- আফফান উসামা
- ১৯ জুন ২০২২, ১৬:৪০
সাকিব আল হাসান। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব থেকে মুখরিত নাম। এই নামটার কেন এত দাম, তা আজও দেখে চলেছে ধরাদাম। এই বয়সেও কী প্রাণবন্ত, কী সাবলীল! প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপে যেন ছন্দ আছে মিশে। সব দুর্ভাবনা, দুশ্চিন্তা, খারাপ সময়, যেন পাড় করে দেন হেসে। মনে হয় যেন কিছুই হয়নি, আছেন মহা সুখের আবেশে।
কিন্তু সত্যিই কি ভালো আছেন তিনি, সত্যিই কি কিছু হয়নি? উত্তর খুঁজতে সময় লাগবে না, আপনাকে গুগলে যেতে হবে না৷ শুধু দেখুন ক্যারাবীয় দ্বিপপুঞ্জে দলের অবস্থাটা। প্রতিপক্ষ বদলে যায়, মাঠ বদলে যায়, ক্রিকেটার বদলে যায়, অধিনায়কত্বও হাত বদলায়; শুধু বদলায় না সাদা পোষাকের ক্রিকেটে সাদামাটা পারফরম্যান্স! সাদা পোষাকটা যেন বিবর্ণ, মলিন; ধূসর হয়ে আছে।
মুমিনুল হকের হাত থেকে অধিনায়কত্বটা এসেছে সাকিবের হাতে। সাকিব টেকনিক্যালি দেশের সেরা অধিনায়ক, তা সবাই বলে। তার ক্রিকেটীয় মেধা প্রশংসার দাবিদার নিঃসন্দেহে। কিন্তু সাকিব তো আর সুপারম্যান নয়, যে একাই সব কিছু বদলে দেবে। হয়তো আপনাকে বুদ্ধি দেবে, পথ দেখাবে, সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দেবে; তবে পথ তো আপনাকেই চলতে হবে।
দুই ইনিংসের ২০ উইকেটের ৬টাই ‘ডাক’ ০; দুই অংক স্পর্শ করতে পারেননি আরো পাঁচজন। ৩০ ছু্ঁয়েছে মাত্র চারবার, অর্ধশতক তিনটি। যার দুটিই আবার সাকিবের হাতে। শেষ পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নেমেছেন ৯৯ জন ব্যাটসম্যান। যার মাঝে ৩৪ জনই কোন রান করতে পারেননি। তাদের মাঝে ডাক (০) মেরেছেন ২৭ জন। আবার ১০ রানের কমে আউট হয়েছেন আরো ২৬ জন। আর ৩০ স্পর্শ করতে পারেননি আরো ১৯ জন ব্যাটার। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৯৯ ব্যাটারের মাঝে ৭৯ জনই ৩০ রানের গণ্ডি পাড়ি দিতে পারেননি।
দলের শক্তির জায়গা নাম্বার থ্রি পজিশন। সেখানে ধারাবাহিক ব্যর্থ নাজমুল হাসান শান্ত। শেষ ১৭ ইনিংসে তাঁর রান— ০, ১৭, ২, ৮, ১, ৭, ৩৩, ২৬, ৩৮, ২৯, ৪, ১৭, ৬৪, ৬, ০। আর বাংলাদেশ দলের চিরাতায়িত সেরা ব্যাটিং পজিশন যেন ঘোর আধাঁরে ঘেরা এখন। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে শেষ ১৭ ইনিংসে মুমিনুলের রান— ০, ৪, ০, ৯, ২, ৫, ৬, ০, ২, ০, ৩৭, ৮৮, ১৩, ১, ৭, ৬, ০। ভাবা যায়?
দলের অবস্থা যখন এমন বিদঘুটে, চোখ কপাল উঠবে আরো একটি তথ্যতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ দল ক্যাচ মিস করেছে হাফ ডজন; ছয়টি। ২০২২ সালে শুধু টেস্টেই টাইগারদের হাতে ক্যাচ এসেছে ৬৯ বার, যার মাঝে ২৪টিই হাত ফসকেছে তাদের। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবস্থা আরো ভয়াবহ, এই ফরম্যাটে হাত ফসকেছে ৩৯ টি ক্যাচ।
এই যখন দলের অবস্থা। তখন প্রাপ্তি শুধুই এক সাকিব আল হাসানে। দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশ হাসে যার অর্জনে। দেড় শ’ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ১০ জন অধিনায়কের ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট রয়েছে; সর্বশেষ নামটা সাকিব আল হাসান। আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোটে চার অধিনায়কের ৩০০০ হাজার রান ও ১৫০ উইকেট রয়েছে; তার মাঝেও সর্বশেষ নামটা সাকিব আল হাসান। এতো প্রাপ্তির ভিড়ে একটা অপ্রাপ্তি আছে, আক্ষেপ আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কমপক্ষে ১০০ বার পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেলেছেন এমন ৪৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সবচেয়ে কম ১৪ সেঞ্চুরি সাকিবের৷