১৬ জুন ২০২৩
বিশেষ প্রতিনিধি
১৬ জুন। এই দিনটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে কালো দিবস হিসাবে পরিচিত। যদিও বর্তমান ফ্যাসিবাদের সমর্থক ইন্ডিয়াপন্থি আওয়ামী গণমাধ্যম গুলো দিবসটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। কারণ, সংবাদপত্রের এই কালো দিনের জন্য দায়ী তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাই দিবসটি আড়াল করার চেষ্টায় থাকনে আওয়ামী গণমাধ্যমে কর্মরত সম্পাদক ও সাংবাদিকরা। অথচ, ১৯৭৫ সালের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমান সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে তাদের চাকুরিচ্যুত করেছিলেন। বাকশালের গুণকীর্তন করার জন্য তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা রাখা হয়েছিল। সারা দেশে বাকী সকল সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম বন্ধ করে কর্মরত সাংবাদিক ও কলা কুশলীদের ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বেকারত্বের দিকে। পাশাপাশি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল মানুষের সভা-সমাবেশ করার সকল অধিকার।
১৯৯৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান একটি দল বানিয়েছিলেন। এই দলের নাম ছিল বাকশাল। বাকশাল ছাড়া বাকী সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকেও বাকশালে বিলুপ্ত করা হয়েছিল তখন। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার করা হয়েছিল সেদিন। শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়েছিল। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করে বলা হয়েছিল, শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির ন্যায় আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বাকশালের এই ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমান বন্ধ করে দিয়েছিলেন সকল গণমাধ্যম। তখন সোশ্যাল মিডিয়া ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেসরকারি রেডিও ছিল না। চলমান ঘটনাবলীর সংবাদ জানতে মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল ছাপানো খবরের কাগজ। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সেই খবরের কাগজকে সহ্য করতে পারেননি। তাঁর দু:শাসনের চিত্র উঠে আসতো রক্ষ্মীবাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। তাই শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশে কোন সংবাদপত্র রাখবেন না। শুধুমাত্র তাঁর গুণকীর্তনের জন্য চারটি খবরের কাগজ রেখে বাকী সব বন্ধ করে দিবেন। এজন্য একটি আইন জারি করেছিলেন তিনি।
বর্তমান ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার শাসনকালেও শেখ মুজিবুর রহমানের মত আইন করে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করা হয়নি। তবে কৌশলে সব গণমাধ্যমকে আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। দৈনিক আমার দেশ, দিনকালসহ ভিন্নমতের পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল গুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ভিন্নমতের কোন সংবাদপত্র নেই। শেখ হাসিনা ও তাঁর ফ্যাসিবাদের দুর্নীতি, দু:শাসন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার সুযোগ নেই বর্তমান বাংলাদেশে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নামে তৈরি করা কালো আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টায় রয়েছে শেখ হাসিনা। তবে তাঁর এই অপচেষ্টাকে সহযোগিতা করছে, একদল আওয়ামী সেবাদাস কথিত সাংবাদিকরা।
সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে দিনটিকে স্মরণ করে সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে এক সময় সভা সেমিনার করার রেওয়াজ চালু হয়েছিল। সেটাও ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে।
এদিকে গণমাধ্যমের কালো দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি’র মিডিয়া সেল একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল শুক্রবার (১৬ জুন)।