স্পেসএক্সের প্রকৌশলী বাংলাদেশি-আমেরিকান, বয়স ১৪
“এই গল্পগুলো আমার বলতে ভাল লাগে, কারণ, যারা বড় পদে আছেন তাদের বয়স নিয়ে ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া দরকার। হয়ত আমার গল্প এইরকম আরও অনেকের পথ খুলে দেবে।”
|
ছবি: সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি
অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীতেই দেখা যায় বাবার চাকরির সূত্রে তারা বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে বড় হয়েছেন। আর এই একুশ শতকে দেশে অনেক মা-বাবাই এলাকা বদল করতে চান না সন্তানের স্কুলের কথা ভেবে। কাইরান কাজির বেলায় ঘটনা ভিন্ন। তার মা চলে যাবেন ওয়াশিংটন স্টেটের রেডমন্ডে, কাইরানের চাকরি হয়েছে সেখানে।
কাইরানের বয়স সবে ১৪ বছর। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এই কিশোর আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন পর্যায়ে পড়ালেখা করছিলেন সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। স্নাতক হবেন কিছুদিনের মধ্যেই।
ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত মহাকাশ গবেষণা আর অভিযানকেন্দ্রিক কোম্পানি স্পেসএক্সে কাজ করবেন কাইরান। তার নিয়োগ হয়েছে এর ইন্টারনেট সংযোগ কোম্পানি স্টারলিংকে।
আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের প্রভাবশালী দৈনিক লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস মজা করেই লিখেছে, “অফিসে আনানেওয়া করতে কাইরান কাজির সম্ভবত একজন চালকের সাহায্য লাগবে। (কারণ) তার বয়স মাত্র ১৪ বছর।”
ক্যালিফোর্নিয়ার প্লিজেন্টনে নিজের শেবার ঘর থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাইরান বলেন, “কলেজের দিনগুলোই মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের ছিল। নিজের যাত্রা শেয়ার করার বেলায় আমার অনেক স্বাধীনতা ছিল।”
শিশুবেলা
মাত্র দুই বছর বয়সেই কাইরান পূর্ণ বাক্য বলতে পারতেন। আর কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় ক্লাসের শিক্ষক আর বন্ধুদের কাছে বর্ণনা করতেন ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওতে শোনা খবর।
বয়স নয় বছর হতে না হতেই তিনি টের পান, সিলেবাসের পড়া তার জন্য কোনো ব্যপারই না। মা-বাবা, শিক্ষক এবং বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকও একমত হন, আরও বড় ক্লাসে পড়ার জন্য প্রস্তুত কাইরান।
সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া। শেষ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোরের লাস পজিটাস কলেজে ভর্তি হন তিনি।
ক্লাস থ্রি থেকে এক ধাক্কায় কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়ে তার মনে হল, এইবার সিলেবাস যেন খানিকটা উপযুক্ত লাগছে।
ইউনিভার্সিটি জীবন
ট্রান্সফার হয়ে সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কাইরান টের পেলেন, তিনি যে ক্যারিয়ারের পথ অনুসরণ করার স্বাধীনতা পেয়েছেন, সেটি তাকে ওইসব বড় সমস্যা সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।
“হ্যাঁ, যে লেভেলের পড়ালেখা চেয়েছিলাম, সেটা এবার পাওয়া গেল।”
অবসর সময় তার কেটেছে কল্পকাহিনিনির্ভর গেইম “অ্যাসাসিনস ক্রিড” খেলে, ফিলিপ কে ডিকের সাই-ফাই ছোট গল্প আর সাংবাদিক মাইকেল লুইসের বই পড়ে যিনি যিনি ২০০৮ সালের অর্থনীতির ধস নিয়ে লিখেছেন।
নিজের গল্প বলতে ভালবাসেন কাইরান, যে গল্প তার বয়সী অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তার গল্পের সবচেয়ে পরিচিত পটভূমি হল, কীভাবে একজন পদধারী ব্যক্তিকে বোঝানো সম্ভব যে, তার বুদ্ধিমত্তা আর পরিপক্কতা আসলে নির্ভর করার মতো।
অনেক ‘না’র ভিড়ে কেবল একটি ‘হ্যাঁ’
কলেজে পড়ার সময়ই কাইরান আর তার মা এমন সব সম্ভাব্য কাজের জায়গার তালিকা তৈরি করে ফেলেন যেখানে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করা যায়। তবে, সেই তালিকা থেকে সাড়া দিচ্ছিল না কেউ।
এরইমধ্যে ইনটেলের ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস রিসার্চ ল্যাবের পরিচালক লামা নাচম্যান সে সময়ের ১০ বছর বয়সী কাইরানের সাঙ্গে একটি মিটিং করেন। তার ধারণা ছিল, সংক্ষিপ্ত আলাপ শেষে এই বাচ্চাটিকে বলে দেবেন, “কয়েক বছর পর আবার চেষ্টা কোরো।” আর সেইসঙ্গে কিছু টিপস যাতে এই সদ্য প্রাইমারি পেরোনো বয়সের ছেলেটির ভবিষ্যতে কাজে লাগে।
ঘটনা হল ভিন্ন। তিনি তাকে কাজের সুযোগ না দিয়ে পারেননি।
অতঃপর স্টারলিংক
কিছুদিন আগেই ইনস্টাগ্রামে কাইরান ঘোষণা দিলেন প্রস্তুতির – চাকরির ইন্টারভিউ। সামনে টেবিলে ল্যাপটপ, পরনে শার্ট-টাই, তার ওপর সোয়েটার – পুরো পেশাদার চেহারা।
কয়েক সপ্তাহ পর আবার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট। এবার স্পেসএক্স থেকে পাওয়া ‘অফার লেটারে’র স্ক্রিনশট পোস্ট করলেন তিনি।
মা-বেটা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে যাওয়ার। সেখানেই তার অফিস।
অফিসে প্রথম দিনে কী পরবেন জানতে চাইলে কাইরান উত্তরে রসিকতা করে বললেন, “ভাবছি স্পেসএক্সের টিশার্ট পরব, বেশ জীবন্ত বিজ্ঞাপন হবে কিন্তু!”
খানিকক্ষণ বাদেই শিশুসুলভ কৌতুক বাদ দিয়ে, বেশ ভারিক্কি চালে বললেন, “আমি সম্ভবত জিন্স আর টি-শার্ট পরব যাতে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ওরা আমাকে গোনায় ধরে।”