- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ মে ২০২৩, ১৬:২৫
বাংলাদেশে সাফটা চুক্তির নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে হিন্দি সিনেমা আমদানি শুরু হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে আগামী দুই বছরে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮টি উপমহাদেশীয় সিনেমা আসবে।
সিনেমা হল মালিকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এর মাধ্যমে বাংলাদেশী সিনেমার কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে গেল কিনা এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সিনেপাড়ায়।
তথ্য মন্ত্রণালয় হিন্দি সিনেমা আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করার পর বাংলাদেশে প্রথমে এসেছে ‘বলিউড বাদশা’ শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’। যশরাজ ফিল্মস প্রযোজিত সিনেমাটি হাজার কোটি ছাড়ানো ব্যবসা করেছে। এরপর অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পেয়েছে। সেজন্য সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তির প্রথম দুই দিন ছাড়া আশানুরূপ দর্শক পায়নি। তবে ভবিষ্যতে কোনো হিন্দি ছবি বলিউডের সাথে একই দিনে মুক্তি পেলে সুফল আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (মিডিয়া ও বিপণন) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
প্রদর্শক সমিতির নেতারা বলছেন, শুধুই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র দিয়ে সিনেমা হল সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সিনেমার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এর পরিণতিতে সিনেমা হলের সংখ্যাও কমেছে। সিনেমা হল মালিকদের মতে, জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে এখন বছরে চার-পাঁচটি মানসম্পন্ন সিনেমার দেখাও মেলে না। হিট কিংবা গড়পড়তা চলার মতো সিনেমার সংখ্যা বছরে ৩০-৪০টি না হলে সিনেমা হল টিকে থাকার কথাও নয়। এমন পরিস্থিতিতে সত্যিকার অর্থেই তারা অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছেন। তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিতে পারছে না ঢালিউড। সেজন্য সিনেমা হল মালিকরা জনপ্রিয় সিনেমা প্রত্যাশা করেন, যেগুলো দেখতে দর্শকরা ভিড় জমাবে। সেই বাস্তবতা মেনে হিন্দি সিনেমা আমদানির সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে সরকার।
প্রশ্ন হলো- এমন সিদ্ধান্তের পরে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির টিকে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু দেখা যাচ্ছে? সংশ্লিষ্টদের বিশ্লেষণে বোঝা গেছে, সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এখন টেনেটুনে প্রায় অর্ধশত সিনেমা হল সারাবছর চালু থাকে। এছাড়া দুই ঈদে আরো ১০০ সিনেমা হলের দরজা খোলে। অর্থাৎ, এখন মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ২০০ বলারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের বড় একটা অংশই মনে করছেন, সিনেমা হল মালিকদের ব্যবসা দিতে না পারলে সংখ্যাটা আরো কমবে। যিনি পুঁজি বিনিয়োগ করেন, দিনের শেষে তিনি লাভ খুঁজবেনই। সুতরাং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে গেলে সিনেমা হল মালিকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাদেরও তো ঘর চালানো প্রয়োজন, সেজন্য লাভজনক ব্যবসা হতে হবে।
