সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে সম্পদ নিয়ে তদন্ত দাবি টিআইবির

সাইফুজ্জামান চৌধুরী

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে সম্পদ অর্জন ও তা নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করা প্রসঙ্গে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা অযৌক্তিক, অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিদেশে সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়া ও পরিমাণ যথাযথভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় উল্লেখ করেছে টিআইবি। এর আগে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, গত বছর ২৬ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে টিআইবি জানিয়েছিল, সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের নিজ নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানি থাকার প্রমাণ রয়েছে, যার প্রতিফলন হলফনামায় নেই। এই মন্ত্রী যে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী, তা পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে স্পষ্ট হয় এবং শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি তা স্বীকারও করেন।

নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে সম্পদ থাকার কথা গোপন করার বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী বলেছেন, হলফনামা পুরোপুরি বাংলাদেশের আয়কর রিটার্নের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। এতে বিদেশে সম্পদের তথ্য দেওয়ার আলাদা কোনো ছক নেই। বাড়তি তথ্য কেন দিতে যাবেন? বিদেশের সম্পদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেননি বলেও দাবি করেন সাবেক এই ভূমিমন্ত্রী।

ভূমিমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যাকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রথমত সাবেক ভূমিমন্ত্রী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। আর নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা বা অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হলফনামায় একজন প্রার্থীর সব সম্পদের বিবরণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন। বিদেশে সম্পদের জন্য আলাদা কলাম নেই বলে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে তিনি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আয়কর বিবরণীতে না থাকায় হলফনামায়ও বিদেশে সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি বলে যে দাবি করেছেন, যা নিতান্তই অবান্তর যুক্তি।

বিদেশে সম্পদের তথ্য গোপন করার ঘটনায় একটি নয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী বেশ কয়েকটি আইন ভেঙেছেন বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, দেশের মন্ত্রীসহ আট ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতন-ভাতাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ সাবেক ভূমিমন্ত্রী শপথ নিয়ে সাংবিধানিক এ বিধানকেও লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পদ গড়েননি দাবি করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তা তদন্তে যে কমিটি করার প্রস্তাব করেছেন, তা একেবারেই অবান্তর বলে দাবি করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। অর্থ পাচারসহ সাংবিধানিক ও আইনি বিধানের লঙ্ঘন কোনো তদন্ত কমিটির বিষয় নয়, বরং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক, এনবিআর, বিএফআইইউ, সিআইডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করবে বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।

নির্বাচনের আগে বিদেশে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে টিআইবির তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী যে প্রশ্ন তুলেছেন, তা–ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে টিআইবি। সংস্থাটি বলছে, এমন তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

Prothom alo