আমিনুল ইসলাম মুকুল, লন্ডন, যুক্তরাজ্যঃ
মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগতে কালের পরিক্রমায় কতকিছুর যে বিবর্তন হয় তার ইয়ত্তা নেই।হাল আমলে আমরা সাংবাদিকদের মধ্যেও বিবর্তন দেখতে পাই। আর সাংবাদিক নির্যাতন একটা পুরনো কৌশল।এক সময় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লেখার পাশাপাশি পত্রিকা সম্পাদনায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তার প্রাত্যহিক ‘নবযুগ’ পত্রিকায় কৃষিজীবি ও শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরতেন। পরাধীন দেশের জনগণকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জ্বীবিত করে কবিতা,গল্প, প্রবন্ধ রচনা করে সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার প্রতিবাদী লেখনীর জন্য সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকার বিরোধী লেখা প্রকাশ করার জন্য সরকার ১৯২১ সালের জানুয়ারী মাসে ‘নবযুগ’ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ১৯২২ সালের নভেম্বর মাসে তার ‘ধূমকেতু’ বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। সেই সাথে কবিকে ১(এক) বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।জেলখানায় নির্যাতন ও খারাপ আচরণ করা হয় তার সাথে। এজন্য তিনি ৪০ দিনের অনশন করেন। অবশেষে ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজী নজরুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্তি পান। স্বাধীন বাংলাদেশে ‘বাকশাল’ কায়েমের পর গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন সরকার তাদের নিয়ন্ত্রিত ৪(চার) টি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। একই বছর নভেম্বরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পর জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৮ সালে অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ জুনকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।তবে বিভিন্ন সময়ে সৎ ও সাহসী সাংবাদিকদের উপর হুমকি ও নির্যাতন থেমে থাকেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের নতুন ভার্সন পরিলক্ষিত হচ্ছে।স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে অন্যের লেখার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়, কথা বলার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়, চলাফেরার স্বাধীনতা হরণ করা হয়।রাস্তায় প্রতিবাদ করতে গেলে গুলি করা হয়, বাড়ি থেকে গুম করা হয়। মিডিয়ায় সরকারের অনৈতিক কাজের সমালোচনা করতে গেলে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল করা হয়, টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করা হয়। বাংলাদেশে ধর্মবিদ্বেষী শক্তির উত্থান ঠেকাতে ২০১৩ সালের ০৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের খবর সরাসরি সম্প্রচারের কারণে দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করা হয়। এর আগে চ্যানেল ওয়ান ও পিস টিভি বন্ধ করা হয়।নিকট অতীতে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ প্রবীন লেখক ও সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের উপর নগ্ন হামলা চালায় তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে সরকার সমর্থিত গুন্ডাবাহিনী। পত্রিকা অফিসে ভাংচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়।অথচ সেই মজলুম সাংবাদিককে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দিয়ে সরকারের পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বয়স এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় জামিনযোগ্য হলেও অনেক হয়রানি এবং প্রায় ১০ মাস কারাভোগের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ হাইকোর্ট থেকে এক বছরের জন্য জামিন পান তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক হস্তক্ষেপে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ চেম্বার আদালত আট সপ্তাহের জন্য তাঁর জামিন স্থগিত করেন।এখনো মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ করা হয়নি। অভিযোগটি যদিও গুরুতর নয়, কারও নামের পূর্বে শহীদ ব্যবহার করলে মামলা দিয়ে জেলে নেয়ার ঘটনা হয়ত বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাংবাদিক ও লেখকদের যদি ভাষা ব্যবহারের স্বাধীনতা না থাকে তাহলে কলমযোদ্ধারা পরাজিত হয়ে যায়।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দানের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, ৭৮ বছর বয়সী দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ গত ০৯ মাস যাবৎ বিচার-পূর্ব আটকাবস্থায় রয়েছেন।কর্তৃপক্ষ তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার শান্তিপূর্ণ বিশ্বাসের দরুন আটকে রেখেছে।