বাংলাদেশে মুম্বাইয়ের তুলনায় অনেক স্বল্প বাজেটের সিনেমাগুলো সবসময় মানসম্পন্ন হয় না। ভারতের একটি সিনেমার তুলনায় ঢাকাই সিনেমার বাজেট অনেক ক্ষেত্রে ১০০ ভাগের এক ভাগেরও কম। অনেক ক্ষেত্রে বলিউডে একেকটি সিনেমা তৈরিতে খরচ হয় ১০০ কোটি রুপি। ১ কোটি তো বলিউডের অনেক তারকারই পারিশ্রমিক। বাংলাদেশে ১-২ কোটি টাকায় পুরো সিনেমা বানানো হয়। তাই বিশাল বাজেট, উন্নত প্রযুক্তি, হেভিওয়েট তারকাসমৃদ্ধ বলিউডের হিন্দি ছবি এসে ঢালিউকে গ্রাস করে ফেলবে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না অনেকেই।
চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিনেমা হল মালিকদের বাঁচাতে হিন্দি ছবি আনবো ভালো কথা, কিন্তু এ কারণে আমরা কী হারাবো সেই হিসাব কি কেউ করেছি? ‘পাঠান’ এসেছে, এরপর আসবে ‘কিসি কি ভাই কিসি কা জান’ ও ‘টাইগার থ্রি’। এসব ২০০ কোটি রুপি বাজেটের ছবির সাথে আমরা প্রতিযোগিতা করবো কী দিয়ে? এক কোটি টাকার ছবি দিয়ে? বিএমডাব্লিউর সাথে তো সিএনজি পেরে উঠবে না। হিন্দি ছবি আসায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এজন্য আমরা প্রস্তুত নই। আমাদের আগে প্রস্তুত করা হোক। শুধু হিন্দি না; কোরিয়ান, মালায়লামসহ সব অঞ্চলের সব ভাষার ছবি আসুক, তাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার দেশের ছবি আগে নিরাপদ হোক। আমাকে তো লড়াইয়ের জায়গা দিতে হবে। লড়াই করার তো কোনো জায়গাই এখন নেই। আমাদের সংগ্রাম এ নিয়ে যে, আমাকে আমার জায়গা একটু সুরক্ষিত করতে দাও, তারপর যা খুশি তাই আমদানি করা হোক, কোনো কষ্ট থাকবে না।’’
এমনিতে অভিযোগ শোনা যায়, তথাকথিত ‘বড় তারকা’ না থাকলে মাল্টিপ্লেক্সে বাংলা সিনেমা যথাযথ সময়ে শো পায় না। এক্ষেত্রে সাধারণত সকালের শো দেয়া হয় তাদের। এর নেপথ্যে রয়েছে হলিউড সিনেমার চাপ। এখন হিন্দি সিনেমাও যুক্ত হলো। এ কারণে বাংলা সিনেমার জন্য জায়গাটা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়– এবারের মা দিবস উপলক্ষে অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত ও পরীমণি অভিনীত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘মা’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১৯ মে। কিন্তু বেশিরভাগ সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১২ মে বলিউডের ‘পাঠান’, ১৯ মে হলিউডের ‘ফার্স্ট টেন’, ২৬ মে বলিউডের ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ চালাবেন তারা।
আগামী ২৬ মে মুক্তির জন্য যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’ কেবল নারায়ণগঞ্জের একটি সিনেমা হল পেয়েছে। অথচ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে এই ছবি। সম্প্রতি খন্দকার সুমন পরিচালিত ‘সাঁতাও’ মাত্র তিনটি সিনেমা হল পেয়েছে। অথচ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে এটি দেখতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগের সেরা সিনেমা হয়েছে এটি। কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-ও কেবল ১০টি সিনেমা হল পেয়েছিল।
এ কারণেই খিজির হায়াত খানের শঙ্কা, ‘‘এভাবে চলতে থাকলে, তরুণ নির্মাতারা সিনেমা বানানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। কারণ, তাদের কাছে কোনো ম্যাপ থাকছে যে, ছবিটি চালাবেন কোথায়। আগামী দুই বছর পর সিনেমা হল মালিকরা বলে বসতে পারেন– আমি হিন্দি সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা করার জন্য সিনেমা হল রেখেছি, এজন্য এত টাকা ঋণ নিয়েছি। তখন কিন্তু পুরো ব্যাপারটি তাদের পক্ষে চলে যাবে। এখন যদি বছরে ১০টি হিন্দি সিনেমার আশা তারা করেন, তখন সেই সংখ্যা ২০টিতে বাড়ানোর দাবি উঠতে পারে। তখন আমরা কোথায় যাবো? আমার ভয়– আগামী পাঁচ বছরে আমাদের সিনেমা হলভিত্তিক বাংলা চলচ্চিত্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
