সংসদে খালেদা-তারেকের নাম নেয়ায় সরকারি দলের আপত্তি

বিএনপির হারুনের ওয়াকআউট

Daily Nayadiganta

সংসদে খালেদা-তারেকের নাম নেয়ায় সরকারি দলের আপত্তি – ছবি : সংগৃহীত

সংসদে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নাম নেয়ায় সরকারি দল ও বৈঠকে সভাপতিত্বকারি ডেপুটি স্পিকারের আপত্তির মুখে প্রতিবাদে বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। মঙ্গলবার দুপুরে বাজেট আলোচনার সময় এই ঘটনা ঘটে।

এসময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, আপনি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন এটি সুন্দর প্রস্তাব। কিন্তু আপনি এমন দু’জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যাদের কথা আমি সংসদের এই চেয়ারে বসে উচ্চারণ করতে চাই না। একটি নির্বাচিত সরকার কোনো কনভিক্টেড (দণ্ডিত) ব্যক্তির সাথে ঐক্য করতে পারে না। হারুনুর রশীদের বক্তব্যকে কিছু বক্তব্যকে অসংসদীয় উল্লেখ করে সংসদের প্রসিডিং থেকে তা বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এসময় হারুনকে বাজেটের উপর আরো এক মিনিট বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা জানান ডেপুটি স্পিকার।

তবে হারুন ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানালেও ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, আপনি সময় বাড়িয়ে দেননি। সংসদ নেতা বলার পর আপনি এক মিনিট সময় বাড়িয়েছেন। আমি আর বক্তব্য দেব না। আপনি আমার বক্তব্যে ইন্টারাপ্ট (হস্তক্ষেপ) করেছেন। এর প্রতিবাদে আমি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করছি।

হারুন সংসদ কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ডেপুটি স্পিকার বলেন, উনার (হারুনের) প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। সংসদে কোনো সদস্য অসংসদীয় বক্তব্য দিলে আমি অবশ্যই তা ইন্টারাপ্ট করব। এটা সরকারি দলের কেউ দিলেও করবো বিরোধী দলের কেউ দিলেও করবো।

ইন্নাল্লিাহ বলার ব্যাখ্যা তলব : এদিকে বিএনপির হারুনুর রশীদ এমপি গতকাল বাজেট বক্তব্যের সূচনা বক্তব্যে ‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইলাইহি রাজিউন’ আয়াতাংশটি পড়ে সামনে অগ্রসর হতে গেলে তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করে ব্যাখ্যা জানতে চান ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া।

হারুনের বক্তব্যের মধ্যে ফ্লোর নিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, হঠাৎ করে ইন্না লিল্লাহ পড়লেন কেন? এটা দিয়ে কোন বক্তব্যের শুরুর রেওয়াজ আমি আমার ৭ সময়ের এমপির মধ্যে দেখিনি। তবে হারুন বলেন, আমি ব্যাখা পরে দিবো। ডেপুটি স্পিকার বলেন, অবশ্যই আপনাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। অবশ্য পরে আর ব্যাখার সময় পাননি হারুন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণ দাবি : বাজেট আলোচনায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের অপসারণ দাবি করে হারুনুর রশিদ এমপি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকলঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটা পরিবর্তন করা দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিন।পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত ব্যক্তিদের বসান।

তিনি বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞরা দল বলেছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতিতে তারা হতাশ। তাই এই যে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট জাতীয় সংকট। এই সংকট উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলুন।

হারুন বলেন, সরকার কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করেছে এটি পর্যাপ্ত কি না? বাস্তবায়ন সক্ষমতা আছে কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও রাজনীতির চিন্তা করতে হবে। উন্নয়নের ব্যয় কমাতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রী পরিষদের আকার ছোট করতে হবে। ব্যাংক কমিয়ে মানুষ বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

পুলিশ বাহিনীর সমালোচনা করে বলেন, পুলিশের আইজিপি নতুন নতুন অসিহত দিচ্ছেন। যারা দেশের মানুষের আমানত নষ্ট করেছেন, হক নষ্ট করেছেন, তার জবাবদিহিতা আপনাকে করতে হবে। গত নির্বাচনের সময় পুলিশকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুলিশের উচ্চতর পদ মর্যাদার ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে অংশ গ্রহণ করা হয়েছে। এই পুলিশ দিয়ে কোন ভাবেই সৎ প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। পুলিশ সরকার ও আওয়ামী লীগের গোলাম এবং দাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা উত্তর ভবিষ্যৎ অর্থনীতি পথক্রমের জন্য যে ধরণের বাজেট প্রণয়ন দরকার ছিল সেটি সরকার সম্পূণরূপে ব্যর্থ হযেছে। বাজেট সংশোধিত আকারে প্রকাশ করার অনুরোধ করেন।