সরকারের এজেন্সিগুলো বেআইনি গুমের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখেছে : রিজভী

  • অনলাইন প্রতিবেদক
  •  ১৯ আগস্ট ২০২৩, ২৩:০১
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। – ছবি : নয়া দিগন্ত

পৈশাচিক আক্রমনের পাশাপাশি সরকারি এজেন্সিগুলো বেআইনি গুমের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী

তিনি বলেন, ‘গত দেড় দশক ধরে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষণকারীদের গুম করা হয়েছে নির্বিচারে। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারো জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া বা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অস্বীকার করা এবং শেখানো বুলি বলার জন্য বর্বরোচিত শারীরিক উৎপীড়ণ করা অব্যাহত আছে। এ ক্ষেত্রে সরকার টার্গেট করেছে বিরোধী রাজনীতি শক্তির তরুণ যুবকদেরকে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে তার আজিমপুরস্থ বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ খবর শুনে তার বাসার সামনে তার সহকর্মী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো: হাসানুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর উপস্থিত হয়। এ সময় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা আকষ্মিকভাবে সেখানে হানা দিয়ে তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। সরকার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই আবারো নতুন করে গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন খেলা শুরু করেছে। তাদেরকে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হলেও বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গোয়েন্দা বিভাগ সেটি স্বীকার করছে না। তাদেরকে একটি ভয়ানক চক্রান্তের ফাঁদে ফেলার জন্যই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না। তাদেরকে উৎপীড়ণ করে তাদের মুখ দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অপচেষ্টা চলছে বলে সকলে মনে করছে।

তিনি অবিলম্বে মমিনুল হক জিসানসহ উল্লেখিত ছাত্র নেতৃবৃন্দকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার জোর আহ্বান জানান। অন্যথায় দায়ী ব্যক্তিদের চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে উন্মাদ হয়ে পরেছে। বিরোধী দল শূণ্য, নির্বাচনের মাঠ শূণ্য, ভোটার শূণ্য, নিস্তব্ধ পরিবেশে আওয়ামী ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আরেকটি অভিনব নিশিরাতের নির্বাচনের ছক আঁটতেই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচিতে বর্বরোচিত আক্রমণ করছে। তাদের পাশবিক আক্রমণে গণতন্ত্রকামী নেতাকর্মীরা ক্ষতবিক্ষত। এক রক্তপিপাসু হায়নার মতো আচরণ করছে ভোটার বিহীন আওয়ামী সরকারের আইনৃঙ্খলা বাহিনী।

রিজভী বলেন, ‘আগের মতোই গুলি, বন্দুক, দা, ছুরি, রামদা, লাঠি ও হকস্টিকসহ সকল প্রকার মরানাস্ত্র দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে আক্রান্ত করা হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে তারা হত্যা করেছে। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে প্রায় ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী চোখ হারিয়েছে। হাত-পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মীদের।

তিনি বলেন, ‘আজ হবিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা যেন রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী পদযাত্রার কর্মসূচি চলাকালে আজকে হবিগঞ্জ যেন সরকারি বাহিনীর গুলিতে বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির মতো গুলি করা হয়েছে বিএনপির পদযাত্রায়, অসংখ্য নেতা হবিগঞ্জ জেলার পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশের বর্বরোচিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডা. জাহিদুল কবির জাহিদসহ পাঁচজনকে কিছুক্ষণ আগে বিনা কারণে নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডা. জাহিদ একজন সৎজন চিকিৎসক। শুধুমাত্র বিএনপির ভিন্ন কর্মসূচিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাকে টার্গেট করে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা গনতন্ত্রকে হরণ করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য একটা এতিম জাতি তৈরি করতে চান। আর এই কারণেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে তিনি হাতের মুঠোয় নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকারীদের দমন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি দেশের জনগণকে পদদলিত করে অন্য দেশের হাত-পা ধরছেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। জনস্বার্থ বিরোধী এই সরকার এখন ভিন্ন দেশের আশীর্বাদ নিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামী নব্য নাৎসিরা দাঁত বের করেছে হিংস্রভাবে। তারা কোনোভাবেই জনগণের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দেবে না বলেই দেশের রাজধানীসহ জেলা, উপজেলায় রক্ত ঝরাচ্ছে। বিরোধী দলের মানবাধিকার এখন প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করা হয়েছে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের। বিরোধী দলকে প্রান্তিক পর্যায়ে ফেলে দিতে তারা পুলিশকে ছাত্রলীগ দিয়ে ঢেলে সাজিয়ে লেলিয়ে দেয়া হায়েছে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘এদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পরেছে বলেই ধারালো অস্ত্র নামিয়ে এনেছে জনগণের গলার ওপরে। আওয়ামী নাৎসিবাদের দোসররা কখনই গনতান্ত্রিক শক্তির মিত্র হতে পারে না। গত ১৫ বছর ধরে চক্রান্ত আর নিপীড়নের যাঁতাকলের ভেতরেও বিএনপি এখনো দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। শেখ হাসিনা আপনি বর্তমান একদলীয় নাৎসি শাসন টিকিয়ে রাখার ‘গেমপ্ল্যান’ আর বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। আপনাকে টিকিয়ে রাখার কুশিলবরা অনেক দুর্বল হয়ে গেছে এখন নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ খুঁজছে।