সংস্থাটি বংলাদেশী কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশটির সাংবাদিকদের মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে।(সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ০১ অক্টোবর ২০২০) গত ২১ অক্টোবর ২০২০ হাতিরঝিল থানা পুলিশ মগবাজার সংগ্রাম অফিস থেকে দৈনিক সংগ্রামের প্রধান প্রতিবেদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকেও একই মামলায় জামিনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ জেল খেটেছেন বিভিন্ন মেয়াদে। এখনো মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপর মামলা ঝুলছে। এর আগে সাহসী সাংবাদিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তার অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১০ সালের ১৯ আগষ্ট তাকে ০৬ মাসের জেল এবং ১০০০০০(এক লক্ষ) টাকা জরিমানা করা হয়।বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হওয়ার পরও তার উপর নির্যাতন থেমে থাকেনি। মাহমুদুর রহমানের নামে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষারের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়ার একটি আদালতে স্থায়ী জামিন নিতে গেলে তার উপর আক্রমন করা হয়।ছাত্রলীগ নেতা তুষারের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ জনের মতো সরকার সমর্থক পেটোয়া বাহিনী তার উপর হামলা করে আহত করে।(সূত্রঃ দ্যা ডেইলি স্টার, ২৩ জুলাই ২০১৮) দেশের বিবেকবান মানুষ হতবাক হয়ে যায়, যখন আদালত চত্বরে রক্তাক্ত হয়ে ক্ষতবিক্ষত হতে হয় একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। জাতি হিসাবে কতটা অসহায় হলে একজন সাংবাদিক বিচারকের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার পর এবং বিচারক পুলিশকে ডেকে নিরাপত্তা দেয়ার আদেশ দেয়ার পরও পুলিশ তা আমলে না নিয়ে বরং সরকারী দলের ক্যাডারদের সুযোগ করে দেয় তার উপর হামলা করার। পুলিশের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করার পরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় বাহিনীটির দলদাস ভূমিকা আরও নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়। দলীয় বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বিমুখী চাপে মাহমুদুর রহমান দেশান্তরিত হতে বাধ্য হন। তিনি এখন তুরস্কে অবস্থান করছেন।তথা কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের সাথে বেলজিয়াম প্রবাসী আইনজীবি আহমেদ জিয়াউদ্দীন এর স্কাইপে অনৈতিক কথোপকথন প্রকাশ করার কারণে ‘আমার দেশ’ এর আর একজন সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়।বিচারের নামে প্রহসন করতে গিয়ে বিদেশ থেকে রায় লিখে দিয়ে সরকার কাকে কখন ফাঁসি দিতে চায়, কতজনকে ঝুলিয়ে দিলে বিচারপতির পদোন্নতি হবে ইত্যাদি বিষয় স্কাইপে আলোচনা করার সময় ধরা পড়ে যায় তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা ইকোনোমিস্ট’ সেটা প্রথম প্রকাশ করে। ২৮ আগষ্ট থেকে ২০ অক্টোবর ২০১২ এর মধ্যে ১৭ ঘন্টার কথোপকথন ফাঁস করে গণমাধ্যমটি। এছাড়া সেপ্টেম্বর ২০১১ ও সেপ্টেম্বর ২০১২ সালের মধ্যে ২৩০ টির বেশি ইমেইল প্রকাশ করে ‘দ্যা ইকোনোমিস্ট’। এরপর ২০১২ সালের ০৯ ডিসেম্বর থেকে সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সেটি প্রকাশ করা শুরু করলে বিচারের নামে সাজানো নাটকের মাধ্যমে ভিন্নমতের নেতাদের হত্যা করার সরকারের কূটকৌশল জনগণের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে।ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান তার দলবাজী ভূমিকার লজ্জা ঢাকতে ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন।আর স্কাইপ কেলংকারী ধামাচাপা দেয়ার জন্য ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ সালে আদালত সেটি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।(সূত্রঃ দ্যা ইকোনোমিস্ট ১৫ ডিসেম্বর ২০১২, এমন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনাল ০৮ জানুয়ারী ২০১৩) গুম-খুন বা জেল-জুলুমের আশঙ্কায় ওলিউল্লাহ নোমান যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন।বন্ধ হয়ে যায় ‘আমার দেশ’ যা এখনো চালু করা যায়নি।যদিও যুক্তরাজ্যে গত ৩০ আগস্ট ২০২০ থেকে ‘আমার দেশ’ অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে, কিন্তু বাংলদেশে সে অনলাইন ভার্সনটিও পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।যারাই সরকারের অন্যায়ের রিরুদ্ধে কলম ধরেন অথবা অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত করতে চান তারাই নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন।২০১৭ সালের ৩ জুলাই ঢাকার একটি বাড়ি থেকে ওষুধ কেনার জন্য বের হলে লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়।এর ১৮ ঘন্টা পর ভীত-সন্ত্রস্ত ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় তাকে যশোর থেকে উদ্ধার করা হয়। ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, তাকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে (ভারতে) নিয়ে যাবার টেষ্টা হয়েছিল এবং পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেবার চেষ্টা করেছে।বাংলাদেশ সরকারের কঠোর সমালোচক হওয়ায় ভয়ভীতি দেখিয়ে অতি সুকৌশলে তার কলমকে থামিয়ে দেয়ার চেস্টা করা হয়। আলজাজিরায় সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ০৫ আগষ্ট ২০১৮ সালে গ্রেফতার হন।