স্বস্তি ও নিরাপত্তা কোথায়?

স্বস্তি ও নিরাপত্তা কোথায়?

Daily Nayadiganta

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেল আমাদের বাংলাদেশের। মানুষ নানা আশা ভঙ্গের পর এখন নিরাপদ ও স্বস্তির একটি জনপদ চায়। গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে যারা শত স্বপ্ন সমৃদ্ধির কথা বলে এ দেশে ক্ষমতায় গেছেন, আখেরে শুধু নিজের ও অনুগামীদের ভাগ্যের চাকাই সম্মুখ পানে ঘুরিয়েছেন তারা। অথচ সাধারণ মানুষ অতীতে যে তিমিরে ছিল আজো সেই অমানিশার অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ এখন আর নেতা ও সমাজপতিদের কল্পনার ফানুস ওড়ানোর আশ্বাসে মেতে ওঠে না। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অভাব, অভিযোগ, ভয়ভীতি আর অশান্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জীবনটুকু রক্ষার জন্য চায় একটু নিরাপত্তা; গুম, খুন প্রভৃতি থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চিয়তা। স্বাচ্ছন্দ্যের যে স্বপ্নজাল সমাজপতিদের কথায় তারা বুনতে বসেছিল, প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে তা এখন জীর্ণশীর্ণ ও শতচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হতাশার ঘুণপোকা সারাক্ষণ তাদের দেহমনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। দেশের মানুষের চরম এই দুঃখ ও হতাশায় ঘৃতাগ্নি ঘটে, যখন তাদের শোনানো হয়, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে’ ধরনের শত কথা। অথচ সমাজপতিরা মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যপরিচর্যার নিশ্চয়তা বিধানের অঙ্গীকার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যান। এসবের নিশ্চয়তা প্রদান তারা করেন বটে, তবে সেটা নিজের ও তাদের পেটোয়াদের জন্য। আর তাদের এসব কর্মকাণ্ডে কথা প্রকাশ করাও এখন বিপজ্জনক।

কেননা তাতে বিপদের ঝুঁকি বিরাট। বাংলাদেশে গুম হয়ে যাওয়ার যে মিছিল শুরু হয়েছে, তাতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে গুম হয়েছে ৫০৭ জন। প্রতি বছর ৩০ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘গুম দিবস’। এ উপলক্ষে গত ৩০ আগস্ট ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছিল আলোচনা সভার। সেখানে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনরা উপস্থিত হয়ে তাদের প্রিয়জনদের গুম হয়ে যাওয়ার মর্মান্তিক স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন, তাদের প্রিয় মুখগুলোকে ফিরিয়ে দেয়ার গভীর আকুতি জানালেন। সম্প্রতি সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গুমের ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে এ দেশে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের হাল অবস্থা জানতে চেয়ে উপর্যুপরি যোগাযোগ করে চলেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মিলেনি। এমন নীরবতার কি কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা নেই বা কোনো প্রশ্ন উঠছে না?

দেশের মানুষের নিরাপদভাবে জীবনযাপন করার অধিকার অবিচ্ছেদ্য। এটা সাধারণভাবেই ধরে নেয়া যায়, যারা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে গুম হচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক মত ও পথ সরকারে মত পথের চেয়ে ভিন্ন। আর যদি আমাদের দেশকে আমরা ‘গণতান্ত্রিক’ বলে ধরে নেই, তবে নিজস্ব পথ নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে চলার অধিকার তো সংবিধানই দিয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান একজন নাগরিককে যে অধিকার স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে দেয়, তা যাতে তিনি কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়াই ভোগ করতে পারেন, সে নিশ্চয়তা সরকারই দেয়ার কথা। এর কোনো ব্যত্যয় হলে এ জন্য তাদের দায়ী হতে হয়। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে যেন রক্ষকই ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে তা হরণ করে নেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক হওয়ার ব্যাপার হলো, প্রশাসনের যেসব সংস্থার দায়িত্ব নাগরিকদের দেখভাল করা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের কাছে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের অসহায় স্বজনরা প্রিয়জনদের সন্ধান জানতে চাইলে তারা রহস্যজনক নীরবতা পালন করেন। আজ পরিবেশ পরিস্থিতি এমন যে, এ ব্যাপারে কোনো ন্যূনতম জবাবদিহিতা পর্যন্ত নেই। অথচ একটি দায়িত্বশীল প্রশাসনের জবাবদিহিতা ব্যতিরেকে তা দিন দিন নিজের দক্ষতা হারিয়ে একটি অথর্ব সংস্থায় পরিণত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত গভীরভাবে।

