ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর নৌকায় তুরাগভ্রমণের ছবি এখন ভাইরাল। নৌকায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন। তাঁদের একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। এই প্রতিষ্ঠানের নৌকায় করেই ঘোরেন তিনি। প্রথম আলো তাঁর কাছে এই নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিল।
রুনা খান বলেন, দুই-তিন দিন আগে ফরাসি দূতাবাস থেকে কল করা হয়। প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নৌকায় তুরাগ নদ ভ্রমণ করতে যেতে পারেন, এমনটা জানানো হয়। তবে সেটা চূড়ান্ত কিছু নয়। দুই দিনের সফরে রোববার ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এলে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে অতিথি হিসেবে গিয়ে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত হন যে নৌকায় তুরাগ নদ ঘুরে দেখবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতি ফ্রান্সের যে প্রতিশ্রুতি, সেটি ফ্রেন্ডশিপের সঙ্গে একটি যোগসূত্র গড়ে দিয়েছে। সে কারণেই সুযোগটা তাঁর প্রতিষ্ঠান পেয়েছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। সেখান থেকে মাখোঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর বড়বাজার ইকোপার্ক এলাকায়। রুনা খান বলেন, ইকোপার্ক ঘাট থেকে ফরাসি প্রেসিডেন্টসহ তাঁরা নৌকায় ওঠেন। নৌকাটি আধা ঘণ্টার মতো তুরাগ নদে ঘুরেছে। বৃষ্টি ছিল না তখন? প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, বিষয়টা খুবই মজার। প্রেসিডেন্ট যখন নৌকায় উঠলেন, বৃষ্টি থেমে গেল। নৌকা যতক্ষণ চলল, বৃষ্টি ছিল না। তিনি নৌকা থেকে নেমে গাড়িতে উঠতেই আবার বৃষ্টি শুরু হলো।
তুরাগ নদে নৌকায় ঘুরলেন মাখোঁ
নৌকায় বসে এমানুয়েল মাখোঁ কী নিয়ে আলাপ করেছেন, সেটা জানতে চাইলে রুনা খান বলেন, ‘আলাপে তো আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে অনেক কিছুই এসেছে। তিনি নৌকা, নৌকার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা তাঁকে ক্লাইমেট মাইগ্র্যান্টদের (জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসী) গল্প বলেছি। নৌকায় বসে নৌকাবাইচ দেখতে দেখতে তিনি বলছিলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যে বাংলাদেশ অনেক সমৃদ্ধ। দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের মধ্যে অনেক বিষয়েই মিল আছে।’
জলবায়ু অভিবাসীদের গল্পের প্রসঙ্গ আসতেই রুনা খান তুরাগের পারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্টের আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের কথা বারবার বলছিলেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ঘাটের দিকে যাওয়ার সময় দোকানিদের দিকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। দোকানের ক্রেতা–বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে যান। তাঁর শুভেচ্ছার জবাব দেন। তিনি অনেকের সঙ্গে হাত মেলান। বারবার তাঁদের বসে খাওয়াদাওয়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলতে থাকেন। তবে বিদেশি প্রেসিডেন্টকে কাছে পেয়ে সবাই তাঁর দিকেই মনোযোগী হন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কেউ কেউ আবার তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলেন।
এ সময় নদীভাঙনের শিকার হয়ে এখানে এসে দোকান দেওয়া ভোলার এক প্রবীণ দোকানি ফরাসি প্রেসিডেন্টের দিকে ভালোবেসে একটি প্লেট ধরেন। সেই প্লেটে ছিল শিঙাড়া, সমুচা ও জিলাপি। নিরাপত্তার কারণে তিনি সেসব খেতে পারবেন না জেনেও হাত বাড়িয়ে একটা শিঙাড়া নেন। দোকানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে, তাঁকে ধন্যবাদ জানান। প্রেসিডেন্টের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন উপস্থিত সবাই। তাঁকেও সবাই ধন্যবাদ জানাতে থাকেন।
‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে নৌকায় উঠেছেন, সেটা আমি চালিয়েছি, বিশ্বাস হচ্ছে না’
পুরো সময়টায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে কাছে টেনেছেন, তাতে মুগ্ধ রুনা খান। নিজের মুগ্ধতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে একটি সম্মেলনে মাখোঁর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। রোববার প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে দেখা হতেই প্রেসিডেন্ট তাঁকে চিনতে পারেন। এটা যে তাঁর জন্য কতটা আনন্দের, সম্মানের! তিনি বলেন, মাখোঁ নৌকার মাঝিদের কাছে টেনে নিয়ে ছবি তুলেছেন। তাঁর এমন আন্তরিকতায় নৌকার মাঝিদের খুশি আর ধরে না! বার্তা সংস্থা এএফপির একটি ছবিতে দেখা গেছে, মাখোঁ সবার সঙ্গে সেলফি তুলছেন। প্রসঙ্গটা আসতেই হাসতে হাসতে রুনা খান বলেন, ‘আমিই সেলফি তুলছিলাম। তখন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বললেন, “ফোনটা আমাকে দাও। তোমার সেলফি হচ্ছে না…।”’