দেশি-বিদেশি আন্দোলনের চাপে ২০ নভেম্বর ২০১৮ তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী শক্তিশালী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।তিনি গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি করে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন।একই বছর ১৬ অক্টোবর একাত্তর টিভির টকশোতে একটি মন্তব্যের জেরে তার নামে মানহানি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় এবং ২২ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় তাকে।অভিযোগ আছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দিনের ভোট রাতে করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়।সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাঁধা দেয়া হয় যাতে কোন প্রমাণ পাওয়া না যায়। ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আর আগের মতো সোচ্চার নন।একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শীর্ষক প্রবন্ধ লেখার কারণে শুধুমাত্র ভিন্নমতের হওয়ায় গত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ চাকরিচ্যুত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান।অতি সম্প্রতি গত ২৯ অক্টোবর ২০২০ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ও আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার এবং সিটি নিউজ বিডি ডট কমের নির্বাহী সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম সরোয়ার চট্রগ্রাম থেকে গুম হন। এর তিন দিন পর ০১ নভেম্বর ২০২০ অর্ধমৃত ও অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় সীতাকুন্ডের কুমিরা ইউনিয়নের ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ের কাছে খাল পাশের ঝোপঝাড় থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।জানা যায়, তাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয়।এতে দেখা যায় তিনি বলছেন, ‘ ভাই, আমাকে মাইরেন না, আমি আর নিউজ করবো না’।সত্য সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন ও সাহসী সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধের ক্ষেত্রে ভয়াবহ বর্বরতার প্রমাণ এটি।সরকারের প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক নেতারা কোনো সমালোচনায় সহ্য করছে না।ভিন্ন মতের সাংবাদিকদের উপর অকথ্য নির্যাতন জেল-জুলুম, গুম খুনের ঘটনা ঘটছে অহরহ।সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা, চাকরির নিশ্বয়তা কোনটাই রক্ষিত হচ্ছে না।মিডিয়া বন্ধ হওয়ায় হাজারো সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়ছেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে।আগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলোর সাথে আরও নতুন নতুন ধারা যুক্ত করা হয় এ আইনে।সরকারের সমালোচনা বন্ধের জন্য বিরোধীমত দমনের এক নতুন হাতিয়ার তৈরি হয়। এতে গুজব ছড়ানোর দায়ে ১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়।বার বার একই কাজ করলে যাবজ্জীবন জেল হতে পারে।সরকার চাইলে অত্যন্ত সুকৌশলে যে কারও স্বাধীন মত প্রকাশকে গুজব বলে চালিয়ে দিতে পারে।এখন সাংবাদিকদের পাশাপাশি যেকোন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বেআইনি কাজের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত কয়েকজন সাংবাদিকের নামেও মামলা করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিলের হুমকি দেয়া হচ্ছে।অতি সম্প্রতি বর্তমান সরকারের প্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করার কারণে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহমুদা পলি আক্তার (৩৩) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এডভোকেট মোঃ রানা আহম্মেদ শান্ত নামে এক ব্যাক্তি মামলা দায়েরের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়।(সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, ০৫ জুন ২০২০) এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য কারণে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ‘পক্ষকাল’ এর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল গত ১০ মার্চ ২০২০ গুম হওয়ার আগে দেহ ব্যবসার জন্য মানবপাচার বিষয়ক সংবাদ করেছিলেন, যার সাথে একাধিক রাজনিতিকের সম্পৃক্ততার বিষয় ছিল। এই প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের দু’জন উচ্চ পর্যায়ের নেতা কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অনলাইনে তিনি ‘অবমাননাকর পোস্ট’ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা দেয়া হয়।পরে পুলিশ এ আইনের আওতায় তদন্ত শুরু করে। গত ০৩ মে ২০২০ সাংবাদিক কাজলকে ভারত সীমান্তে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর তদন্তের কথা বলে জেলে নেয়া হয় তাকে। এভাবে দেখা যায় গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭৩২ টি মামলায় ১১৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ বছর প্রথম ২ মাসে ১৬৫ টি মামলায় আরও ৩৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সুতরাং যে আইনগুলো মানুষের সাংবিধানিক অধিকারসমূহকে লঙ্ঘন করে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’।
সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধের আহবান জানিয়েছে।সংস্থাটির মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ দল যুক্ত বিবৃতিতে ২৭ মে ২০২০ সাংবাদিকদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও গুমের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা খর্ব করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।এ ধরনের নিপীড়ন গণমাধ্যমকর্মী, তাদের পরিবার এবং সার্বিকভাবে পুরো সমাজের জন্য ধ্বংষাত্নক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।কেননা সমাজ, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার জন্য গণমাধ্যম একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।কিন্তু বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা তালিকায় ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম। এতেই বুঝা যায় সাংবাদিকতা দিন দিন কত কঠিন হয়ে উঠছে বাংলাদেশে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইনের চাপে গণমাধ্যম নিজেও ‘সেল্ফ সেন্সরশীপে’ থাকতে বাধ্য হচ্ছে যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তথা স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বকারী এসব আইন বাতিলের দাবি তুলছে দেশ বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।তারা বাংলাদেশে সাংবাদিক, কলামিস্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান।বাংলাদেশের সম্পাদক পরিষদ, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন স্টান্ড ফর বাংলাদেশ, ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম ইউকের পক্ষ থেকেও নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেখানেই কেউ সরকারের অত্যাচার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কলম ধরেন অথবা উচ্চ কণ্ঠে সোচ্চার হন তাদেরকেই জেল-জুলুম অথবা গুম-খুনের শিকার হতে হয়।বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেট অফিসে হত্যা করা হয়।তবে তার লাশ কোথায় আছে তা কেউ বলতে পারেন না এখনও।যে খাশোগি সৌদি রাজ পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্টতার কারনে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত ছিলেন, যিনি একসময় ব্রিটেনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত (২০০৫ সাল) তুর্কি বিন ফয়সল আব্দুল আজিজ এর মিডিয়া পরামর্শক ছিলেন।সেই ব্যক্তি যখন সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকারের সমালোচনা করে লেখালেখি শুরু করেন তখনই সরকারের রোষানলে পড়েন এবং জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয় তাকে।যদিও সৌদি সরকার প্রথমে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু পরে আন্তর্জাতিক চাপে এবং তুরস্কের শক্ত পদক্ষেপের কারণে স্বীকার করতে বাধ্য হন।বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও স্বেচ্ছাচারী মৃত্যুদন্ড বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেক প্রতিবেদক অ্যাগনেস ক্যালামারড সম্প্রতি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেন, জামাল খাশোগি নিহত হওয়ার পর নির্দেশদাতা ও হত্যার উস্কানি দেয়ার জন্য সৌদি যুবরাজকে প্রধান সন্দেহভাজন বলে মনে করা হচ্ছে।(সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১২ জুলাই ২০২০)সাম্প্রতিককালে মে মাসে খাশোগির ছেলেরা তাদের পিতার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।সৌদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের চাপে এটি করা হয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ আদালত খাশোগি হত্যামামলার ৫ (পাঁচ) আসামীর মৃত্যুদন্ড শিথিল করে তাদেরকে ২০ বছরের জেল দিয়েছে।অন্য ৩(তিন) জনকে দেয়া হয়েছে ০৭ থেকে ১০ বছরের জেল।কিন্তু মানবধিকার সংগঠনগুলো এ রায়ের সমালোচনা করে বলেছে, এই বিচারে হত্যার নির্দেশদাতাদের কাউকে বা কোন সিনিয়র কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।ফলে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।ওয়াশিংটন ডিসিতে আরব সেন্টারে কর্মরত জামাল খাশোগির পারিবারিক বন্ধু খলিল জাহশান বলেন, এটা করা হয়েছে গা-বাঁচানোর জন্য।জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এসব বিষয়কে বিচারের নামে প্যারোডি বলে নিন্দা জানিয়েছেন।সম্প্রতি ২০ অক্টোবর ২০২০ খাশোগির বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিস সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।তিনি অভিযোগ করেছেন, নিহত খাশোগি সৌদি আরবের একজন বাসিন্দা এবং ভিন্ন মতাবলম্বী।এ কারণে তাকে টারগেট করে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।দায়েরকৃত নাগরিক মামলায় তুরস্কের নাগরিক হাতিস চেঙ্গিস ব্যক্তিগত আঘাতের অভিযোগ তুলেছেন এবং খাশোগির মৃত্যুতে হওয়া আর্থিক ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।