
ফাইল ছবি
সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হচ্ছে নানা কৌশলে। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’-সেক্যুলার এই সস্তা স্লোগানের ছলে সশ্রস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মিশন প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। আর তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে এমন আগ্রাসনের সহায়কের ভুমিকা পালন করছেন দেশের রাজনীতিকরা। রাজনীতিকদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার বয়ান দিতে শোনা যায়। অপর দিকে মুসলিম সংস্কৃতির অনুষ্ঠানকে ধর্র্ম নিরপেক্ষতা বিরোধী বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করেন ওই রাজনীতিকরাই।
উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলী উৎসব। এই উৎসবকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঘোড়া-কুকুর উপহার দেয় ভারত। আর উপহারের খবরটি ফলাও করে প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম। দীপাবলী উৎসবের মতো ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে এমন উপহারের কৌশলে গত এক যুগে সশ্রস্ত্র বাহিনীতে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়েছে ভারত। এছাড়া নানা প্রশিক্ষণের নামে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সশ্রস্ত্র বাহিনীকে তাদের সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগি বানানো হচ্ছে।
সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের কখনো কুকুর পালন প্রশিক্ষণ, কখনো মাংস কাটার প্রশিক্ষণের নামেও ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণের জন্য সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর খবর গণমাধ্যমেও বের হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর অফিসারদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্যও এখন ভারতে পাঠানো হয়। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের লক্ষ্যেই মূলত আয়োজন করা হয় এসব প্রশিক্ষণ।
একদিকে নানা প্রশিক্ষণের নামে আমন্ত্রণ জানিয়ে সশস্ত্রবাহিনীর অফিসারদের ভারতে নিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পাশাপাশি হিন্দু ধমীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে ঘোড়া-কুকুর উপহার দেয়া হচ্ছে। আবার অন্যদিকে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশী নাগরিককে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। গতকালও (২১ নভেম্বর) রৌমারি সীমান্তে এক বাংলাদেশী যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় বিএসএফ।
অথচ সীমান্তে নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যদের দেখা যায় বিএসএফ-এর নারী সদস্যদের সাথে হিন্দু ধর্মীয় রাখি উৎসবের দিনে এক সাথে আনন্দে মেতে উঠতে। এই আনন্দ উৎসবের ছবি গত কয়েক বছরে ধরেই গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতর এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও এই রাখি উৎসবের নামে এক সাথে আনন্দ উৎসব থামেনি।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, রাখিবন্ধনের দিন হিন্দুদের দেবতা গণেশের বোন তার (গণেশের) হাতে একটি রাখি বেঁধে দেন। সেই রীতি মেনেই বিজিবির সদস্যদের হাতে রাখি পরিয়ে তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির বীজ বপন করে চলেছে ভারত।
উল্লেখ্য,সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারাই বিজিবি পরিচালনা করেন।
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব যাদের হাতে, সেই সশস্ত্র বাহিনীকে তাঁবেদার বানাতে স্বাধীনতার পর থেকেই নানা কৌশলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সেনাবাহিনীর উচু পদগুলোতে ভারতপন্থী সেনা কর্মকর্তাদের পদায়নের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। সাবেক জেনারেল সোহরাওয়ার্দি আমেরিকা থেকে প্রচারিত ড. কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকারেও সেনা প্রধান নিয়োগে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিষয়টি প্রকাশ্যেই বলেছেন।
এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই রাখিবন্ধন উৎসবকে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ককে রক্তের রাখিবন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
চলতি বছরের ১১ আগস্ট ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদিও সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। দুদেশের সম্পর্ক একাত্তরের রক্তের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা বার বার মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর ভারতের প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক প্রভাবও নতুন নয়। এছাড়াও আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের মাধ্যমে হাজার বছরের মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংসের অপচেষ্টা বছরের পর বছর ধরে চলছে ।
যে সেনাবাহিনী দেশের মানুষের মূল্যবোধকে ধারণ করে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উজ্জীবিত থাকার কথা, সেই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন নারী-পুরুষ কর্মকর্তা ও সৈনিকদেরকে ভারতীয় সিনেমার গানের সাথে নাচতে দেখা যায়। এ ধরনের অনেক ভিডিও এখন ইউটিউবে রয়েছে।
অবসরে যাওয়া এক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একদিকে সেনাবাহিনীর ভেতরে ভারতীয় সিনেমার ঢঙ্গে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও নাচ-গানের প্রসার ঘটানো হচ্ছে, অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদের বীজ বপনের খেলাও চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।
তিনি বলেন, যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে প্রথমে সেই এলাকায় অস্থায়ী মসজিদ বানাতো নিজেদের ইবাদতের জন্য, এখন সেই সেনা সদস্যরাই ভারতীয় সিনেমায় মশগুল হয়ে যাচ্ছেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই বাহিনীর পুরুষ ও নারী সদস্যদের অবাধে ভারতীয় সঙ্গীতের তালে তালে এখন নাচতে দেখা যায়। আর এই প্রবণতা একদিনে হয়নি। ধীরে ধীরে নানা কৌশলে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলেই এখন এসব হচ্ছে।