স্মরণ রাখা দরকার, যারা এ দেশের স্থপতি, সেই স্মরণীয় ব্যক্তি যারা বহু ত্যাগ তিতিক্ষা আন্দোলন সংগ্রাম আর যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন, তাদের স্বপ্ন ছিল এ দেশের মানুষের জন্য শান্তি স্বস্তির আবাসভূমি গড়ে তোলা। স্বাভাবিক নিয়মে তারা চলে গেলেও তাদের স্বপ্নের দেশ ও মানুষ তো রয়েছে। তাদের সেই অসমাপ্ত মহান মিশন পূর্ণ করার দায়িত্ব উত্তরসূরিদের কাছে দিয়ে গেছেন। কিন্তু দুঃখ হয়- আজ যারা সমাজপতি ও রাষ্ট্রের কর্ণধার তারা সে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি ভুলে বসে আছেন। এখন তাদের ভাবনায় নেই দেশ ও দেশের মানুষ। আজ তারা কেবল ব্যক্তি বা সঙ্কীর্ণ স্বার্থের বলয়ে ঘুরছেন। মানবিক যে মূল্যবোধ তার চর্চা ও অনুসরণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে এ সমাজে মানুষ শান্তি ও স্বস্তিতে বসবাস করতে পারছে না।

শুধু রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই নয়, দেশের অগণিত সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য ও নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে ব্যাপক। দেশে জবাবদিহিতার যে অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায়- প্রশাসনের সর্বত্র দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চরম গাফিলতি ও শিথিলতার নজির অহরহ সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য সব সীমা অতিক্রম হওয়ার পথে। এই দুর্বৃত্তদের দমনের দায়িত্বে নিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা রাখতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে, ওরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে বর্ধিত হচ্ছে। এদের যদি আইনের আওতায় নিয়ে এসে দমন করার উদ্যোগ নেয়া হয়, তবে তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এ ‘ঘেটু’দের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। কারণ এদের ব্যবহার করেই তো তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘গডফাদাররা’ শক্তিমত্তা অর্জন এবং অর্থ প্রতিপত্তি লাভ করেছেন।

এসব দুর্বৃত্তের তৎপরতা যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে গডফাদারদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে যায়। তাই এই পরিস্থিতি থেকে নিস্তার লাভ করা দুরূহ ব্যাপার। এ কারণে সমাজে বিরাজমান নিরাপত্তাহীনতার ঘোর অমানিশা কাটা বেশ কঠিন। তবু এসব দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এখন জরুরি। এসবের প্রতিবিধানের জন্য আইনের কোনো ঘাটতি নেই; কিন্তু সে আইনের প্রয়োগ কোথায়? দেশ ও সমাজের স্থিতির জন্য আইনের শাসনের গুরুত্ব কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায় না। একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বিবেচনায় আনা হলে আইনের শাসন কায়েম করাকে পূর্বশর্ত হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেননা, কল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিকদের যাবতীয় অধিকার আইনেই সংরক্ষিত হয়ে থাকে। আইনে নির্ধারিত এসব অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করতে হয়। আইন প্রয়োগকারীদের কর্তৃক কারো প্রতি অনুকম্পা দেখানো আর কারো প্রতি বিরাগ প্রদর্শন চলবে না। কিন্তু বর্তমানে এ দেশের আইন প্রয়োগকারীরা এই নীতির প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর্যায়ে আর নেই। এ জন্য শুধু যে তাদেরই প্রতিশ্রুতির ঘাটতি রয়েছে, তা বলা যাবে না। কেননা, তাদের ওপর যে ‘রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ’ রয়েছে এর পূর্ণ সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ তারাই নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাবি করেন এবং সে কারণে জনগণের শান্তি ও স্বস্তির ব্যাপারটি তাদেরই সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু কথিত জনপ্রতিনিধিরাই তো এই সঙ্কট সৃষ্টির মূল কারণ। তাই তাদের দিয়ে এসব কি সম্পন্ন হবে?

ভিন্ন রাজনৈতিক মতানুসারীরা এখন সমাজে নানাভাবে যে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, সে বিষয়টি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ এমন আচরণ একটি স্বাধীন দেশের নীতি আইনকানুনের পরিপন্থী। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, সরকারের প্রতিপক্ষের জন্য এটাই নির্ধারিত। এটা আপাতত মনে হতে পারে, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য সুখপ্রদ ও সুরক্ষার। কিন্তু এমন বিবেচনা আসলেই ঠিক নয়। কেননা মানুষের বোধবিবেচনা কখনই ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে হতে পারে না। আরশিতে যেমন নিজ চেহারার ত্রুটি ভেসে ওঠে; তেমনি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা হলে তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যে ঘাটতিগুলো আছে বা যে ভুলগুলো তারা করছেন, সেটা দেখে শুধরে নেয়ার সুযোগ পান তারা। ক্ষমতাসীনদের বহু সমর্থক রয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি সকল বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের মোট সংখ্যাও বেসুমার- তা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বাংলাদেশ কোনো এক দল, জোট বা পক্ষের নয়, সবার। এই চেতনা ক্ষমতাসীনেরা লালন করেন বলে বাস্তবে মনে হয় না।

অতীতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পূর্বসূরিরা দেশকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এখন তাদের উত্তরসূরিরা সেই দুঃস্বপ্নের অতীতকে টেনে এনে পরিত্যক্ত পথই অনুসরণের কথা বলছেন। সেটা যে ভুল ছিল তা স্বীকার না করে পুনরায় সে পথে চলার কথা উল্লেখ করছেন। সম্ভবত এ কারণেই এখন তাদের প্রতিপক্ষের জন্য সব কিছু সঙ্কুচিত করে আনা হচ্ছে। এমন ধারণা ও কার্যক্রম কোনোভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের দ্বারা পোষণ করা সম্ভব নয়। অথচ মানুষের কাছে গিয়ে তারা নানা ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুসারীরা মানুষের ওপর আস্থা পোষণ করাটাই মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। গত বছর, সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীনেরা কোনোভাবে মানুষের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল, ক্ষমতা প্রয়োগ ও অর্থবিত্ত ব্যয় করেছেন।

সে জন্য, এই বিজয়ের ব্যাপারে জনগণের কোনো কৃতিত্ব রয়েছে বলে তারা মনে করেন না। আবার জনগণও তাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীনেরা এখন দায়িত্ব পালন করছে বলে মনে করে না। তাই দেশে একটা বড় শূন্যতা রয়েছে এসব গুরুত্বসহ বিষয় নিয়ে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এমন একটা প্রশাসন বা আসলে কখনোই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হয় না। এমন নৈতিকতাশূন্যতা নিয়ে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করা কখনো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের প্রাণসঞ্চার করে আইন সভা বা পার্লামেন্ট। সেই সংসদ বা আইন সভা দেশে এখন প্রাণসঞ্চার করা তো দূরের কথা, দেশ ও জাতি হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হলেও তার একটি বিষয় নিয়েও সে খানে আলোচনা হয় না।

দেশের ভেতরে বহু সমস্যা আছেই, সেই সাথে আন্তর্জাতিক বলয়ে যেসব ঘটনার জের বাংলাদেশের ওপর এসে পড়ছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় আর কী তার ভূমিকা? এ নিয়ে জাতিকে অবহিত করার জন্য সংসদে আলোচনা করা কতটা যে জরুরি, তা আমাদের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বোঝেন না এমন নয়। হয়তো নতজানু হয়ে থাকাকে শ্রেয় বলে ভাবছেন তারা। এমন নীরবতা তো জাতীয় স্বার্থের জন্য মোটেও সহায়ক নয়। এমনকি তা দেশকে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি দৃঢ় ও রুজু বিদেশনীতি থাকা অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমর্যাদা উচ্চকিত এবং বন্ধু বৃদ্ধির জন্য উপযোগী পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ করা জরুরি। কিন্তু এখন যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের বিদেশনীতির লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো কিছু উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থের প্রতি গুরুত্ব দেয়াটাই যেন এখন বিদেশনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য। অথচ বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ তার অন্যতম প্রধান সমস্যা, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাতে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে নিছক ‘লিপ সার্ভিস’ ছাড়া বাস্তব কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের ‘কজ’-এর ব্যাপারে কারো কোনো সহানুভূতি না পাওয়াটা সরকারের পররাষ্ট্রনীতির দেউলিয়াত্বকে তুলে ধরেছে। আগেই এটা বলা হয়েছে যে, অভ্যন্তরীণ নানা সঙ্কটের কোনো সুরাহা সরকার করতে পারছে না। আর উপরের আলোচনা থেকে একই সাথে এটা পরিষ্কার যে, বহির্বিশ্বেও ক্ষমতাসীনেরা কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হননি।

এই দুর্বলতার জন্য কোনো অজুহাত দেখানো যাবে না। কেননা দেশের ভেতরে এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই, বিরোধী দলগুলো দেশ পরিচালনায় সরকারের জন্য কোনোরূপ বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করছে না। আর সরকার দীর্ঘকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশ পরিচালনার বিরল সুযোগ পেয়েছে। এতসব অনুকূল অবস্থার মধ্যেও তারা নিজেদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা দেখাতে পারেননি। তবে তাদের একটি ‘যোগ্যতা’র কথা উল্লেখ না করলে নয় যে, বাকপটুতার জোরে তাদের অসামর্থ্যগুলো ঢেকে রাখতে চেষ্টা করে চলেছেন।

[email protected]