তবে বিদেশী ছবির কারণে সিনেমা হল পাচ্ছে না বাংলা চলচ্চিত্র, এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের সব সিনেমা হলে হিন্দি ছবি চালানোর সুযোগ নেই, কারণ, সবার কাছে সেই সার্ভার নেই। তারা বাংলা সিনেমাই চালাবে। ব্যবসা যার যার পদ্ধতিতে চলবে। বাংলা কন্টেন্ট যদি ভালো হয়, তাহলে অবশ্যই চলবে। আগামী ঈদে শুধুই বাংলা সিনেমা চালাবো আমরা। গত ঈদের সিনেমা ভালো চলেছে। আরো ভালো চলতো যদি প্রচারণা ভালো হতো। কারণ, সিনেমার প্রচারেই প্রসার।”
‘পাঠান’ বাংলাদেশে আমদানি করেছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট। হিন্দি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী অনন্য মামুনের যুক্তি, ‘‘সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ভালো কনটেন্ট বানাতে ও বড় কিছু করতে হলে ভালো সিনেমা দরকার। হিন্দি সিনেমা সেই অভাব পূর্ণ করতে পারে। টাকায় টাকা আনে বলে একটা কথা আছে। সিনেমা হলে যখন টাকা উঠে আসবে, তখন এই খাতে ঠিকই বিনিয়োগ বাড়বে। হিন্দি সিনেমা সেই পথ খুলে দিতে পারে। সরকার কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছরের জন্য উপমহাদেশের সিনেমা আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন। দুই বছর পরে কী হবে আমরা এখন বলতে পারছি না। দুই বছর চলার পর বোঝা যাবে, হিন্দি সিনেমা আমদানি করাটা সিনেমা হলের জন্য কতটা উপকারে আসতে পেরেছে।”
অনেকে বলছেন, হিন্দি সিনেমার কারণে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অনিষ্ট হবে- এই যুক্তিতে ‘ভিনদেশী সংস্কৃতি’ আমদানির বিরোধিতা করছেন প্রবীণ চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ভিন্ন সংস্কৃতি আসা উচিত না। এগুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে যায় না। হিন্দি সিনেমা আসায় সিনেমা হল মালিকের পেট ভরতে পারে, তাছাড়া কোনো লাভ হবে না। সিনেমা হল বাঁচবে না, আমাদের চলচ্চিত্রও ধ্বংস হবে।”
অভিনেতা-প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বিশ্বাস, ‘‘এদেশে হিন্দি চলবে না। আমাদের দেশ বাংলাদেশ, বাংলা ভাষাই চলবে।”
তবে পরিচালক-পরিবেশক অনন্য মামুন বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে প্রতিটি হিন্দি টিভি চ্যানেল চালু আছে। প্রত্যেকের হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, সবাই সবকিছু দেখছে। হিন্দি ছবি সিনেমা হলে না চালালেও দেখার সুযোগ অনেক। সুতরাং আমাদের টিকে থাকতে হলে সার্বিকভাবে ভালো কনটেন্ট বানাতে হবে। সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক করতে হবে।”
সিঙ্গেল স্ক্রিনে দর্শক খরার পেছনে সিনেমা হল মালিকদের দুষছেন অনেকে। চিত্রনায়ক জায়েদ খানের মন্তব্য, ‘‘সিঙ্গেল স্ক্রিনের দর্শক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোকে সরকার প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু সিনেমা হল মালিকরা নিচ্ছেন না। কেউই সিনেমা হল সংস্কার করছে না। বাংলাদেশের যেকোনো জেলায় আরাম করে দেখার মতো সিনেমা হল পাওয়া কঠিন। কোথাও কোথাও গোডাউনের মধ্যে টিনের চালা দিয়ে সিনেমা হল বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে দর্শক আশা করা বোকামি। ভাঙাচোরা সিনেমা হলে কে ছবি দেখতে যাবে? সিনেমা হলে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ চান দর্শক। কনটেন্ট তো পরে। আপনার দোকানই যদি ঠিক না থাকে মালামাল রাখবেন কোথায়? সিনেমা হলের পরিবেশ থেকে শুরু করে বসার আসনসহ সবকিছু ভালো হওয়া চাই। মোদ্দা কথা, নিজেদের সংস্কৃতি দিয়েই সিনেমা হল বাঁচাতে হবে।’’
