিশোধ করেছেন সেটা স্পষ্ট নয়। ৬ অক্টোবর (২০০৮) গওহর রিজভীর পক্ষ থেকে ই-মেইলে জেনারেল এটিএম আমিনের কাছে এই বিল চাওয়া হয়। গওহর রিজভীর পক্ষ থেকে ই-মেইলে এই বিল চাওয়া হয় জেনারেল এটিএম আমিনের কাছে। ই-মেইলে দেখা যায়, এমনকি টেক্সিভাড়া নিতেন সেনাবাহিনীর নিকট থেকে। গওহর রিজভীর পক্ষ থেকে ই-মেইলের সাবজেক্টে লেখা হয়
CONFIDENTIAL FROM GOWHER RIZVI; ই-মেইল বার্তায় এটিএম আমিনকে গওহর রিজভীর পক্ষ থেকে ডিয়ার জেনারেল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা ই-মেইলের তরজমা করলে দাঁড়ায় বৈঠকের বিল নিচে সংযুক্ত করা হয়েছে। ই-মেইলে জেনারেল আমিনকে অনুরোধ করা হয়েছে ব্যাংকের ৩টি পৃথক চেকের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য।
যে ঠিকানায় পাঠাতে বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে-OFFICE OF THE VICE PROVOST FOR INTERNATIONAL PROGRAMS
1709 UNIVERSITY AVENUE
CHARLOTTESVILLE
VIRGINIA 22904
এবং চেক FedEX করে পাঠাতে বলা হয়েছে।
জরুরী আইনের সরকারের সময় সেনাবাহিনীও যে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকা খরচ করেছে তার প্রমান পাওয়া যায় এই ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে। গওহর রিজভী তখন সেনা বাহিনী বা সরকারের কোন পর্যায়ে চাকুরিতে ছিলেন না। অথচ, জেনারেল আমিনের কাছে তখন টাকা চাওয়া হয়েছে মিটিংয়ের খরচ বাবদ। সেনাবাহিনী কোন অথরিটিতে এবং কোন তহবিল থেকে তাঁকে টাকা পরিশোধ করেছে সেটা স্পষ্ট নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, এরকম করে প্রতিটি মিটিংয়ের জন্য তাঁকে আমেরিকান ডলারে টাকা দিতে হত ড. গওহর রিজভীকে।
জেনারেল আমিনসহ শেখ হাসিনার সাথে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে সাবজেলে ড. গওহর রিজভীর সাক্ষাত করতেন। এ বিষয়টি উঠে এসেছে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারীর একটি সাক্ষাৎকারে। দীর্ঘদিন পর হলেও তিনি মুখ খুলেছেন। সাংবাদিক কনক সারোয়ারের সাথে তাঁর ইন্টারভিউতে উঠে এসেছে তখনকার অনেক তথ্য। যদিও এসব তথ্যের অনেক কিছুই এতদিন বাতাসে ভাসমান ছিল। দায়িত্বশীল কারো মুখ থেকে এভাবে সরাসরি প্রকাশ পায়নি। চৌধুরী ফজলুল বারীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তৎকালীন দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার মুখে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনার দূতিয়ালি এবং ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তায় ড. গওহর রিজভীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখন স্পষ্ট।
এর মাধ্যমে আরো একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ছিল একটি সাজানো নাটক। জরুরী আইনের সরকার পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলে সাজানো একটি নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী জরুরী আইন জারির মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমদ। সেনা শাসিত জরুরী আইনের সরকারের ধারাবাহিকতাই এখনো চলছে।