সালমানকে ১০০, ছেলের ৫০ কোটি টাকা জরিমানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৪৯
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৫০

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আহমেদ সায়হান এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত ইসলামকে শেয়ারবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

একই সঙ্গে সালমানকে ১০০ কোটি এবং তার ছেলে সায়হানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল বুধবার বিএসইসির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়া অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত, আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেড় হাজার কোটি টাকার ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ এবং তিন হাজার কোটি টাকার ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টেবল অর রিডেমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক বন্ড’ ইস্যুতে জালিয়াতি ও অনিয়মের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টেবল অর রিডেমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক বন্ড’ পরিচিত ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে।

জানা গেছে, এ দুটি বন্ড ইস্যুতে জালিয়াতির তদন্তে গঠিত ‘পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’র প্রতিবেদনের আলোকে বিএসইসি শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নিয়েছে।

হত্যাসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি মামলা এবং শেয়ারবাজারে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনার মামলায় কারাগারে রয়েছেন সালমান এফ রহমান। জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে আরো বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, আইএফআইসি ব্যাংকসহ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ, একই ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এআরএম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশ শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্ড ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেক্সিমকোর তিন হাজার কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টেবল অর রিডেমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক বন্ড’-এর প্রস্তাব শিবলী রুবাইয়াতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত গ্রিন সুকুকটি দুই হাজার ২৫০ কোটি প্রাইভেট প্লেসমেন্ট (৭৫০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে এবং এক হাজার ৫০০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার ব্যতীত অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে)-এর মাধ্যমে এবং ৭৫০ কোটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইস্যুর জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সুকুকের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বর্ধিতকরণ এবং এর দুটি সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প-তিস্তা সোলার লিমিটেড এবং করতোয়া সোলার লিমিটেডে ব্যবহার করে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কথা ছিল। ওই সুকুকের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ছিল ১০০ টাকা এবং ন্যূনতম সাবসক্রিপশন মূল্য ছিল পাঁচ হাজার টাকা। উক্ত সুকুকের অরিজিনেটর হিসেবে বেক্সিমকো ইস্যুয়ার বা ট্রাস্ট, ট্রাস্ট্রি হিসেবে আইসিবি, ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস ও অগ্রণী ইক্যুয়িটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং নিরীক্ষক হিসেবে এম জে আবেদিন অ্যান্ড কোম্পানি চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড দায়িত্ব পালন করে।

এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিধিমালার কতিপয় বিধি থেকে বেক্সিমকোকে কমিশন কর্তৃক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। কিন্তু উক্ত অব্যাহতি প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার আগেই সুকুক ইস্যুর আবেদন কমিশন অনুমোদন এবং সম্মতিপত্র বা কনসেন্ট লেটার ইস্যু করে। পরবর্তীতে বিধিবহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত সুকুকের পাবলিক সাবসক্রিপশন পিরিয়ড ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট (বিধিমোতাবেক সর্বশেষ সাবসক্রিপশনের পিরিয়ড) থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here