স্বাধীনতার পঞ্চশ বছরে রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের সরকারের লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বহাল রাখা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি কিন্তু গত ৫০ বছরে আমরা বেসিক জিনিস রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি। এই স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে হলে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যদি আমরা বের করে আনতে চাই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
শরিক দলের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আসুন আমরা ঐক্য গড়ে তুলি। আন্দোলন শুরু করি, রাজপথে ফয়সালা হবে।
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ভোটাধিকার হরণের তৃতীয় বার্ষিকী। এই বিশেষ দিনটি গতকাল ছিল ৩০ ডিসেম্বর। এই দিনটিতে আমাদের যে নির্বাচন ব্যবস্থা সেটাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর আগে আমরা দেখেছি ভোটের দিন ভোট চুরি হয়, ডাকাতি হয়, জোর করে দখল করে নিয়ে যায়। কিন্তু এভাবে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট চুরি করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয় সেটা আমরা প্রথম দেখেছি ২০১৮ সালে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে এই অবস্থায় নিয়ে আসা, এটা হঠাৎ করে হয়নি। বহু আগে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে গ্রহণ করে খালেদা জিয়া সংবিধানে সংযোজন করলেন, যখন দেখা গেল বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এখানে কেন ভালো নির্বাচন হবে, কেন একটি সিস্টেম গড়ে উঠবে, কেন এখানে বিরোধী দল এবং সরকারের দল পারস্পারিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? গেলেই তো বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার একটি স্থিতিশীলতার দিকে গিয়ে আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে। তখন থেকে এই কাজগুলো শুরু হয়েছে।
আমলারা এখন একেবারে আকাশে উঠে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক-এগারোতে যে ঘটনাটা ঘটেছে, তারও আগে যখন বিএনপি জোটকে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারপর থেকে এই চক্রান্ত শুরু। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রক্রিয়া। এক-এগারোর পরে তাদের যে স্লোগানটা ছিল, ‘মাইনাস টু’। সেটাকে পরে শেখ হাসিনার তাদের সঙ্গে আঁতাত করে মাইনাস ওয়ানে নিয়ে এসেছেন। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা দেখছি এখন পর্যন্ত। ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচন হয় না। ডাকসুতে একবার নির্বাচন হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। সংসদ যে আছে সেখানে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। আমলারা এখন একেবারে আকাশে উঠে গেছে। রাজনৈতিক নেতা, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন তাদের কোনো মূল্যই নেই। একজন ওসি সরাসরি বলে আপনারা কে? আপনাদের তো আমরাই বানিয়েছি।
অর্থাৎ রাজনীতিকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে একটি সামরিক-আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করার প্রক্রিয়া করা হয়েছে। গতবার সংসদে তারা বলেছেনও। আমরা মালয়েশিয়ার মতো অথবা সিঙ্গাপুরের মতো রেজিমেন্টেড ডেমোক্রেসি দিতে চাই। তারা অজুহাত নিয়ে এলো উন্নয়নের জন্য আমাদের রেজিমেন্টেড ডেমোক্রেসি দরকার—বলেন ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আপনারা চিন্তা করে দেখুন ২০১৮ এর নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা কে পালন করেছে? এইচটি ইমাম। এইচটি ইমাম একজন পুরোপুরি আমলা। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সমস্ত আমলাদের একখানে করে এই ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে। আমরা যারা নির্বাচন করেছি, আমরা ভালো করে জানি, মাঠে নেমে কাজটা যারা করেছে তারা হলো পুলিশ। এমনকি বিচার বিভাগকে পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকে মনোনয়ন পেলেন, অনেকের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেল, কমিশনের গেলেন, হাইকোর্টে গেলেন। হাইকোর্টও সরকার যা দিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত দিলেন। তাদের যে লক্ষ্য একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বহাল রাখা।
তিনি বলেন, আগে বাকশাল করেছিল, সেটা এক্সপোজ হয়ে গেছিল। এখন বাকশালকে ঘোষণা দিয়ে নয়, মুখোশ পরিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।