সুইসদের টাইব্রেকার দুঃখ, সেমিতে স্পেন

ইউরো ফুটবলের সেমিতে উঠে এসেছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন। – ছবি : সংগৃহীত

আত্মঘাতী গোলে শুরু। শাকিরির গোলে ম্যাচে সমতা দ্বিতীয়ার্ধে। এরপর হঠাৎ করে ১০ জনের দলে পরিণত সুইজারল্যান্ড তারপরও লড়াই করলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে। স্পেন চালালো সাড়াশি আক্রমণ। কিন্তু সুইসদের গোলপোস্ট থাকলো অরক্ষিত। দুর্দান্ত কিছু সেভ করলো সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক সোমার। ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। এখানেই দেখা মিললো না গোলের। সব শেষে টাইব্রেকার। যেখানে কপাল পুড়লো সুইজারল্যান্ডের। ৩-১ ব্যবধানে জিতে ইউরো ফুটবলের সেমিতে উঠে এসেছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালের টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে স্পেনের নায়ক গোলরক্ষক উনাই সিমোন। টাইব্রেকারে স্প্যানিশদের শুরুটা হয় বাজে। তাদের প্রথম শট পোস্টে মারেন অধিনায়ক বুসকেতস। বল জালে পাঠান সুইজারল্যান্ডের ফাবিয়ান, স্পেনের দানি ওলমো। সুইসদের দ্বিতীয় শট ঠেকান সিমোন। স্পেনের রদ্রির শট ফেরান ইয়ান সমের। সুইসদের পরের শটও রুখে দেন সিমোন।

স্পেনকে এগিয়ে নেন জেরার্দ মরেনো, ২-১। চতুর্থ শটে সুইজারল্যান্ডের রুবেন ভার্গাস বল উড়িয়ে মারেন। এরপর মিকেল ওইয়ারসাবাল বল জালে পাঠালে উৎসবে মাতে স্পেন।

শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিল ম্যাচের ৮০তম মিনিটেও। সেখান থেকে ৩-৩। এরপর অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকারে জয় সুইজারল্যান্ডের। স্পেনের বিপক্ষেও টাইব্রেকার। তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে যেখানে পাঁচ শটের পাঁচটিই গোল করেছে; সেখানে স্পেনের বিপক্ষে প্রথম চার শটের তিনটিই মিস। সুইসদের পঞ্চম শটের আর প্রয়োজন পড়লো না।

স্পেনের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড পিছিয়ে পড়ে ম্যাচের অষ্টম মিনিটে; দুর্ভাগ্যের আত্মঘাতী গোলে। কিন্তু হাল না ছাড়া মানসিকতার প্রমাণ দেয় আরেক দফা। ৬৮তম মিনিটে জেরদান শাকিরির গোলে ফেরায় সমতা। আর তা কোনোভাবেই ভাগ্যপ্রসূত না। বরং ম্যাচের ধারা অনুযায়ী গোলটি তাদের প্রাপ্য।

প্রাপ্য যেটা ছিল না, সেটি লাল কার্ড। ৭৮তম মিনিটে সুইজারল্যান্ডের রেমো ফ্রয়লারকে সরাসরি যে লাল কার্ড দেখান রেফারি, সেটি খুব সহজেই হলুদ কার্ড হতে পারত। হয়নি। তাই বলে ভাগ্যকে দোষারোপ করে নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি নয় সুইসরা। ১০ জনে মিলেই ম্যাচ টেনে নেয় অতিরিক্ত সময়ে।

সেখানে স্প্যানিশ আক্রমণের ঢেউ। মুহূর্তে মুহূর্তে। একের পর এক। কিন্তু টলানো যায় না সুইস ডিফেন্সকে। গোলরক্ষক ইয়ান সমার চোখ ধাঁধানো সেভ করেন; করতেই থাকেন। ডিফেন্ডাররা নিজেদের নিংড়ে দেন; দিতেই থাকেন। এমনকি সাসপেনশনের কারণে এ ম্যাচে খেলেন না যে গ্রানিত জাকা, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষে পুরো স্কোয়াডের মধ্যমণি হয়ে দলকে তাতিয়ে তোলা ভাষণ দিতে দেখা যায় তাকেও। কিন্তু শেষটা তো পরাজয়ের। তারপরও সুইসদের লড়াকু মানসিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের ফুটবলীয় স্পিরিটকে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে সবাই।

শুরু থেকে বল দখলে আধিপত্য করা স্পেন অষ্টম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলে এগিয়ে যায়। কোকের কর্নার তেমন ভালো হয়নি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জর্দি আলবার ভলি সুইস মিডফিল্ডার দেনিস জাকারিয়ার বাড়ানো পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক সমেরের।

১৭ মিনিটে কোকের ফ্রি-কিক উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ২৫ মিনিটে আতলেতিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডারের কর্নারে সেসার আসপিলিকুয়েতার হেড ঠেকান গোলরক্ষক। সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টায় ছিল সুইজারল্যান্ড। তবে প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের তেমন পরীক্ষা নিতে পারেনি তারা। এই সময়ে তাদের একটি শটও ছিল না লক্ষ্যে।

৬৮ মিনিটে সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। রেমো ফ্রয়লারের পাসে জেরদান সাচিরির শট পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। ৭৭ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় সুইসরা। মরেনোকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ফ্রয়লার। রেফারির সিদ্ধান্ত টিকে যায় ভিএআরেও। যদিও সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে যথেষ্ট।

শক্তিশালী দলের বিপক্ষে একজন কম নিয়েও নজরকাড়া ফুটবল খেলে সুইজারল্যান্ড। তাদের কার্যকর রক্ষণাত্মক কৌশল প্রশংসার দাবি রাখে। আর তার পেছনে চীনের প্রাচীর হয়ে ছিলেন সমের। স্প্যানিশদের ঠেকিয়ে রেখে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিলেও সেখানে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি সুইসরা। টাইব্রেকার দুঃখে বিদায় নিতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে।

পুরো ম্যাচে ৭২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৮টি শট নেয় স্পেন, যার ১০টি লক্ষ্যে। সেখানে গোল মাত্র একটি, তাও আবার প্রতিপক্ষের ভুলে। সেখানে সুইজারল্যান্ডের ৮টি শটের মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে। স্পেন কর্ণার আদায় করেছিল ১৩টি, সুইজারল্যান্ড ৯টি।

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আগামী মঙ্গলবার সেমি-ফাইনালে বেলজিয়াম অথবা ইতালির মুখোমুখি হবে স্পেন।