স্টাফ রিপোর্টার
১১ ডিসেম্বর ২০২২, রবিবার
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে দেশব্যাপী যুগপৎ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী ২৪শে ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলায় জেলায় গণমিছিল করবে দলটি। শনিবার রাজধানী ঢাকার একটি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত। দেশ অব্যাহতভাবে নতুন নতুন সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা সংস্কৃতি ও সামাজিক অঙ্গনে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিদ্যমান। সেনাসমর্থিত সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের জন্য ২০০৮ সালে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জনগণের ওপর চেপে বসেছে। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আদালতের দোহাই দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। অথচ আদালতের রায়ে পরপর দু’টি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে।
আজ বাংলাদেশে জনগণের ভোটাধিকার নেই, কথা বলা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। চলাফেরা, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ আজ এক অধিকারহারা জাতিতে পরিণত হয়েছে। ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতের আমীর বলেন, দেশকে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের উপায় হলো জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই জন্যই প্রয়োজন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই প্রেক্ষিতে আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যুগপৎভাবে গণআন্দেলন গড়ে তোলার জন্য নিম্নোক্ত ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করছি। জামায়াতের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. অবিলম্বে বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে গণতন্ত্র হরণকারী, দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ এর আলোকে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে; ২. কেয়ারটেকার সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে; ৩. বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ সকল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, আলেম-উলামা, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সাজা বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ ও সকল রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে; ৪. অবিলম্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সকল দলের অফিস খুলে দেয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্থগিতকৃত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেয়া এবং দেশে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সভাসহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক সকল প্রকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন মামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে; ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে; ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ সেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এবং কৃষি ও শিক্ষা উপকরণ, শিশুখাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনয়ন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, নারী-শিশু নির্যাতন, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে; ৭. গত ১৫ বছরব্যাপী বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। সুদ, ঘুষ বন্ধ করাসহ ছাত্র-যুব সমাজের চরিত্র রক্ষা ও মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে উদ্ধার এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে; ৮. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সকল নাগরিকদের উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে; ১০. সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৪শে ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলায় জেলায় গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য তিনি সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।