সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে কোমলমতি শিশুদের দূরে সরিয়ে রাখার কাজ করছে সরকার

স্কুলের পাঠ্য বইয়ে হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকায় সেমিনার

 আমার দেশ
১৪ জানুয়ারী ২০২৩

'শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান

‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান

নিজস্ব প্রতিনিধি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, একটি দেশের সত্যিকারের পরিচয় হলো সে দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি। আজকে সেই সত্যিকারের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে আমাদের কোমলমতি বালক-বালিকাদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে। আমাদের উচিত এখন জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

শনিবার (১৪ই জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রফেশনালস মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন তাজমেরী ইসলাম, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহসহ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী নেতারা।

শিক্ষা ব্যবস্থায় হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সেমিনারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকার দেশ শাসন করে না। তারা বসে বসে ইতিহাস লেখে। কিন্তু সেটা সত্যিকারের ইতিহাস নয়, সেটা কাল্পনিক ইতিহাস।

তিনি বলেন, আজকের যে পাঠ্য বইয়ের সমস্যা এটি আসলে পাঠ্য বইয়ের সমস্যা না। পাঠ্য বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় যে ছবি রয়েছে সেটি বাংলাদেশের কোথাও কি দেখা যায়? যদি না দেখা যায় তবে এটি আমাদের কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কিভাবে গেল?

তিনি আরো বলেন, একটি দেশের পরিচয় শুধু উন্নয়ন দিয়ে হয় না। অথবা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি দিয়েও একটি দেশের পরিচয় হয় না। বাংলাদেশের একটি শিশু যখন স্কুল-কলেজে যাবে, তখন তাকে মুক্তচিন্তা করার সুযোগ করে দিতে হবে। তার সামনে সব তথ্য তুলে ধরতে হবে। এর ফলে সে যখন বড় হবে, তখন সে নিজেই বুঝতে পারবে কোনটা করা ঠিক হবে আর কোনটা করা বেঠিক হবে।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আমরা কেন এখন থেকে তাকে বলে দেব যে সে কী করবে? সরকার এখন একটা ছোট শিশুর মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার কাজ করছে।

সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য কমিটির প্রস্তাব করে মঈন খান বলেন, আমরা কি পারি না এখানে ১০-১৫ জনের একটি কমিটি করে সঠিক ইতিহাস লিখে সেটি গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে। আমরা চাইলেই এটি করতে পারি।

তিনি বলেন, আমি চাই আমরা তিন-চার মাসের মধ্যে সঠিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি আমাদের ছেলেমেয়েদের সামনে তুলে ধরতে, আর সেটি আমরা চাইলেই পারব। আমরা যদি শিক্ষার আদর্শ বিশ্বাস করি, মানবতার আদর্শ বিশ্বাস করি, তাহলে আসুন আমরা সেই পথে অগ্রসর হই। হিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে সামনে অগ্রসর হই।

আলোচনাসভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, যখন বইগুলো ছাপানো হয় তখন আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। প্রতিবাদ এমন একটি জিনিস, সেটা সব সময় করে যেতেই হবে। প্রতিবাদ করলে সমাধান হয়, আবার সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিবাদকে চালিয়ে যেতে হয়।

তিনি বলেন, যারা স্বৈরাচারী, যারা ক্ষমতালিপ্সু, যারা মানুষের অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে তারা কিন্তু বারবার পৃথিবীর ইতিহাসে আত্মমোচন করেছে। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু চিরস্থায়ী হয়নি। কেউ হয়তো ৫ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর বা ১০০ বছর থেকেছে। কিন্তু একসময় না একসময় তাদেরকে বিতাড়িত হতেই হয়েছে। কাজেই সে কথাগুলো মনে রেখেই আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিবাদ আমাদের করেই যেতে হবে।

আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম।