দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বিশেষ বর্ধিত সভায়। আগামী শনিবার দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গণভবনে এই বিশেষ বর্ধিত সভায় বসছেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার ‘কৌশলে’ দলে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা মেটানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বিশেষ বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই বৈঠকে সারা দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি দলীয় নেতা অংশ নেবেন। বৈঠক থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিভেদ যেন আর না বাড়ে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভার বিশেষ দিক হচ্ছে এতে দলের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫৮ জন নেতা ও সমর্থক দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এসব আসনের অনেকগুলোতে ভোটের পরও সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। মূলত তাঁদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই দলীয় সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুসারে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিনে সংঘাতে নোয়াখালী, মাদারীপুর, নেত্রকোনা ও ঝিনাইদহে চারজন নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক শ মানুষ। এসব ঘটনায় আক্রমণকারী, আক্রমণের শিকার এবং আহত-নিহতের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক। তাঁরা নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ২২ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিশেষ বর্ধিত সভা করার প্রস্তাব এসেছিল। তখন বলা হয়েছিল, উপজেলা নির্বাচনের পর করা হবে। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর হবে। এর মধ্যে সরকার গঠনের পরই বিরোধী দল বিএনপিও কালো পতাকা মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এ পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূলে ঐক্য দরকার বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। এ জন্যই অনেকটা তড়িঘড়ি করে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে। ওই দিন বেশ কিছু পৌরসভারও ভোট হবে।
এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে পারবেন। দলের নেতা-কর্মীরা যাঁকে খুশি তাঁর পক্ষে কাজ করতে পারবেন।
গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌরসভার (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেবেন। দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য; জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা বর্ধিত সভায় আমন্ত্রিত।
প্রথম আলো