সাংবাদিকেরা কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘প্রতিপক্ষ’

বাংলাদেশ ব্যাংক

সাংবাদিক প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে হলে সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট কর্মকর্তা দেখা করতে চাইলে তবেই প্রবেশাধিকার মিলবে। বাংলাদেশ সম্ভবত এটা শিখেছে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের কাছ থেকে। তিনিও ২০১৯ সালে দায়িত্ব নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।

তখন দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, নর্থ ব্লকের দুই নম্বর গেটের বাইরে চমৎকারভাবে সজ্জিত শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বিশ্রামকক্ষ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পানি, চা ও কফির অবিরাম সরবরাহ থাকবে। সাংবাদিকেরা সেখানে অপেক্ষা করবেন। যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চান, তাঁকে খবর দেওয়া হলে তিনি এসে দেখা করে যাবেন।

দেশজুড়ে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও একযোগে বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, এটি হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের আরেক ধাপ। দ্য হিন্দুর উপসম্পাদক শোভনা কে নায়ার এ ঘটনা নিয়ে মজা করে লিখেছিলেন, ‘আহা! বিশ্রামকক্ষে বসে বসেই যদি সংবাদ লেখার সব তথ্য পাওয়া যেত, তাহলে সাংবাদিকদের জীবন কত না সহজ হতো!’

কিন্তু এই সহজ জীবন তো সাংবাদিকেরা চান না। আর আমরা সবাই জানি, সরকার যেটা জানাতে চায় সেটা আসলে প্রেস রিলিজ, আর যা লুকাতে চায় সেটাই সংবাদ। আর সেই লুকানো সংবাদ পেতে প্রয়োজন গণমাধ্যমের ভাষায় ‘সোর্স’। আর এই সোর্স বিশ্রামকক্ষে বসে তৈরি হয় না। যাঁর যত ভালো সোর্স, তিনিই তত বড় সাংবাদিক। এখানে কেউ সঠিক সাংবাদিকতা করুন—এটা আসলে সরকারই চায় না।

অথচ উন্নত দেশগুলো গণতন্ত্রের স্বার্থেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। কারণ, গণমাধ্যম আসলে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে এগিয়ে থাকা নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক বা নেদারল্যান্ডস যেকোনো সরকারি অফিসে অবাধে যাতায়াতের সুযোগ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা নিয়মিত স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউস বা অন্যান্য সরকারি অফিসে সংবাদ সংগ্রহে যান, তাঁদের এককালীন পাস দেওয়া হয়। ফ্রান্সে তিন মাসের অভিজ্ঞতা থাকলেই সাংবাদিকদের সরকারিভাবে কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ডধারীরা সরকারি অফিস ছাড়াও জাদুঘর, সিনেমা বা যেকোনো প্রদর্শনীতে অবাধে ঢুকতে পারেন।

অন্যদিকে গণতন্ত্র চর্চার অনুপস্থিত দেশ, যারা জবাবদিহি করতে চায় না, তাদেরই চেষ্টা থাকে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার। এ জন্য আইন তো করেই, প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেয় যখন-তখন।

২.

এবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। সাংবাদিকতা জীবনের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে যাওয়া–আসা ছিল। ঘটনাটি ১৯৯৬ সালের। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মোস্তফা আমিনুর রশীদ। নানা অনিয়ম করে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সুলতান আহমেদ মোল্লার নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি বিস্তারিত পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন জমাও দেয়। তাতে অন্তত ২৫ ধরনের অনিয়মের বিস্তারিত বিবরণ ছিল। রাজনৈতিক প্রভাবে সেই প্রতিবেদন ঢুকে গিয়েছিল হিমঘরে।

সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ প্রতিবেদন তৈরি করার পরও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ভরযোগ্য একজন ‘সোর্স’ থেকে সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল পত্রিকায়। অগ্রণী ব্যাংকের এমডির চাকরির মেয়াদ আর বাড়েনি।

