সাকিবকে নিয়ে আসা হয়, দলে যোগদানে উৎসাহ দিইনি

সাকিবকে নিয়ে আসা  হয়, দলে যোগদানে উৎসাহ দিইনি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে নতুন দল গঠনের প্রস্তাব পেয়ে তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে তিনি সাকিবকে নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে উৎসাহ দেননি।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন। কিংস পার্টি পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগদান ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মেজর হাফিজ বলেন, বিএনএম সৃষ্টিতে তাঁর কোনো উদ্যোগ ছিল না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেও কখনও যাননি। তাঁর বাসায় বিএনএমের কোনো সভাও হয়নি। তবে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তাঁর বাসায় আসতেন। তারা তাঁকে দলে যোগ দেওয়ার জন্য বলতেন।

তিনি বলেন, ‘সাকিব আল হাসানকে বিএনএমের সাধারণ সম্পাদক তাঁর কাছে নিয়ে আসেন সাকিবকে উৎসাহিত করার জন্য যে, মেজর হাফিজ থাকবেন দলে। কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সরকারের আনুকূল্যে এই দল সৃষ্টি করেছেন, যাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারাই সাকিবকে নিয়ে এসেছেন তাঁকে আশ্বস্ত করার জন্য। তিনি তো আশ্বস্ত মোটেও হননি। আমি বিএনএমে যোগদান না করায় তিনিও তাঁর পথ বেছে নিয়েছেন। যেখান থেকে সহজে জেতা যাবে, যে নির্বাচনে কোনো প্রতিপক্ষ থাকবে না, সম্পূর্ণ পাতানো এই নির্বাচনে তিনি এমপি হয়েছেন, এটি তাঁর বিষয়।’

বিএনএমের অফিসও চেনেন না দাবি করে হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচনের দুই মাস আগেই বলেছি, আমি বিএনপি ছাড়ব না, কোনো পাতানো নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনের এক মাস আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলাম। এখন এমনভাবে পত্রিকাগুলো সংবাদ প্রচার করেছে যে তারা বিরাট একটা রহস্যের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। অথচ এখানে গোপন কিছু নেই। আমি সব সময় বলে এসেছি– মাই লাইফ ইজ এ ওপেন বুক। লজ্জিত হওয়ার কোনো কাজ করি না, গোপন কোনো কাজ করি না।’

হাফিজ উদ্দিন আহমদ প্রশ্ন রাখেন, ‘কী করেছি আমি? বিএনএমে যোগ দিয়েছি? দল ভেঙেছি?’ তিনি বলেন, এটা তো পরিষ্কার যে তাঁকে নতুন দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। এখন অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো দুর্নীতিতে কখনও জড়াননি। এখন তাঁর একটি ছবি নিয়ে চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি অবমানাকর, মানহানিকর। এটা বিভ্রান্তিকর সংবাদ। এটি তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য। সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম লুকিয়ে রেখে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিএনএম সৃষ্টির কাল্পনিক কাহিনি তৈরি করেছে।

বিএনএম নিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। রাজনীতি অত্যন্ত নোংরা। নির্বাচনের সময় নানা কলাকৌশল হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকে, তারা চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছু লোক ভাগিয়ে এনে নিজেদের দলে বা অন্য কোনো দলে সন্নিবেশ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা নতুন দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাদের বলেছি, রাজনীতিতে কোনো শর্টকার্ট নেই।’

গত নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে থেকেই সরকারি দল করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগাযোগ করা শুরু করেন জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘তারা দেখেছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার মাঝেমধ্যে দ্বিমত থাকে। তারা ধরে রেখেছিল যে বিএনপি ত্যাগ করার জন্য আমি উন্মুখ। তাদের বলেছিলাম, আমার পক্ষে দল ত্যাগ করা সম্ভব নয়। ৩২ বছর দল করার পর এটি ছাড়া এত সহজ নাকি। কেন ছাড়ব?’
বিএনএমের নিবন্ধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ বলেন, তাঁর কথায় কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে– এটি বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কারা এসব করে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে কাউন্সিল হয় না, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে কখনও কোনো অসৌজন্যমূলক কথা বলেননি।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকা, রাজনীতি, মন্ত্রিত্ব, কারাদণ্ড ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন দুইবারের মন্ত্রী ও ছয়বারের সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে যশোর ক্যান্টনমেন্টে তিনিই বিদ্রোহ করেছেন। আট ঘণ্টা যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছেন। ওই অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন। ৮০ বছর বয়স্ক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে (হাফিজ) কারাগারে পাঠানো হলো মার্চ মাসে, মিথ্যা মামলায়। এটি তাঁকে ব্যথিত করেছে। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জনতা ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছেন। মামলাটি পুলিশের। সাক্ষীও পুলিশ। ৩২ বছর আগে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় অনেক লুটেরাকে প্রতিরোধ করার কথাও বলেন এই বিএনপি নেতা।

samakal