এর আগে মিশরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে অন্যায়ভাবে অপসারণের সময় (২০১৩) গণআন্দোলনের খবর প্রচারের জেরে আল-জাজিরা চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিককে বিভিন্ন মেয়াদে জেল দেয় স্বৈরশাসক সিসি’র আদালত। অতি সম্প্রতি মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী রায়হান কবির সে দেশের অভিবাসী কর্মীদের ওপর আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দেয়ায় মালয়েশিয়া সরকারের বিরাগভাজন হন।করোনাকালে মালয়েশিয়া সরকার ‘মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার’ (এমসিও) জারি করে। গত ০৩ জুলাই আল-জাজিরায় প্রচারিত লকড আপ ইন মালয়াশিয়া’স লকডাউন তথ্যচিত্রে বলা হয়, এ আদেশের ফলে কর্মীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।এতে রায়হান কবির অভিবাসীদের উপর নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরেন।গত ০৮ জুলাই কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) বাতিলের পর ২৬ জুলাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন রায়হান কবির।এরপর টানা ২৭ দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।মালয়েশিয়ায় তিনি চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হন।বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাড়াও মালয়েশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাকে গ্রেফতারের নিন্দা করে এবং মুক্তির দাবি জানান।অবশেষে মালয়েশিয়ার সরকার গত ২১ আগষ্ট ২০২০ রায়হান কবিরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন।(সূত্র: মানবজমিন, ২৩ আগষ্ট ২০২০) চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের মুসলমানরা বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সে দেশের উগ্রবাধীরা নৃশংসভাবে হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০ জনকে হত্যা এবং শত শত মানুষকে আহত করে।সেই হিংসার ছবি সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরতে গিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের সরকারের ভক্তদের হাতে নিদারুন হেনস্থা, মারধর, এমনকি প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।দিল্লির সহিংসতায় সরকার সমর্থক যুবকের হাতে খোলা পিস্তল ও মুসলমানদের রক্তাক্ত করার ছবি তোলার জেরে দানিশ সিদ্দিকি নামে এক চিত্র সাংবাদিক আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়।
পৃথিবীর যেখানেই রাষ্ট্রশক্তির অন্যায় অত্যাচারের বিপক্ষে যারাই কলম ধরেছেন অথবা তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত করেছেন তারাই নানাভাবে নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।আর যারাই অত্যাচারী শাসকের চাটুকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তাদের নব্য সুবিধাভোগী শ্রেণী হিসেবে বিবর্তন হয়েছে।সরকারের চাটুকারিতা করলে লাভজনক পদ-পদবি পাওয়া যায়, নতুন মিডিয়ার মালিক হওয়া যায়।২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও রুনি এটিএন বাংলার জেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন।ঘটনাস্থলে গিয়ে তৎকালীন সরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হবে।অথচ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সে রহস্য এখনো অজানা জাতির কাছে।৭৫ বারের মত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় পিছানো হয়।এ হত্যাকাণ্ডের পর তাদের খুনির বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সরকারের তেলবাজী করে এক সময় তথ্য উপদেষ্টার পদ পাওয়ার পর সাগর-রুনির কথা বেমালুম ভুলে যায়।আর এক সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু তথাকথিত সরকারের দালালী করে টেলিভিশন চ্যানেলের কর্তৃত্ব পেয়ে যান।তার পরিচালিত ‘৭১ টিভি’তে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা হয় যে ওয়াজ মাহফিলের কারণে ধর্ষণ বেড়ে যায় এবং মসজিদ নির্মাণের প্রথম কাজ জমি দখল।এছাড়া ‘ডিবিসি নিউজ’ নামে আর একটি চ্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ড. জিয়াউর রহমান শুদ্ধভাবে সালাম দেয়া ও আল্লাহ হাফেজ বলাকে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করে বক্তব্য দেয়।উভয় ক্ষেত্রে মুসলমানদের মুল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। এতে চ্যানেল দুটির বিরুদ্ধে অধিকাংশ জনগণের ঐক্য দেখা যায় এবং তারা এসব চ্যানেল বয়কটের ঘোষণা দেয়।সরকারের অলিখিত হস্তক্ষেপে মনজুরুল আহসান বুলবুলরা একুশে টেলিভিশন দখল করে নেন।রাতারাতি পদন্নোতি পেয়ে যান সরকার সমর্থক সাংবাদিকরা। সংকীর্ণ স্বার্থে এসব মিডিয়া পরিচালনার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয় না।গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা জাতীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ/প্রচার করতে পারছে না।বস্তুত স্বৈরশাসকের অন্যায়, অত্যাচার, দুর্নীতি ও অপকর্ম ফাঁস করে দিলে হয় সংবাদিক নির্যাতন, অপরদিকে দখলদার সরকারের মত ও আদর্শের সাথে সুর মিলিয়ে দালালী করলে হয় সাংবাদিক বিবর্তন ।