স্বতন্ত্রদের নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে এবং ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতাসীন দলটির ভেতরেই নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দলের মনোনয়ন পাওয়া অনেকেই চান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হোক। কোনো কোনো আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৪–দলীয় জোট ও মিত্রদের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন, নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভূমিকা রাখবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও মন্ত্রীদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন। গত সোমবার গণভবনে বৈঠকে ১৪ দলের শরিকদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে নিজেদের দ্বিমতের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপিবিহীন ভোটে বিরোধী জোটের আরও অনেক দল আসবে বলে প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগের। এমনকি বিএনপির অনেক নেতা দল ছেড়ে অন্য দলের হয়ে ও স্বতন্ত্র ভোট করবেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ দল ও ব্যক্তি আসেননি। এ জন্য নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাধ্যমে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এবার ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন ৪২৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরপরও ৩২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্যদেরও অনেকে আছেন।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সারা দেশেই আছেন। তবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, পিরোজপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে জটিলতা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভেতরে-ভেতরে উৎসাহ, সহায়তা দিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বাদ পড়েছেন। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে আচরণবিধি ভেঙে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। ফরিদপুরে কাজী জাফর উল্যাহ ও মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) এবং বরিশাল সদরে দলীয় প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর দীর্ঘ দ্বন্দ্বের ইতিহাস শঙ্কা জাগাচ্ছে আওয়ামী লীগে। এ ধরনের অনেক আসনে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে দলটির নেতাদের অনেকে বলছেন।

স্বতন্ত্রে মান রক্ষা

কক্সবাজার-১ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে দুবারই পরাজিত হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। মাঝখানে সংসদ সদস্য হন জাফর আলম। এবার সালাহউদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু ঋণ খেলাপির দায়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এখন জাফর আলমেই ভরসা আওয়ামী লীগের।

ঋণ খেলাপির দায়ে বাতিল ঘোষিত হয়েছে নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের মনোনয়নপত্র। এই আসনে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তিনবার ছাড় দিলেও এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে এই আসন ছাড় দিতে হতো আওয়ামী লীগকে। ফলে কিছুটা সহায়ক হয়েছে আওয়ামী লীগের।

বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ কিছুটা নির্ভার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট উৎসবমুখর করতে সহায়ক হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি ভালো সিদ্ধান্ত। তবে কিছু সমস্যা তো হতেই পারে।