স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণের ক্ষমতা অর্থ বিভাগের হাতে নিয়ে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ সংসদে উঠেছে। বিলে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ১৫, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ও ৪৫ ধারার বিধান ‘স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।’
সরকারি চাকরি আইনের ১৫ ধারায় বলা আছে, ‘সরকার, সরকারি গেজেটে আদেশ দ্বারা, কোনো সরকারি কর্মচারীর বা সকল সরকারি কর্মচারীর বা সরকারি কর্মচারীগণের কোনো অংশের জন্য বেতন, ভাতা, বেতনের গ্রেড বা স্কেল, অন্যান্য সুবিধা ও প্রাপ্যতা বা অবসর সুবিধা সম্পর্কিত শর্তাদি নির্ধারণ করিতে পারিবে।’
৪১ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’
৪২ ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর ফৌজদারি মামলায় এক বছরের বেশি সাজা হলে আদালতের রায়ের দিন থেকে চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির সংশোধিত খসড়া অনুমোদন পায়। ওই বৈঠক শেষে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ) নিজেদের মতো বেতন কাঠামো নির্ধারণ ও আর্থিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার বিধান রেখে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আগে কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হাতে ছিল। কিন্তু এবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টিও একই বিভাগের অধীন নিয়ে আসা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন-ভাতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।’
সংসদে উত্থাপিত বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইনে ‘স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের করণীয় সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তাই অর্থ বিভাগ সরকারি চাকরি আইনের বেতন-ভাতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিধান সংশোধন প্রয়োজন।’