সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক নেতা আসিফ ‘নিখোঁজ’

Transparent Newspaper Clipping Clipart - Prothom Alo Logo ...

শাহাদৎ হোসেন 
বদর উদ্দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে আছেন বিএনপির দলছুট পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া), আবু আসিফ আহমেদ (মোটর গাড়ি), জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানি (লাঙ্গল) ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)। চারজনের মধ্যে আবু আসিফ আহমেদ জোরেশোরেই প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সর্বশেষ তিনিই ছিলেন সাত্তার ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। অবশেষে তিনিও নিষ্ক্রিয় হলেন। দুই দিন ধরে তাঁর পক্ষে কোনো প্রচারণা নেই।

এর আগে গত বুধবার নিখোঁজ হন আবু আসিফের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী ও তাঁর শ্যালক শাফায়াত সুমন (৩৮)। তিনি আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ছাড়া আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে থাকা মুসা মিয়া (৮০) নামের এক বৃদ্ধকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে পুরোনো মামলায় জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

মুসা মিয়ার বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবার বাবা কোনো দল করে না। পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে আমার বাবা আসিফের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। এ জন্য তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমরা তাঁর মুক্তি চাই।’

মোটর গাড়ি প্রতীকের সমর্থক সরাইল উপজেলা সদরের একাধিক বাসিন্দাকে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁদের দুজন প্রথম আলোকে বলেন, কলার ছড়া (সাত্তার) বাদে অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে গেলেই ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হয়রানি করে। ছবি তোলে, তালিকা করে। পুরোনো মামলার ভয়ভীতি দেখায়। এ জন্য তাঁরা এখন কোনো পক্ষ নিচ্ছেন না।

আবু আসিফ অভিযোগ করে আসছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। তবে এর মধ্যেও তিনি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আবু আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিছা প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে আমার স্বামী কোথায় আছে, জানি না। কে কোথায় নিয়ে গেছে, জানি না। আমি ভয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিলাম, গত রাতে (শনিবার) এসেছি। আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারছি না। বাসায় কোনো লোক আসতে পারে না। কয়েকজন লোক বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কাজের লোক এলেও ছবি তুলে রাখে, ভিডিও করে রাখে। এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা একজনকে জেতাবে এটি আগেই বললেই তো পারে। কেন আমাদের এত টাকা খরচ করাল? আমার ছোট ভাইকেও বুধবার থেকে পাচ্ছি না।’

আপনার স্বামী আত্মগোপনে আছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেরুন্নিছা বলেন, ‘তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার লোক নন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন, পরিবারের একটা ঐতিহ্য আছে। অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা বিজয়ী হতাম।’

নিখোঁজের বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন কি না কিংবা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না জানতে চাইলে মেহেরুন্নিছা বলেন, ‘আমি নিজেই পালিয়ে ছিলাম। আমিও ভয়ের মধ্যে আছি। আজকের মধ্যে খোঁজ না পেলে রাতেই মধ্যেই একটা কিছু করব।’

সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন। এর মধ্যে সরাইলের ৯টি ইউনিয়নে আছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯ ভোট এবং আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে রয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ২৪০ ভোট। সরাইল উপজেলায় ৮৪টি এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় ৪৮টি ভোটকেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রে ৮২৬টি ভোটকক্ষ আছে। এখানে উপনির্বাচন হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। জাতীয় নির্বাচনে এখানে এটিই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। তিনি এখন আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।