সেই সব ধারাবাহিক প্রতিবেদন ক্ষুব্ধ করেছিল সরকারকে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন মহবুবুর রহমান খান। তিনি একদিন চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। চা খাইয়ে বলেছিলেন, আর্থিক খাতের ওপরে গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না। আমি শুধু প্রশ্ন করেছিলাম, প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোনো ভুল ছিল কি না। সেই সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি; বরং তাঁর আগ্রহ ছিল প্রতিবেদনটি কী করে পেলাম, সেটা জানা। তিনিও এর সদুত্তর পাননি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছিলেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তাঁর সময়ে ডেপুটি গভর্নর ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। কোন ব্যাংকে কী হচ্ছে, তা দুজনেরই জানা ছিল। এক দিনের ঘটনা বলি। সোনালী ব্যাংক জামানত ছাড়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একজনকে অনিয়ম করে মোটা অঙ্কের ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিল। এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ‘সোর্স’ থেকেই জানতে পেরেছিলাম। সংবাদটি ছাপা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশের স্বার্থে ঋণ দেওয়া স্থগিত করে দিয়েছিল। এ রকম ঘটনা ঘটেছিল একাধিকবার।

তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে কর্মচারী ইউনিয়নের ছিল ব্যাপক দাপট। কর্মকর্তারাও নানা সমিতি করে প্রভাব দেখাতেন। তাদের পেছনে ছিল রাজনৈতিক শক্তি। জায়গা দখল, ঋণে ভাগ নেওয়া এবং বদলি–বাণিজ্য ছিল তাদের আয়ের বড় উৎস। জ্যেষ্ঠ ব্যাংকারদের মারধর করেছে এমন উদাহরণও ছিল। পাশাপাশি ছিল প্রভাবশালী বড় ব্যবসায়ীদের দাপট। দুজন বড় ব্যবসায়ী হুমকি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন গভর্নরকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখনই রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারত না, খবর পেতেন সাংবাদিকেরা। আমরা লিখতাম, চাপে পড়ত সরকার, ব্যবস্থা নিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নব্বইয়ের দশক থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গী ছিলেন সাংবাদিকেরা। বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের যথেচ্ছাচার কমাতে যেসব পদক্ষেপ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নিয়েছিলেন, তাতে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন সাংবাদিকদের কাছ থেকেই। সবকিছুই ব্যক্তিগত স্বার্থে করা হতো না, বরং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যও ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক আর সাংবাদিকেরা ছিলেন এক পক্ষ। আর যাঁরা হুমকি–ধমকি দিতেন, তাঁরা ছিলেন আরেক পক্ষ।

সেই প্রতিপক্ষই আসলে পাল্টে গেছে। এখন ব্যাংক দখলকারী, ঋণখেলাপি, পরিবারতন্ত্র কায়েম করা ব্যাংক পরিচালক আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক—সবাই এক পক্ষ। পরস্পর পরস্পরের স্বার্থ রক্ষাই তাদের মূল কাজ। ফলে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সৃষ্টি হয় পি কে হালদারের মতো ঋণ আত্মসাৎকারীদের, প্রভাবশালী মালিকদের ব্যাংক পায় নানা সুযোগ-সুবিধা, ব্যাংকমালিকেরা ঠিক করে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদনীতি, খেলাপিরা পান নানা ছাড়।

এখন কে কার লোক, কার সুপারিশে কে নিয়োগ পেয়েছেন, কে কোন দেশে কার আতিথেয়তা নিয়েছেন—সেগুলোই মুখ্য বিষয়। এগুলো নিয়ে যত কম লেখা হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরকার, আজ্ঞাবহ ব্যাংকার ও অন্যায় সুযোগ পাওয়া ব্যবসায়ীদের ততই সুবিধা। এ রকম এক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকেরা নিষিদ্ধ হবেন—সেটাই স্বাভাবিক।

৩.

একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যোগাযোগ নীতি কেমন হবে—সেটিও এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যোগাযোগ নীতি নিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক কমিউনিকেশনস’ নামে একটি হ্যান্ডবুক তৈরি করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সারা বিশ্ব এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কাজটি করা হয় মুদ্রানীতির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে কি না, কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে তা করা হচ্ছে, সেই জবাবদিহিও থাকা দরকার। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ভালো যোগাযোগ নীতি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে আইএমএফ। হ্যান্ডবুকে তারা বলেছে, বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সরকার, রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষকদের মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য এবং বাস্তবায়ন নীতি পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহি ও স্বাধীনতা উভয়েই নিশ্চিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও জবাবদিহি হচ্ছে আসলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

