কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অব:)
বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যে কয়েকটি দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তন্মধ্যে ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবস’ অন্যতম। এ কথা নির্দ্বিধায় ও নিঃসঙ্কোচে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চালিকাশক্তি ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং এ বাহিনীর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহ করা প্রায় ২৬ হাজার সুপ্রশিক্ষিত বাঙালি সদস্যের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথমে পাঁচটি ও পরবর্তীতে নবপ্রতিষ্ঠিত আরো তিনটি ব্যাটালিয়নই ছিল মূল চালিকাশক্তি; সে জন্য শুরু হতেই সেনাবাহিনী এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। নৌ ও বিমানবাহিনীর স্বল্পসংখ্যক সদস্য ছিল বলে গেরিলাযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অধীনেই তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এক সময় গেরিলাযুদ্ধে হানাদার বাহিনী নাস্তানাবুদ ও কোণঠাসা হয়ে পড়ার পর নিজস্ব বাহিনীর দ্বারা শত্রুকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণ করানোর কৌশলের বিষয়ে জেনারেল ওসমানী ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এক দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা হতে কনভেনশনাল, প্রথাগত বা নিয়মিত যুদ্ধ শুরু করার জন্য ’৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সাথে নৌ ও বিমানবাহিনী সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে। সে জন্যই ২১ নভেম্বরকে মুক্তিযুদ্ধের একটি মাইলফলক হিসেবে সশস্ত্রবাহিনীর দিবস হিসেবে গৌরবের সাথে স্মরণ করা হয়।
২. ১৯৮০ সাল থেকে সম্মিলিতভাবে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্রবাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনী স্বতন্ত্রভাবে তাদের নিজস্ব বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করত। কিন্তু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী অর্থাৎ সামরিক বাহিনী ও জনসাধারণের সম্মিলিত যে প্রয়াসে দেশের ঐতিহাসিক বিজয় অর্জিত হয়েছে সেই, অসাধারণ অর্জন চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য নতুন প্রজন্মকে নিয়ে সবাই মিলে উদযাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে মহিমান্বিত করার লক্ষ্যেই সশস্ত্রবাহিনী দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সশস্ত্রবাহিনীর যে অকল্পনীয় ও অবিস্মরণীয় ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশের মুক্তি সম্ভব হয়েছে তা জানতে পারলে জাতির মধ্যে দেশপ্রেমের অনুভূতির স্ফুরণ ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হানাদার বাহিনীর নির্মম ও নৃশংস আক্রমণকে প্রতিহত ও তাদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে দেশ মুক্তির মাধ্যমে মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সশস্ত্রবাহিনী দিবস পালনের পেছনে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে দেশের জনগণের আত্মত্যাগের সাথে একীভূত করে দেখা হয়।
৩. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যখন দিশেহারা, ঠিক সে সময়ে পাকিস্তানিদের জবাবে সর্বপ্রথম সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাঁচটি ইউনিট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ ও অন্য অনেক বাঙালি সদস্য। এরপর এগিয়ে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি নাবিক ও নৌ অফিসার, সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের মুক্তিপাগল হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক। মুক্তি সংগ্রাম রূপ ধারণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের। এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি শাসকদের স্বপ্ন নস্যাৎ ও তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সুসংগঠিত সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার।
২৫ মার্চের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল ৪ এপ্রিল এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি ছিল তেলিয়াপাড়া। এটি সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মাধবপুর উপজেলার অন্তর্গত। এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। এখানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম বৈঠক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে আসেন কিংবদন্তি সমরনায়ক কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী এবং সামরিক বাহিনীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি অফিসাররা যাদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল এম এ রব, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, লে. কর্নেল সালাহউদ্দীন মো: রেজা, মেজর নূরুল ইসলাম, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর রফিকুল ইসলাম, মেজর এ এন এম নুরুজ্জামান, উইং কমান্ডার এম কে বাশার, মেজর মীর শওকত আলী, মেজর নাজমুল হক, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর এম এ জলিল, মেজর জয়নুল আবেদীন, মেজর এম এ মঞ্জুর, মেজর এম আবু তাহের, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহসহ অনেক নির্ভীক ও দুঃসাহসী বাঙালি অফিসার। সব সিনিয়র সামরিক অফিসার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র যুদ্ধ করার। এ ঐতিহাসিক দিনে সর্বসম্মতিক্রমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা ছিল কর্নেল ওসমানীকে (পরবর্তী সময়ে জেনারেল) মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনের প্রস্তাব, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ, সীমান্তবর্তী ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি, একক কমান্ড চ্যানেল প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ মনিটরিং সেল গঠন, সামরিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কমান্ডার নিয়োগ ও দায়িত্ব বণ্টন, জিয়াউর রহমানের এলাকায় সৈন্য বৃদ্ধি, কর্নেল ওসমানীকে রাজনৈতিক সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়ার দায়িত্ব অর্পণ। প্রাথমিক দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বিভাজন অনুযায়ী মেজর সফিউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন, মেজর খালেদ মোশাররফ কুমিল্লা-নোয়াখালীর দায়িত্বে ছিলেন এবং চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকার দায়িত্বে ছিলেন মেজর জিয়া। ওই বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানী নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ়প্রত্যয়ের শপথবাক্যও সবাইকে পাঠ করান তিনি।
