স্থল অভিযানের শুরুতে লাশ পেলো ইসরাইল

হামাসের গত সপ্তাহের হামলার পর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। অপরদিকে ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলাও অব্যাহত আছে। হামাসের নেতারা এর আগে বলেছেন ইসরাইলি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তারা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গাজায় টানা এক সপ্তাহ ধরে বিমান হামলা চালানোর পর গতকাল থেকে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল। গতকাল শুক্রবার সেনারা ট্যাংক ও সাজোয়াযানের বহর নিয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করে। অভিযানের প্রথম দিনেই গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিনাঞ্চলে হামাসের হামলার পর থেকে নিখোজ কয়েকজনের লাশ পেয়েছে সেনারা।

গত ২৪ ঘন্টায় গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন২৫০ ফিলিস্তিনি। ফলে গত এক সপ্তাহে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার জন। অন্যদিকে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামাসের সাথে যুদ্ধে নিহত আরো ৭ সেনার নাম প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে নিহত সেনার সংখ্যা ২৬৩ জনে পৌছলো বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল।

ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, আকাশ থেকে নজরদারির মাধ্যমে তারা গাজা উপত্যকার সীমান্তে নিখোঁজ ইসরাইলিদের কয়েকজনের লাশ শনাক্ত করেছে। এই অভিযানে হামাসের অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা হ্রাস করতে হামলা চালানো হবে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের অবস্থানের তথ্য জানতে ট্যাংক ব্যবহার করে এ অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা।

আল জাজিরা অ্যারাবিকের খবরে বলা হয়েছে হামাসের আল কাসাম ব্রিগেড দাবি করেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বড় একটি দলের ওপর রকেট হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে ইসরাইলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে তারা হামাসের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধানকে হত্যা করেছে। তবে হামাস এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

২.
গতকাল স্থল অভিযান শুরুর আগে বৃহস্পতিবার অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে থাকা ১১ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এ ঘোষণার পরপরই নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যেতে শুরু করে স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা।

রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ঠিক কতো বাসিন্দা উপত্যকার দক্ষিণ দিকে গেছেন তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে অনেক বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। হামাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ আল-বোজোম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা উত্তর গাজা এবং গাজা শহরের জনগণকে বলছি, আপনারা আপনাদের বাড়িতে এবং জায়গায় থাকুন।

দক্ষিণ গাজা থেকে নাগরিকদের সরে যেতে আকাশ থেকে লিফলেট বিতরণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। অনেকেই গাজা ছেড়ে যেতে যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ালেও জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জানিয়েছে যে, তারা ইসরাইলি বাহিনীর নির্দেশ মেনে পালাবে না। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংগঠনগুলো বলছে, এত বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি পালাতে বাধ্য হলে ঐ অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

ইসরাইলের আলটিমেটামের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেজ বোরেল বলেছেন, যে, উত্তর গাজা থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১১ লাখ মানুষকে অঞ্চলটির দক্ষিনে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ‘বাস্তবায়ন করা একেবারেই অসম্ভব। শনিবার বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, উত্তর গাজার হাসপাতাল থেকে হাজার হাজার গুরুতর রোগীকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর গাজা ফাঁকা করার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হুমকির পর সংস্থাটি বলেছে, রোগীদের জীবন বিপন্ন করে স্থানান্তর সম্ভব নয়।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছে, উত্তর গাজায় অবস্থিত দুটি হাসপাতাল থেকে যদি ইসরাইলি বাহিনীর দাবি অনুযায়ী রোগীদেরকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তাদের জীবন ঝুকিতে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে উত্তর গাজা ছাড়ার ইসরাইলি হুমকি প্রত্যাহার করতে হবে।

৩.

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনী যেভাবে রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ শহর ঘেরাও করেছিল, একইভাবে গাজা অবরোধ করেছে ইসরাইল। গতকাল শুক্রবার কিরগিজস্তানে কমনওয়েলথ অফ ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস এর নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার সময় এ মন্তব্য করেন পুতিন। পুতিন বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানের মূল চাবিকাঠি হলো, পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

অপরদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তিনি চলমান এই সংঘাতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করা খসড়া প্রস্তাবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সব ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া।

গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এর আগে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে ২৩ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিন গাজায় চলে যেতে বলে ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকেই উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। রাশিয়ার যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরাইল সফরে গেছেন। তিনি বলেছেন, নৃশংসতাকে উপেক্ষা করা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় এটা নয়। নিরপেক্ষতা দেখানোর অজুহাতের সময়ও এটা। গতকাল শুক্রবার তেল আবিবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেছেন।

টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যারা দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা চায় তাদের অবশ্যই হামাসের নিন্দা জানাতে হবে। তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। হামাস ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করেনা বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন এই মন্ত্রী।

ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে ইঙ্গিত করে হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, কোনও দেশ বা গোষ্ঠী যদি এই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরও কঠোর পলিনতি ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন অস্টিন। তিনি বলেন, ইসরাইলের নিজেকে রক্ষায় যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের মতোই আমরা ইসরাইলের পাশে আছি। যুদ্ধের গতি অনুযায়ী ইসরাইলে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা সরবরাহ করা হবে বলে জানান অস্টিন।

৪.

