সংস্কার করেই নির্বাচন, ধৈর্য ধরতে হবে

সংস্কার করেই নির্বাচন, ধৈর্য ধরতে হবে

আওয়ামী লীগ বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সবকিছু ধ্বংস করে গেছে। এ জন্য দলটিকে সন্ত্রাস দমন আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরিবর্তনের পক্ষে। টেকসই গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। এ জন্য শুধু নির্বাচন দিলেই হবে না। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করতে হবে। সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে, ধৈর্য ধরতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা, আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন অভিমত দেন বিশিষ্টজন। ব্রেন ও আদর্শ প্রকাশনী এ সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দিনের পর দিন ভরসা রেখেছি। কিন্তু তারা গণতন্ত্রের জন্য কিছুই করেনি। নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য ছাত্র-জনতা প্রাণ দেননি। সে জন্য শুধু নির্বাচন দিলে হবে না, সংস্কার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ডিএনএর মধ্যেই ফ্যাসিজম– তা জুলাই অভ্যুত্থানে প্রমাণ হয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে তারা রাষ্ট্র কাঠামো চূর্ণবিচূর্ণ করেছে।’

প্রশ্ন রেখে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘খুনিদের রেখে যাওয়া পুলিশ দিয়ে কি কাজ করা সম্ভব? আমি যেভাবে চাইব, তারা তো সেভাবে কাজ করবে না। আমাদের নিয়ে সমালোচনা করুন। তবে একটু ভালোবাসা নিয়ে বলবেন। আমরা তো আওয়ামী লীগ না।’ বিপ্লবী সরকারের পরিবর্তে সাংবিধানিক সরকার গঠন নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট সেনাপ্রধানের আহ্বানে বিএনপি-জামায়াত গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চও গেছে। জাতীয় পার্টির তিন ভাগ গেছে। আমি এক কোনায় বসেছিলাম। কোনো দলই বিপ্লবী সরকার গঠনের কথা বলেনি।’

সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ টিকে ছিল ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে। ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।’ তিনি বলেন, ‘বিগত দিনের অপকর্মের জন্য আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সংস্কৃতিও খুব একটা বদলায়নি। রাজনৈতিক দলের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার করা সম্ভব নয়।’ আলী রীয়াজ বলেন, ‘দ্বিমত থাকবে। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বহুমত তৈরি করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান সত্যিকার অর্থে এসব সংস্কারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ’৭২-এর সংবিধান এখন অপ্রাসঙ্গিক। গত সাড়ে ১৫ বছরে তিনটি নির্বাচন এ সংবিধানের দোহাই দিয়েই হয়েছে। এখন কেন আন্দোলনকারীদের ওই সংবিধানের ধারাবাহিকতা বহন করতে হবে? তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা ও গণতন্ত্র হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। সন্ত্রাস দমন আইনেই দলটিকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে সরকার ব্যর্থ। গ্রামে যে সবজির কেজি ৩০-৪০, ঢাকার কারওয়ান বাজারে এসে পাঁচ হাত ঘুরে হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। শুধু হাত বদল হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও মামলার ব্যবসা চলছে। ২০০ জনের নামে মামলা হয়। নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফোন করে নাম কাটতে টাকা চাওয়া হচ্ছে। এখন সমন্বয়ক পরিচয়ে যারা অপকর্ম করছে, তারা আগের ৩৬ দিন চুপ ছিল।

সভায় ডা. জাহেদ উর রহমান, সাংবাদিক মনির হায়দার, সাহেদ আলম, আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

samakal