ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ফাঁসির রায় কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গোপন প্রতিবেদন দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ওই প্রতিবেদনে সাঈদীর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াসংক্রান্ত এক নির্দেশনাতে বলা হয়েছিল “দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যদি ‘দুনিয়া‘ থেকে না সরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে যেকোনো সময় তার (শেখ হাসিনা) সরকারকেই ফেলে দেয়া হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সাঈদীকে মন থেকে ভালোবাসেন এবং দলমত নির্বিশেষে তার রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থনও।”
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ এর ১/৩ নম্বর (হাসপাতালসংলগ্ন) সেলে দীর্ঘদিন আটক থাকার সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তার জেল পার্টনার, ব্যক্তিগত খেদমতকারী (খুনের মামলার আসামি মাসুদ) ও বিভিন্ন সময় তার সেবায় নিয়োজিতদের কাছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর দেয়া গোপন প্রতিবেদন এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানা মন্তব্যের সময় তিনি এ কথা বলেছেন। এ সময় ফাঁসির আসামি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার (সাঈদী) কথায় সায় দিয়ে শুধু বলেছিলেন, ঠিক বলেছেন ভাইজান, ওদের (ইন্ডিয়া) চালে পড়েই শেখ হাসিনা ফাঁসির রায় দেয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরের দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ থেকে অনেকটা সুস্থ অবস্থায় গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে কারাগারের ডাক্তার সহকারী সার্জন ডাক্তার খালিদ মাহমুদ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষের কথা মোতাবেক হাসপাতালে নেয়ার পর তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। পরে ডাক্তাররা তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা বললে ওই রাতেই তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন রাতে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার ভক্ত হাসপাতালের সামনে ভিড় জমান এবং সুস্থ সাঈদীকে পরিকল্পিতভাবে ইঞ্জেকশন পুশ করে ইমরান এইচ সরকারের অনুসারী ডাক্তার মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করতে থাকেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। যদিও তার চিকিৎসায় নিয়োজিত প্রফেসর ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, সাঈদী সাহেবের হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার এ বক্তব্যকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি সাঈদী ভক্তরা। পরে ঢাকা ও তার গ্রামে একাধিক জানাজা নামাজের পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
যদিও এ ঘটনার দুই মাস পর ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসউদ সাঈদী সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, কারাগার থেকে সুস্থ সাঈদীকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল হাসিনা সরকার।
কারাগারে ১/৩ নম্বর সেলে যেভাবে কেটেছে সময় : কাশিমপুর কারাগার সংশ্লিষ্টরা নয়া দিগন্তের কাছে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেছেন, মারা যাওয়ার আগে বেশির ভাগ সময় তাকে কাটাতে হয়েছিল কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১-এর ১/৩ নম্বর সেলের ৩ নম্বর কক্ষে। ওই রুমের পাশেই থাকতেন ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আর ১ নম্বর কক্ষে থাকতেন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি উইং কমান্ডার (অব:) সাহাবুদ্দিন আহম্মদ। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর কারা জীবনের কিছু স্মৃতিচারণ করে খেদমতকারীদের একজন সম্প্রতি নয়া দিগন্তকে বলেছেন, আমার দেখা মতে হুজুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন, কুরআন তিলাওয়াত করতেন। প্রতিদিন মধ্যরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। জায়নামাজে বসে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন আর চোখের পানি ফেলতেন। ফজরের নামাজ আদায় করেই তিনি ঘুমাতে যেতেন। কারা কর্তৃপক্ষ তার ওপর কঠোর নজরদারি করত জানিয়ে তিনি বলেন, বাইরের কোনো খাবার তাকে খেতে দেয়া হতো না। কারাগারের দেয়া স্বাভাবিক খাবার খেতেন। আবার কারা ক্যন্টিন থেকেও খাবার কিনে খেতেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি অনেক কথাই শেয়ার করতেন জানিয়ে ওই খেদমতকারী নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি বলতেন, কুরআনের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে ৫৫টি দেশে গিয়ে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। কারাগারে বসেই বই লেখার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে বাইরে থেকে আমি দুই রিম সাদা কাগজ ও