সিনেমা হল কমে যাওয়ার পাশাপাশি আরেকটি সংকটও রয়েছে। যেকোনো সিনেমা মুক্তি পেলে প্রযোজক টিকিটপ্রতি তিন ভাগের এক ভাগ পেয়ে থাকেন। বাকিটা নিয়ে যান সিনেমা হল মালিকরা। তাই বক্স অফিস প্রথা চালু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ই-টিকিট চালুর মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন।
খিজির হায়াত খানের মন্তব্য, ‘‘আমাদের বাংলা সিনেমা বাঁচবে কী করে? আমাদের যথাযথ পরিবেশনা ব্যবস্থাপনা নেই। আমাদের কোনো সেন্ট্রাল সার্ভার নেই। আমাদের কোনো ই-টিকেটিং নেই। আমাদের বর্তমান পরিবেশনা ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ধসে গেছে। আমি ২৭টি সিনেমা হলে ‘ওরা ৭ জন’ ছবিটি মুক্তি দিয়েছি। সেই রিপোর্ট আমার কাছে এসেছে একটি চিরকুটে! আমার পরিবেশক কলম দিয়ে সেটি লিখে দিয়েছেন। কিছু বলার নেই আমার। আমার কাছে কোনো এক্সেল ফাইল, কোনো নম্বর, কিছুই নেই। তিনি আমাকে যা বলছেন, তাই মেনে নিতে হচ্ছে। বুকিং এজেন্ট যা বলছেন সেটাই আমাকে মানতে হবে। বুকিং এজেন্টকে সিনেমা হল মালিক যা বলবেন তাই মেনে নিতে হবে। সম্পূর্ণ সিস্টেম ভুয়া। আমরা বাংলা সিনেমাকে ইতোমধ্যে কুয়ায় ফেলে রেখেছি। এখন কিছু সিনেমা হল মালিকের লাভের জন্য হিন্দি সিনেমা এনে তাতে মাটিচাপা দিচ্ছি।’’
পুরনো নিয়ম বদলানোর পক্ষে জায়েদ খানও। তার অভিমত, প্রযোজক বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে হবে সিনেমা হল মালিকদের। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একজন প্রযোজক সিনেমা দিচ্ছেন, শ্রম দিচ্ছেন, আবার টাকা অর্ধেকও পাচ্ছেন না। এখানে সমান বন্টন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বিক্রি হওয়া টিকিটের অর্ধেক টাকা প্রযোজকের পকেটে আসতে হবে। একটি সিনেমা মুক্তি দিলে ঠিক কতো টাকার টিকিট বিক্রি হয় প্রযোজক জানতেই পারেন না। তাই বাংলাদেশে বক্স অফিসের ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ই-টিকিটের স্বচ্ছতা লাগবে।’’
অনন্য মামুন ডয়চে ভেলেকে আশার কথা শোনালেন, ‘‘আমরা বক্স অফিস ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ই-টিকেটিং চালু করছি। সত্যি বলতে, দোকানে বেচাকেনা না থাকলে ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন দিয়ে কী করবেন? এ কারণে আমরা যখনই ই-টিকেটিং চালু করতে চেয়েছি, কোনো সিনেমা হল মালিক রাজি হননি। তবে তারা এর বিপক্ষে নন। অনেক সিনেমা হল মালিক সারাবছর ভাড়া দেন, কিন্তু কন্টেন্ট পান না। ই-টিকেটিং ব্যবস্থাপনায় প্রযোজক ও সিনেমা হল মালিক উভয়ই দেখতে পারবেন কতটি টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তখন পুরো চিত্রটা পরিষ্কার দেখতে পেয়ে প্রযোজক শান্তি পাবেন।”
তবুও তলায় বিশাল ফুটো নিয়ে ডুবতে থাকা ঢালিউডের জাহাজ কি রক্ষা করা যাবে আদৌ? সেক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন মনে করেন অনেকে। সেটা কেমন হতে পারে? খিজির হায়াত খানের পরামর্শ, ‘‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটি ফিল্ম কমিশন সবচেয়ে বেশি দরকার। যেখানে থাকবেন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া, ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করা, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে চিন্তার জায়গায় অনেকদিন ধরে থাকা এমন কিছু ব্যক্তি, যারা বাংলাদেশের ফিল্মকে ভবিষ্যতে একটা মজবুত জায়গায় দেখতে চান এবং এসব নিয়ে যথাযথভাবে ভাবেন। কমিশন থেকে আমাদের নির্মাতাদের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করে তারপর একটি সমাধানে পৌঁছানো প্রয়োজন।” সূত্র : ডয়চে ভেলে