৪. তেলিয়াপাড়ার প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে প্রবাসী সরকার গঠন করা হয় এবং জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক নিয়োগ অনুমোদন ও অন্য সিদ্ধান্তসমূহকে ‘এনডোর্স’ করা হয়। আগের সিদ্ধান্তানুযায়ী ১০ এপ্রিল তেলিয়াপাড়ায় দ্বিতীয় সেনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিক্ষিপ্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধটিকে সমন্বিত অ্যাকশনে রূপ দেয়া এবং কমান্ড চ্যানেলে আনার লক্ষ্যে এদিন পুরো দেশকে চারটির স্থলে ছয়টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন দু’টি সামরিক অঞ্চলের মধ্যে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত অঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিনকে। বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা নিয়ে গঠিত অঞ্চলের সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর নাজমুল হককে। ছয়টি অঞ্চলের কমান্ডারদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকার বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্যদেরকে একটি কমান্ড চ্যানেলে এনে সমম্বিত অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। সামরিক অফিসার ও সৈনিকরা দ্রুত নিজেদের সুসংগঠিত করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন।
৫. তেলিয়াপাড়ার বৈঠকের ফলোআপ অনুযায়ী ১৭ এপ্রিল ‘মুজিবনগর সরকার’ গঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধ একটি সুসমন্বিত রূপ লাভ করে। অতঃপর সারা দেশকে বিভক্ত করা হয় ১১টি সেক্টরে যার নেতৃত্ব দেয়া হয় একেকজন সুশিক্ষিত পেশাদার সেনা কর্মকর্তাকে। এটি ছিল মুক্তিবাহিনীর রণকৌশলের প্রথম সফল ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণকে প্রতিহত ও পরাজিত করা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি না সেক্টরে ভাগ করে সঠিক কৌশল অবলম্বন করা হতো। এর মধ্যেই নিয়মিত যুদ্ধ করার জন্য জিয়া, সফিউল্লাহ ও খালেদের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে যথাক্রমে ‘জেড’ ফোর্স, ‘এস’ ফোর্স ও ‘কে’ ফোর্স নামে তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করা হয়। দীর্ঘ আট মাস সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধ করার পর হানাদার বাহিনী যখন পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে, ’৭১ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ২১ নভেম্বর স্থল, নৌ ও আকাশপথে কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে শুরু করা হয় ত্রিমুখী আক্রমণ। উন্মুক্ত হয় বিজয়ের পথ। তারপর মিত্রবাহিনীর সহযোগে ঘোষিত হয় সার্বিক যুদ্ধ। এই আক্রমণ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করে জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে। হানাদাররা বাধ্য হয় পশ্চাৎপসারণে। ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীও এগিয়ে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ’৭১-এ হানাদারদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় আমাদের মহাবিজয়। পৃথিবীর নামকরা সুশিক্ষিত একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিবাহিনী সৃষ্টি করে কালজয়ী এক ইতিহাস। প্রকৃতপক্ষে এ বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের সম্মিলিত আক্রমণ। ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।
৬. ১৯৭১ এর ২১ নভেম্বর দিনটি আমাদের কাছে একটি আবেগের নাম। কারণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল আজকের স্বাধীনতা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণকে প্রতিহত ও পরাজিত করা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি না সঠিক রণকৌশল অবলম্বন করা হতো। আর সে কৌশলের অন্যতম ছিল ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের তিন বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ। আজ আমাদের আছে অতি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী একটি সশস্ত্রবাহিনী। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদফতর অবলুপ্ত হয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় তিন বাহিনীর জন্য পৃথক সদর দফতর। বাংলাদেশের সংবিধানের পরিচ্ছেদ ৪ এর ৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়কত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয় এবং আইনের দ্বারা তার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
৭. আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত আমাদের পেশাদার সশস্ত্রবাহিনী আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্থান করে নিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে প্রথমস্থানে অবস্থানকারী সশস্ত্রবাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজ চিনতে পেরেছে সারা বিশ্বের মানুষ। শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সদস্য সংখ্যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে জাতিসঙ্ঘের পতাকাতলে একত্র হয় তারা। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘ পরিবারের সদস্য হয়। অন্যদিকে শুরু হতে অদ্যাবধি শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সঙ্ঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও আমাদের সশস্ত্রবাহিনী আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে।
৮. মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত, পেশাদার ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমই নয়, সশস্ত্রবাহিনী দেশের একদশমাংশ অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষা করে দেশের অখণ্ড সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে, যে জন্য রক্ত দিতে হয়েছে অনেক। দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সশস্ত্রবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আজ অনস্বীকার্য। জাতির প্রয়োজনে যেকোন কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। ১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী দেশের জনসাধারণের সাথে যেভাবে একীভূত হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উদ্দীপক হিসেবেই কাজ করবে। এ দিবসকে ভিত্তি করে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সৃষ্টি হতে পারে জাতীয় ঐকমত্য।
লেখক: সামরিক ইতিহাস গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
[email protected]