সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই বিষয়টি এমন না : রুমিন ফারহানা

সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই বিষয়টি এমন না : রুমিন ফারহানা – ছবি : সংগৃহীত

ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানে নেই বিষয়টি এমন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। রোববার জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আজকে একটি গণমাধ্যমের অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে ৫০ বছরে ৭৫ লাখ হিন্দু কমেছে। মাননীয় স্পীকার সংবিধানের ২/ক বলছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।

কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে সকল হামলা হয় সরকারদলীয় কিছু মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই ধরনের হামলার জন্য রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে দায়ী করছেন। আমরা ভুলে যাচ্ছি সংবিধানের ২/ক অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে অন্যান্য ধর্মালম্বীরা সম-অধিকার ও সমমর্যাদায় নিজেদের ধর্ম পালন করবেন। একই সাথে সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে আমাদের সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি তার একটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, একটি প্রজাতন্ত্র, একটি গণতন্ত্র, আরেকটি ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের সংবিধানে নেই বিষয়টি এমন না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বিবিএস এর প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭৪ সালে আমাদের যে জনসংখ্যা ছিল তার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের যে পরিমাণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবার কথা ছিল তাতো বাড়েনি বরং ৭৫ লাখ মানুষ কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে বিবিএস দুটি বিষয়কে সামনে এনেছে। একটি হচ্ছে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া মাইগ্রেশন। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাদের জন্মহার কম। অথাৎ একজন মুসলমান দম্পতি যে পরিমাণ সন্তান নেন, একজন হিন্দু দম্পতি হয়তো তার চেয়ে কম সংখ্যক সন্তান নেন। সেটি হচ্ছে দ্বিতীয় কারণ। তবে মূল (৫৩ শতাংশ) যে কারণ তারা দেখাচ্ছে সেটা হচ্ছে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া।

বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, মাননীয় স্পিকার যখন আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি, যখন ক্ষমতায় আছে এমন একটি সরকার যারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক সরকার বলে দাবি করে, যারা দাবি করে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় তাদের চাইতে আর কেউ ভালো কাজ করতে পারে না সেই সরকারের সময় কেন এরকম রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে? যেখানে বাড়ার কথা সেখানে ৭৫ লাখ হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে।

তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকার এই সরকার ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। আমরা যদি একটু খেয়াল করি ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রামু, সাথিয়া, হোমনা, মালুপাড়া, নাসিরনগর, ঠাকুরগাঁ, বানরীপাড়া, কলমাকান্দা, গোবিন্দগঞ্জসহ দেশটির প্রায় প্রতিটি জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও এর একটি ঘটনার বিচার হয়নি বরং তাদের কাউকে আবার পুরস্কৃত করা হয়েছে। কেন আমি পুরস্কৃত করার কথা বললাম মাননীয় স্পিকার? একটু আগেই তো সংসদ উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল ইউপি নির্বাচন নিয়ে। আমরা দেখেছি নাসিরনগরে এই ধরনের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ৩ জন ব্যক্তিকে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। পরে অবশ্য মিডিয়ায় যখন ভীষণ রকম প্রতিবাদ হয়, সমালোচনা হয় সেই সমালোচনার মুখে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এই যে মনোনয়ন দেয়া হলো সেটাই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিষ্কার করে দেয়।

এ সময় সংসদে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা হৈচৈ করলে রুমিন বলেন, মাননীয় স্পিকার ওয়াকআউট করে সংসদ খালি করে দিলে সরকার দলের মনে হয় সুবিধা হত। এত বেশি সুবিধা আমরা দিব না। যাই হোক শীতের আমেজের মধ্যে সংসদ জমে উঠেছে এটা একটি ভালো কথা।