সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ৬৫ শতাংশ

logo

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১৩ ঘন্টা আগে) ২০ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০০ পূর্বাহ্ন

mzamin

facebook sharing button
whatsapp sharing button

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকগুলোতে অস্বাভাবিক হারে কমছে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ বা আমানত। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সুইস ব্যাংকগুলোতে অস্বাভাবিক হারে কমছে বাংলাদেশিদের আমানত। ২০২২ সালে বিস্ময়কর গতিতে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেন বাংলাদেশিরা। ২০২৩ সালেও সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের টাকা সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা অব্যাহত ছিল, যা বেশ উল্লেখ করার মতো।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ, প্রতি ফ্রাঁ ১৩২ টাকা করে ধরলে দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৩৪ কোটি টাকা। গত বছরের শুরুতে যা ছিল ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁ। তাতে ২০২৩ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬৫ শতাংশ অর্থ কমেছে। আগের বছর যে হার ছিল ৯৪ শতাংশ।

২০২১ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্রাঁ। ২০২২ সালের শেষে তা কমে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি ফ্রাঁতে দাঁড়ায়। সেখান থেকে কমে ২০২৩ সালের শেষে পৌনে ২ কোটি ফ্রাঁতে এসে পৌঁছেছে।

অর্থাৎ কমতে কমতে দুই বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমেছে ১১ হাজার কোটি টাকা। 

উল্লেখ্য, গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য বহুদিনের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। কঠোরভাবে গ্রাহকদের নাম-পরিচয় গোপন রাখে সুইস ব্যাংকগুলো। যে কারণে প্রচলিত বিশ্বাস, অবৈধ আয় আর কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা জমা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। নির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও এক দশক ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। তাতেই ওঠে আসছে এসব তথ্য।

তবে, প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশির আমানত বৃদ্ধির পর হুট করে তা কমছে কেন, এর ব্যাখ্যা নেই ওই প্রতিবেদনে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কমতে থাকায় বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের ধনীরাই এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশ থেকে এখনো প্রতি বছর অর্থ পাচার বাড়ছে। যা দেশের অন্যতম সমস্যা। তবে পাচারের এই অর্থ আগে সুইস ব্যাংকে গোপনে রাখার সুযোগ পেলেও এখন আর সেই সুযোগ পাচ্ছে না পাচারকারীরা। পাচারকারীরা গোপনীয়তা রক্ষা করে এমন কোনো জায়গায় যেমন কানাডা বা দুবাই বা অন্য কোনো দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিতে পারেন।

এদিকে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে শুধু যে বাংলাদেশিদের অর্থ কমেছে, তা নয়। ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ জমার পরিমাণও কমেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্নে পৌঁছেছে ২০২৩ সালে। আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ ১.০৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে; যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here