কলম কিনে দিয়েছিলাম। এর পরই ‘নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে’ শিরোনামে ৫৫২ পৃষ্ঠার একটি বই লেখার কাজ শেষ করেছিলেন তিনি। দুই বছরের মতো লেগেছিল তার ওই বইটি লিখতে। বর্তমানে তার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা বইটি বাজারে আছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে অভিযুক্ত করে প্রথমে তাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন। পরে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়ে তিনি কারাগারে থাকাবস্থায় কী ধরনের মন্তব্য করতেন- জানতে চাইলে ওই খেদমতকারী অকপটে বলেন, আমার সাথে হুজুরের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক ও যুদ্ধাপরাধ মামলা এবং ইন্ডিয়ার কানেকশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাকী অনেক সময় কথা হতো। তিনি বলতেন, আমার জনপ্রিয়তা দেখে ইন্ডিয়া যেমন ভয় পাইত, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভয় পাইত। আমি (সাঈদী) জানতে পেরেছি, আমার বিষয়ে ইন্ডিয়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ শেখ হাসিনার কাছে গোপন প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘উনারে যদি দুনিয়া থেকে না সরায়, অথবা জেলে বন্দী না করে তাহলে যেকোনো সময় হাসিনা সরকারকেই উৎখাত করে দিতে পারে।’ কারণ এ দেশে ৮০ শতাংশ জনগণ তাকে ভালোবাসে। হুজুর এ-ও বলেছিলেন, আমার যে এত জনসমর্থন এ জন্যই ইন্ডিয়ার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মূলত ইন্ডিয়ার চালে আমাকে মানবতাবিরোধী মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার শরীরে একটু কাদাও লাগেনি। শুধু শুধু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। হাসিনার লোকজনরা যাদেরকে দিয়ে সাক্ষী দিয়েছিল, তার সবই ছিল ভুয়া, বানোয়াট। হাসিনার বানানো গোলামদের টাকা-পয়সা দিয়্যা এসব করানো হইছে। একদিন হুজুর আমার কাছে আবদার করেন, আমার কৈ মাছের ভাজি আর টাকি মাছের ভর্তা খাইতে মন চাইছে। আমি হুজুরকে বলেছিলাম, আমার যতই ঝুঁকি হউক আমি আপনাকে বাসা থেকে এই দুটো জিনিস রান্না করে এনে খাবার ব্যবস্থা করবই। পরে বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রীকে বাজারে পাঠিয়ে বাজার থেকে কৈ মাছ আর টাকি মাছ কিনে আনি। রান্না করে দুটো পলিথিনে ভরে দুই পকেটে নিয়ে রিস্কের ওপর রাতে তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি।
তার মনের আশা পূরণ করতে পেরেছিলাম। এতেই আমি আর আমার স্ত্রী শান্তি পাইছি। সেবক বলেন, তিনি কষ্ট পেতেন পরিবারের সাথে দেখাসাক্ষাৎ বিলম্বে হওয়ায়। মাসে একবার দেখা হলেও সময় পেতেন মাত্র ২০-২৫ মিনিট। যার কারণে অনেক কথাই বলতে পারতেন না। বিশেষ করে কষ্ট পেতেন তার বড় ছেলে মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর কোর্টে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে। তার কথা সবসময় তিনি মনে করতেন এবং তার লেখা বইয়ের মধ্যেও তিনি লিখে গেছেন তার (রাফীক বিন সাঈদীর) কথা। কারাগারে বই লিখতে চাইলে আমি তাকে দুই রিম কাগজ ও কলম বাইরে থেকে কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করি। তখনকার একজন ডিআইজি স্যার নেপথ্যে থেকে আমাকে কিছুটা ছাড় দেয়ায় এটি করা সম্ভব হয়েছে। দুই বছরের মতো সময় লেগেছিল তার বই লেখার কাজটি শেষ করতে। আবার অনেক সময় হুজুরকে হ্যালো (মোবাইল) বলার কাজেও আমরা সহযোগিতা করেছিলাম। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি শুনেছি কারাগার থেকে যে দিন তাকে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, তার আগে ১/৩ নম্বর রুমে গিয়ে জেলার তরিকুল ও জেল সুপার শাহজাহান তার কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন। এমন কথা পাশে থাকা বন্দীরা বলছেন। এটির সত্য-মিথ্যা আমি জানি না। তবে কারাগারে হুজুরের সাথে একেক অফিসার একেক ধরনের আচরণ করতেন। এখন তারা আসলেই হাসপাতালে নেয়ার আগে সাঈদী হুজুরের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছিলেন কি না বা নিয়ে থাকলে সেখানে কী লিখে নিয়েছিলেন, তা জেলার ও জেল সুপার ভালো বলতে পারবেন! আর বলতে পারবেন তার পাশের সেলে থাকা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি সাহাবুদ্দিন (লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সম্প্রতি কারামুক্ত) ও হাসপাতালে থাকা পুরানো বন্দীরাই। হুজুরকে আমি প্রতিদিন হাত ধরে এক ঘণ্টা হাঁটাতাম; কারণ তিনি ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগী।