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটি এই অঞ্চলে এক স্কোয়াড্রন এফ-১৫ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কি সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পরপরই বাইডেন প্রশাসন ভূমধ্যসাগরে থাকা মার্কিন বিমানবাহী বৃহত্তম যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস জেরার্ল্ড ফোর্ড ও অন্য কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ইসরাইলের নিকটবর্তী এলাকার সাগরে পাঠায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে। অন্যদিকে মার্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অষ্টিন ইতিমধ্যেই গাজা উপত্যকা সফর করে ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন ইসরাইলকে।

হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১০০ নাবিকসহ নৌবাহিনীর দু’টি যুদ্ধ জাহাজ এবং নজরদারি বা গোয়েন্দা বিমান পাঠাচ্ছে ব্রিটেন। এগুলো ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চল থেকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে বলে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিট এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরান বা রাশিয়ার মতো দেশগুলো থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সহায়তার যেকোনো প্রচেষ্টার উপর নজর রাখবে ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ এবং গোয়েন্দা বিমান। পসেইডন পি-৮ বিমান ও অন্যান্য বিমানের টহল ফ্লাইট গতকাল শুক্রবার থেকেই শুরু হয়।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গতকাল শুক্রবার এক সরকারি সফরে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যান। সেখানে তিনি মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামি শৌকরির সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। শামি শৌকরির আমন্ত্রণে হাকান ফিদান এই সফরে যান। তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের মধ্যে এই সফর অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ন। ইতোমধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তার অংশ হিসাবে তুরস্ক ত্রান সামগ্রী নিয়ে দুটো বিমান মিশরে পৌছেছে।

লিবিয়াসহ কয়েকটি ইস্যুতে তুরস্ক ও মিসরের মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলার পর গত জুলাই মাসে দুই দেশ তাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে। এরপর তারা পরস্পরের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়। এর আগে দীর্ঘদিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে কুটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল তুরস্ক ও মিসর।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্র আমির আব্দুল্লাহিয়ার গতকাল শুক্রবার এক সরকারি সফরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যান। সেখানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে লেবানন সফর করেন। সেখানে হামাস ও হিজবুল্লাহ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, ইসরাইল গাজায় যুদ্ধপরাধ করছে। পশ্চিমারা তা সমর্থন করে যাচ্ছে।

৬.

ইসরাইলে হামলায় হামাস উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা অসত্য ও গুজব বলে দাবি করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ’র এক প্রতিবেদনে এ ধরণের প্রচারণাকে ভিত্তিহীন ও গুজব হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, দেশটির নেতা কিম জং উনের প্রশাসন বরছে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলমান সংঘাতের দায়ভার এবং সমালোচনা এড়াতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উপর চাপানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধকে ওয়াশিংটনের আরেকটি দায়ভার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে করেছে কিম প্রশাসন। অবশ্য গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহু সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে পিয়ংইয়ং।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুদ্ধের ছবিগুলোতে হামাস যোদ্ধাদের হাতে যেসব অস্ত্র দেখা যায় তা সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার তৈরি। এগুলোর মধ্যে সম্ভবত এফ-৭ রকেট চালিত গ্রেনেডও আছে। উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র বিক্রি নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করছেন টেক্সাসের অ্যাঞ্জেলো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রুস বেচটল। তিনি বলেছেন, হামাস বেশ কয়েক বছর ধরে এফ-৭ ব্যবহার করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

৮.
ব্রিটিশ সাংবাদিক হ্যারি ফিয়ার অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমা বিশে^র মিডিয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তারা ইসরাইলের তৈরি করা গল্পগুলোকেই সরাসরি প্রচার করছে। তুরস্কের আনাদোলু বার্তা সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘গাজা ষ্টিল অ্যালাইভ’ শীর্ষক ডকুমেন্টারি তৈরি করে আলোচনায় আসেন ব্রিটিশ এই সাংবাদিক।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতিবেদনের ভাষা ও শব্দচয়নের সমালোচনা করেন হ্যারি ফিয়ার। তিনি বলেন, পশ্চিমা বিশে^র মেইনষ্ট্রিম মিডিয়াগুলো ইসরাইলে হামাসের হামলা ও হতাহতের ইপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রচার করছে। অথচ, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল বিদ্যুৎ, জ¦ালানি, খাদ্য, ওষুধ, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে একটানা বিমান হামলা করে যে গণহত্যা চালাচ্ছে সে সম্পর্কে মুখে কুলুপ এট রেখেছে পশ্চিমা মিডিয়া। ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজায় যে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের প্রতিবেদনে কোন তথ্যই পাওয়া যায় না।

বিবিসি’র খবরে শব্দচয়নের বিষয়টি উল্লেখ করে হ্যারি ফিয়ার বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে বিবিসি’র প্রতিবেদনে ‘ডায়েড’ বা মারা গেছে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে একই প্রতিবেদনে নিহত ইসরাইলিদের সম্পর্কে ‘কিলড’ বা নিহত হয়েছে বলা হচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় গাজায় যে শত শত শিশু নিহত হচ্ছে সে বিষয়টি পশ্চিমা মিডিয়া উল্লেখের কোন প্রয়োজন মনে করছে না বলে াভিযোগ করেন হ্যারি ফিয়ার।