সুযোগে সুর পাল্টাচ্ছে ইসলামী দলগুলো

সুযোগে সুর পাল্টাচ্ছে ইসলামী দলগুলো

সরকারের আস্থাভাজন হয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির নানা সমালোচনা করে এতদিন ভোটের পক্ষে কথা বলেছে তারা। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চালিয়েছে নানা তৎপরতাও। কিন্তু এখন সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে সেই বিএসপি। একই সুরে কথা বলছে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা নিজাম-ই-ইসলামী পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস (ইসহাক), খেলাফত মজলিস (হাবিবুর রহমান), খেলাফত ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের দুটি অংশও। এ সংগঠনের নেতারা যুক্ত রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গেও। ২০১৮ সালে এসব সংগঠনের ব্যানারে তারাও নির্বাচনে অংশ নেন। তবে অনুকূল পরিবেশ বুঝে এখন আলোচনার মধ্যে সমাধান দেখছে সেই সংগঠনগুলো। তাদের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও সংলাপ চায়। সরকারঘনিষ্ঠ ইসলামী দলগুলো সুযোগ বুঝে এমন সুরে কথা বলা রাজনৈতিক মহলে জন্ম দিয়েছে নতুন কৌতূহলের।

তিন কারণে ইসলামী দলগুলোর এমন অবস্থান হতে পারে বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান। তিনি বলেন, রাজনীতি একটি জটিল খেলা। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে হয়তো আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের পথ দেখছেন তারা। আবার অবস্থা একটু পরিবর্তন করে তারা কূটনৈতিক মহলেও সুনজর প্রত্যাশা করতে পারেন। এটির মাধ্যমে সরকারকে চাপে রেখে নির্বাচনে কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করে নেওয়ার কৌশলও থাকতে পারে।

গত সপ্তাহে এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে পাঁচদলীয় রাজনৈতিক মোর্চা ‘সমমনা ইসলামী দলগুলো’ নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) তপশিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানায়। তারা বলেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এই জোটের শরিক হিসেবে আছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মুসলিম লীগ (বদরুদ্দোজা আহমেদ-কাজী আবুল খায়ের) ও খেলাফত মজলিস। এর মধ্যে চারটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। তপশিল ঘোষণা হওয়ার পরও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দাবিতে অনড় এ দলগুলো।

নির্বাচনী তৎপরতার অংশ হিসেবে গত ১৪ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসপির চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলম নুরী আল সুরেশ্বরী, বাংলাদেশ জনদল (বিজেডি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক পার্টির চেয়ারম্যান ফারাহনাজ হক চৌধুরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান হাসরত খান ভাসানী প্রমুখ। এ বৈঠকে বক্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও লিবারেল ইসলামিক জোট চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ সমকালকে বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণা করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর বিরোধ বিভাজন ও সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ায় জনমনে শঙ্কা বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থার সংকটও পরিলক্ষিত হয়। দেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই আমাদের প্রত্যাশা।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০০ প্রার্থী প্রস্তুত আছে বলে জানিয়ে লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভোট প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এবার যেন তা না হয়।

জানা গেছে, লিবারেল ইসলামিক জোট সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন সামনে রেখেই এই জোট গঠিত। জোট আছে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মধ্যেও। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এমন অবস্থা তৈরি করে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচন করেছেন হেফাজতের অনেকে। সরাসরি হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে নির্বাচন করবেন না কেউ। হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইসলামী দলের হয়েই মনোনয়ন চাইবে একটি অংশ। গতবারে হেফাজত নেতারা নিজাম-ই-ইসলামী পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস (ইসহাক), খেলাফত মজলিস (হাবিবুর রহমান), খেলাফত ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হন।

সমকাল