হার্ট অ্যাটাক নাকি পরিকল্পিত হত্যা : ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আসলেই কি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, নাকি তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ থেকে বের করে পরিকল্পিতভাবে ওই সময়ের গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ডাক্তার ইমরান এইচ সরকারের অনুসারী দলের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এস এম মোস্তফা জামানের দেয়া ‘ভুল’ ইঞ্জেকশন পুশের পরই তার মৃত্যু হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো। ওই সময় অবশ্য এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল। সাধারণ মানুষ ও সাঈদী ভক্তরা তখনো এবং এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না- দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো দাবি করছেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে ইঞ্জেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে। যেটাকে এক কথায় ‘জেল কিলিং’ হিসেবে দাবি করছেন তারা। হাসপাতাল ও কারাগার সংশ্লিষ্টরা ধারণা করে বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দিন (১৫ আগস্ট) হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন, সেই দিনটিকেই তার মৃত্যুর দিন হিসেবে কী বেছে নেয়া হয়েছিল? অভিযোগ রয়েছে, পিজি হাসপাতালের যে বেডে তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নেয়া হয়েছিল, সেই বেডের ওপর দু’টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। আর চিকিৎসার আগে হাসপাতালের রোগীরাই একপর্যায়ে তাদের ওষুুধপত্র দিয়েই ডাক্তারকে চিকিৎসা শুরু করতে বলেছিলেন।
কারাগার থেকে তাজউদ্দীন হাসপাতালে যেভাবে পাঠানো হয়েছিল সাঈদীকে : কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এর জেলার তরিকুল ইসলামের সাথে গত সপ্তাহে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ওই দিন যে কারারক্ষী কারাগার থেকে হুইল চেয়ারে করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিয়েছিলেন সেই কারারক্ষীর সাথে কথা বলার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। পরে তিনি তার সেই কারারক্ষী (বর্তমানে জেলারের বডিগার্ড) রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনটি তার কাছে দেন।
কারারক্ষী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, তখন আমি কারাগারে সহকারী সার্জন ডাক্তার খালিদ মাহমুদ স্যারের সাথে ডিউটি করতাম। ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে যখন স্যারের সাথে আডটডোরে রোগী দেখে ইনডোরে আসি, তখন সাঈদী হুজুরের সেবক মাসুদ আমাকে জানান, ডাক্তার স্যারকে সাঈদী হুজুরের সাথে দেখা করতে বইলেন। এরপর রোগী দেখে ডাক্তার স্যার হুজুরের কাছে চলে যান। হুজুর ডাক্তারের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি খাদ্য খাইছি। খাওয়ার পর কেমন লাগছে ডাক্তার জানতে চাইলে তখন তিনি বলেন, শুইতে পারলে তার ভালো লাগবে। তখন ডাক্তার স্যার ইসিজি মেশিন নিয়ে আসেন। করানো হয় ইসিজি। আগে থেকে ইসিজি রিপোর্ট ব্যতিক্রম পায়। এরপর সিভিল সার্জনকে জেল সুপার ও জেলার বেলা ২টার দিকে জানান। ডাক্তার তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বলেন। কারারক্ষী রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, সাঈদী হুজুর কারাগারে যখন ছিলেন সেই সময় অতটা অসুস্থ ছিলেন না। অনেকটা স্বাভাবিক ছিলেন। তবে তার ভেতরে ভেতরে কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল! আমি হুইল চেয়ারে তুলে তাকে গেটের বাইরে নিয়ে যাই। পুলিশ স্কট পাওয়ার পর দু-তিনজন মিলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেই। তার পাঁচটি রিং পরানো আছে। যতটুকু জানি তাজউদ্দীন মেডিক্যালে নেয়া হলে হৃদরোগের ডাক্তার কায়সারুল ইসলাম তাকে (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) চিকিৎসা দেন। সেখানকার ডাক্তার তাকে দেখে তাৎক্ষণিক তাজউদ্দীন থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা বলেন। হুজুরের যে সেবক ছিলেন তার নাম মাসুদ। ছাত্রহত্যা মামলার আসামি মাসুদ গত দুই মাস আগেই আমাদের কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে গেছেন। তার মোবাইল নম্বর নাই।
কারাগারের সেল থেকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদকে যখন তাজউদ্দীন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল, তার কাছ থেকে নাকি সাদা কাগজে জেলার ও সুপার শাহজাহান সই নিয়েছেন। এমন অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১-এর জেলার তরিকুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত জেল সুপারেরও দায়িত্বে) নয়া দিগন্তের এমন প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে এই প্রথম কেউ করলেন। তার (সাঈদী) কাছ থেকে কেন, কোন বন্দীর কাছ থেকেই বাইরে পাঠানোর আগে সাদা কাগজে সই নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। এগুলো সব মিথ্যা বানোয়াট কথা। বর্তমানে জেল সুপার শাহজাহান এলপিআরে আছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতাল থেকে ওই দিন বিকেলের দিকে পাঠানো হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে নেয়ার পর তিনি হুইল চেয়ার থেকে নিজেই নামেন। এ সময় তিনি সবাইকে সালামও দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় পাওয়া গেছে। এরপর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রবেশ করেন। হাসপাতালে তাকে যে বেডে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছিল, সেখানেই রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান। এ সময় তাকে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মেসকাত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে প্রফেসর ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামান ও তার কর্মীরা চিকিৎসা দেন এবং মৃত্যুর পর ডাক্তার মোস্তফা জামান সাংবাদিকদের সাথে সার্বিক বিষয়ে কথাও বলেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার হাজার হাজার ভক্ত হাসপাতালের সামনে ভিড় জমান। অভিযোগ আছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হাসপাতালে নেয়ার পর একটি ‘ইঞ্জেকশন পুশ’ করা হয়েছিল! এর পরই তার শরীর নিথর হয়ে পড়ে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ডাক্তার মোস্তফা জামানের ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন তার ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পরপরই ডাক্তার মোস্তফা জামান গা ঢাকা দেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামান যা বলছেন : গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসক কার্ডিওলজির ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামানের সাথে নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। ডাক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি তো দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চিকিৎসা করেছিলেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না, না, না। আমি চিকিৎসক ছিলাম না। চিকিৎসা করিনি। তার চিকিৎসক ছিলেন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মেসকাত চৌধুরী। আপনি চিকিৎসা করেছেন এমন ভিডিও আছে জানালে তখন তিনি বলেন, আমার চেয়ারম্যান স্যারের সাথে কথা বলেন। এরপর তিনি মোবাইল লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কারাগারের সহকারী সার্জন খালিদ মাহমুদ যা বলছেন :কাশিমপুর কারাগার পার্ট-১-এর সহকারী সার্জন ডাক্তার খাদিল মাহমুদ কারাগারের সেলে গিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন এবং তার পরামর্শেই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। সে দিন তিনি কী ধরনের চিকিৎসা দিয়েছিলেন সেই ব্যাপারে তিনি নয়া দিগন্তের কাছে খোলামেলা কথা বলেন।
গতকাল শনিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে ডাক্তার খালিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি রোগী দেখে যখন ফিরছিলাম তখন তার সেবক মাসুম বিল্লাহ দুপুরের দিকে আমাকে বলেছে, হুজুর বলছে আপনাকে দেখা করতে। তখন সময় বেলা দেড়টা কি ২টা বাজে। আমি যাওয়ার পর হুজুর বললেন, ফজরের নামাজ পড়ার সময় বুকে ব্যথা অনুভব করেছেন। তবে সেটি তীব্র ছিল না। তাই কাউকে বলেননি। আমি যখন দেখছিলাম, তখন ব্যথা আসছে-যাচ্ছে। রিং পরা ছিল আগে থেকেই। আমি তার প্রেসার মাপলাম। পালস দেখলাম। এএমআই (একিউড মাইও কার্ডিয়াল ইনফাকশন, সংক্ষেপে হার্ট অ্যাটাক সেভটাল) লোডিং ডোজ ও কিছু ওষুধ দিলাম। সাথে সাথে বিষয়টি আমার সিভিল সার্জন (কার্ডিওলজিস্ট) খায়রুজ্জামান স্যার এবং কারা কর্তৃপক্ষকে জানালাম। খায়রুজ্জামান স্যার কালিয়াকৈর উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের কার্ডিওলজির ডাক্তার কাউছারকে দেখতে পাঠান। আমরা দু’জন দেখার পর তাকে শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলি। সেখানে যাওয়ার সময় তিনি হেটে গেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হার্ট অ্যাটাকের পেসেন্ট হেঁটে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাকে হুইল চেয়ারে তুলে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার ডাক্তার দেখার পর ঢাকায় রেফার করলে পরে তিনি সেখানে মারা যান। তবে মৃত্যুর সময়টা আমি মনে করতে পারছি না।
কারাগারে লেখা বই নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্য : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্য শিরোনামে যে বইটি লিখে গেছেন সেই বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীকে। তিনি তার উদ্দেশ লিখেন, আমার কলিজার টুকরা রাফীক বিন সাঈদীর রূহের মাগফিরাত কামনায় হে মহান আল্লাহ! তুমি আমার নয়নের মণি প্রিয় সন্তানকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানিয়ে নিয়ো। বইটির প্রকাশনা ছিলেন আলহাজ শামীম সাঈদী। বইটিতে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ তিনি বলতে চেয়েছেন, সম্মান মর্যাদার সুউচ্চ সোপান থেকে নন্দিত এ জাতির পতন ঘটল তখনই কুরআন প্রদর্শিত সহজ সরল পথ বর্জন করে তারা যখন মানব রচিত বাঁকা পথ অবলম্বন করে নিন্দিত পথের যাত্রী হলো। নন্দিত এ জাতি যাত্রী ছিল পবিত্র মক্কা-মদিনার, কিন্তু এরা আরোহী হলো দিল্লি, পিকিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনের গাড়ির। এ জাতির হতভাগ্য নেতৃবৃন্দ ইসলাম সম্পর্কে অবলীলাক্রমে বলা শুরু করল ‘সাম্প্রদায়িক, পশ্চাৎপদ, সেকেলে মৌলবাদ ও মধ্যযুগীয় এবং এসব কারণে আধুনিক ডিজিটাল যুগে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম চলতে পারে না। ইসলাম থাকবে মসজিদ, মাদরাসা, খানকা ও মাজারে। এর বাইরে ইসলামের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ’। মুসলিম নামধারী অর্বাচীন নেতৃবৃন্দ ইসলামের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কাফির, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদদের আবিষ্কৃত ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণিত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, সমাজতন্ত্র, পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্র, সাম্যবাদ ও সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদকে আঁকড়ে ধরল। পরিণতিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নন্দিত জাতি ঘৃণা ও লাঞ্ছনার অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হলো বলে তার বইয়ের একটি অংশে লিখে গেছেন তিনি।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট রোববার তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ এ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন ১৫ আগস্ট সকালে পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশনে তাকে জানাজা নামাজের পর দাফন করা হয়।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামী চিন্তাবিদ, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে সাহায্য করার অভিযোগে তাকে ২০১৩ সালে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবার এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার বিরূদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজের অপরাধের ২০ দফা অভিযোগ আনা হয়। আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রদত্ত বিচারের রায়ে আটটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দু’টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এই রায়ের নিন্দা করে এবং অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভুল পরিচয়ের মামলা বলে আখ্যায়িত করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার বিচারের রায়ের সমালোচনা করেছিল। তার ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করেছিল। এই রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিলের রায় পর্যবেক্ষণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির সাজা কমিয়ে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে।
প্রারম্ভিক জীবন : দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর বালিপাড়া ইউনিয়নের সাঈদখালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইউসুফ শিকদার ও মা গুলনাহার বেগম। তার বাবা গ্রামের আলেম ও গৃহস্থ ছিলেন। তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদরাসায় তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি ১৯৬২ সালে ছারছীনা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং পরে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় স্থানান্তরিত হন। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পর সাঈদী স্থানীয় গ্রামে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মুসলমান আলেম বা মাওলানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারে তাকে ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তার ছেলে মাসউদ সাঈদীর মতে, তিনি ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে ছিলেন না এবং ১৯৬৯ সাল থেকে তিনি যশোরে বসবাস করছিলেন। সাঈদী বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাও আয়ত্ত করেছিলেন।
পারিবারিক জীবন : দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর স্ত্রীর নাম শেখ সালেহা বেগম। এই দম্পতির চার সন্তান হলো রাফীক বিন সাঈদী (২০১২ সালে হৃদরোগে মারা যান), শামীম সাঈদী, মাসউদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।
রাজনৈতিক জীবন : দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন ১৯৭৯ সালে। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন ও ১৯৮৯ সালে মজলিসে শূরা সদস্য হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য হন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব¡ পালন করেন। ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে সাঈদী দেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্য দানের ক্ষমতার জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
গ্রেফতার : ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে- মর্মে অভিযোগে ২০১০ সালের ২১ মার্চ দায়েরকৃত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২৯ জুন তারিখে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতার করে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।