সাংবাদিকেরা ছাড়াও যাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পর্যবেক্ষণ করেন, হ্যান্ডবুকে তাঁদেরও আস্থায় আনার কথা বলেছে আইএমএফ। অথচ বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটা। সাংবাদিকেরা নিষিদ্ধ হয়েছেন। আর পর্যবেক্ষক, বিশেষ করে অর্থনীতিবিদেরা কিছু বললে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাঁদের অর্থনীতির জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকি গভর্নরও মন্তব্য করেন যে বিশ্বের ক্রেডিট রেটিং সংস্থা বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। নিজেদের নেওয়া নীতি সফল করতে সবার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের হ্যান্ডবুকটি ভালোভাবে পড়ে নিতে পারে।

লন্ডনের কিংস কলেজের পলিটিক্যাল ইকোনমি বিভাগের দুজন অধ্যাপক ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে নিয়ে গণমাধ্যম কী ধরনের প্রতিবেদন করে এবং এর প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে ২০২২ সালে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে লন্ডনের দ্য টাইমস, দ্য ডেইলি মেইল এবং দ্য গার্ডিয়ান–এ প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। ‘হাউ ডু দা মিডিয়া স্ক্রুটিনাইজ সেন্ট্রাল ব্যাংকিং? এভিডেন্স ফ্রম দা ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ নামের গবেষণায় গবেষক দুজন বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহি নিয়ে মিডিয়ার উচিত আরও গভীরভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রাখা। কেননা তারা গণমানুষের ধারণা তৈরি করে এবং আইনগত নজরদারি বাড়াতেও সহায়তা করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতাকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখতে কেবল মিডিয়াই পারে, যা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে সংকটের সময়।

৪.

ইংল্যান্ডের ক্ষমতাসীন টোরি দলের ৪৪ জন সংসদ সদস্য ১৯ মে একযোগে দেশের চ্যান্সেলর বা অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টকে একটি চিঠি লিখেছেন। সেখানে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের স্বাধীনতা পর্যালোচনা করার জন্য বলা হয়েছে। কারণ, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, অন্যান্য দেশ যেসব নীতি নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, সে পথ সময়মতো অনুসরণ করেনি এবং বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের করের টাকা নষ্ট করছে।

বাংলাদেশেও দুই বছর ধরে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বজায় রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। এই দুই বছরে ৮৭ টাকার ডলার হয়েছে ১১৭ টাকা। এত সব ব্যর্থতার জবাব তো এখানেও ক্ষমতাসীনদেরই চাওয়ার কথা। কারণ, রাজনীতি সামাল দিতে পারলেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে সরকারের মুখ রক্ষা হচ্ছে না।

সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক বেশি বিলম্ব করেছে, ডলারের বিনিময় হার নিয়ে দুই বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে এসে ‘ক্রলিং পেগ’ নীতি নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা কেবল মুদ্রানীতির মধ্যেই আছে, বাস্তবে নেই। এই ব্যর্থতার জবাব তো সাধারণ মানুষও চায়। নির্বাচন ও ভোট গুরুত্বপূর্ণ হলে এর জবাব পাওয়ার কথাও।

সারা বিশ্বেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন স্বাধীন, তেমনি জবাবদিহি করারও আইনগত কাঠামো আছে। সরকার ও সংসদকে জানাতে হয় ব্যর্থতার কারণ। এখানে অবশ্য সবই উল্টো। ব্যর্থতার জবাব চাওয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরং সাফাই গাইছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকতে না দেওয়ার নীতির পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়েবসাইটেই তো সব দেওয়া থাকে। পরিহাসের বিষয় হলো, তিনিও একসময় সাংবাদিকতা করতেন।

লেখক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েল বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকতা হচ্ছে যা অন্য কেউ ছাপাতে চায় না তা ছাপানো, বাকি সবকিছুই জনসংযোগ।’ কথাটা তখন ওবায়দুল কাদের পড়েননি বা জানতেন না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে সম্ভবত তিনি তা ভুলে গেছেন। নিজের লেখা আত্মজীবনীর নামই তো তিনি দিয়েছেন, ‘জীবনস্মৃতি: সব মনে নেই’।

Prothom alo