সিইসি’র প্রশ্ন- উনি কি ইন্তেকাল করেছেন?

logo

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার

mzamin

facebook sharing button

বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রক্তাক্তের ব্যাপারটি আপেক্ষিক। উনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমরা উনার রক্তক্ষরণ দেখিনি। আমরা শুনেছি হাতপাখার প্রার্থীকে পেছন থেকে একজন ঘুষি মেরেছে। ঘটনা জানার পর আমরা সঙ্গে সঙ্গে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ভোট কার্যক্রম ওই কারণে বাধাগ্রস্ত হয়নি। তারপরও পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বরিশালে একজন মেয়র প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে, তাহলে ভোটকে শান্তিপূর্ণ বলা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এসব কথা বলেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন- আমরা শুনেছি যে, হাতপাখার প্রার্থীকে খানিকটা আঘাত করা হয়েছে। সেটা উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। সেই উত্তেজনা হয়তো এখনো পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। আমাদের এখান থেকে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনোত্তর যেন কোনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করা না হয়। কারণ ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরেও অনেক সময় এরকম ঘটনা ঘটে থাকে।

এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। 

দুই সিটিতে কতো শতাংশ ভোট পড়েছে, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, খুলনায় যতটুকু তথ্য পেয়েছি এতে ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা। এটা চূড়ান্ত নয়, কম-বেশি হতে পারে। সঠিক তথ্য এখনই দিতে পারবো না। তবে আনুমানিক যেটা বললাম বরিশালেও ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর কমবেশিও হতে পারে। তিনি বলেন, আজ আপনারা সবকিছু দেখেছেন। আমার যে পর্যবেক্ষণ, তাতে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ভোট সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সুশৃঙ্খল আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.) বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের গায়ে যে হাত তুলেছে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। প্রথমে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে বলেছি। এরপর তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।

মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আকস্মিক ঘটনা ছাড়া সবকিছু সুন্দর। সাংবাদিকরাই লাইভে এমন বললো। দেখে ভালো লাগলো। আমরা আশ্বস্ত হলাম, যে এভরিথিং ইজ ফাইন। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কখনোই কাক্সিক্ষত ছিল না। কিন্তু একটা সিচ্যুয়েশনের মধ্যে হঠাৎ করে একজন প্রার্থীর গায়ে হাত তুলেছে বলে আমরা জেনেছি। যারা যারা এটার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে প্রথমে গ্রেপ্তার, তারপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ সবাইকে বলেছি। চরমোনাই পীরের সমর্থকরা ওই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বরিশাল সিটিতে ঢোকার চেষ্টা করছে, বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, এই ঘটনা ম্যানেজ করে প্রতিহত করা হয়েছে। এখন এমন কোনো ঘটনা ওখানে নেই।

এদিকে গতকাল ভোট চলাকালে খুলনার সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর ঢাকার নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকেই সেই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান। সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ইসি’র ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। সাংবাদিকরা যাতে বিধি মেনে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্য তাদের সহযোগিতা দিতে হবে।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বলেন, সাংবাদিকরা যেকোনো কেন্দ্রে যতজন খুশি প্রবেশ করবেন। সাংবাদিকরা কেন্দ্রে ঢোকার পরে আপনাকে অবহিত করবে যে ‘আমরা এসেছি’, এটা পারমিশন (অনুমতি) না। এরপর এই সাংবাদিকরা দুইজন করে একটি ভোট কক্ষে ঢুকতে পারবে। ভোটকক্ষে গিয়ে ভিডিও নিতে পারবে, দেখতে পারবে এবং বাইরে এসে লাইভ করতে পারবে।

পরে রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট কক্ষে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না, ছবি নিতে পারবে; দুজন করে প্রবেশ করতে পারবে। ভোটকক্ষের বাইরে এসে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে। বিষয়গুলো জানিয়ে দাও এবং প্রিজাইডিং অফিসাররা যাতে সাংবাদিকদের বাধা না দেয়।

ওদিকে নির্বাচন কমিশন মিলনায়তনে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে সকাল ৮টা থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দুই সিটি ও দুই পৌরসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারা ভোটকক্ষে কোনো ডাকাতের উপস্থিতি দেখতে পাননি। যদিও গণমাধ্যমে ভোট ডাকাতের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। ভোট ডাকাতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি কোনো কথা বলেননি।