শ্রম অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় গতকাল সোমবার রাতে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা শ্রম অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনকানুন ও নিজেদের শ্রম আইন মেনে চলছি। ফলে আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যে শ্রম অধিকার বিষয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’ ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে আরও অনেক সংস্কার হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) সই করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যাঁরা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাঁদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বাংলাদেশে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিকেরা আন্দোলনে নেমেছেন। আবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি কার্যকর করেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতি রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিজিএমইএর সভাপতি বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন। সেখান থেকে মুঠোফোনে গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েকবার শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। শ্রম বিধিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সংশোধনও হয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণে আইন ও বিধিমালা আরও শ্রমিকবান্ধব হয়েছে। আরও কিছু সংস্কারের কথা বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সেগুলো ধাপে ধাপে করা হবে। যেমন একসময় ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে কারখানার ৪০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষর লাগত। সেটিকে ধাপে ধাপে কমিয়ে ১৫-২০ শতাংশে আনা হয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে সংস্কার করতে চাই। কারণ, একবারে সবটা করলে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থাকবে না। তাতে শ্রমিকেরাই চাকরি হারাবেন। তাই শ্রম অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও দেশের শ্রম আইন সবাই যেন পরিপালন করে, তাতে আমরা জোর দিচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ৯৭ শতাংশ পণ্যে জিএসপি সুবিধা দিত। কিন্তু তার মধ্যে তৈরি পোশাক ছিল না। আফ্রিকার অনেক দেশকে তারা জিএসপি সুবিধা দেয়। অথচ সেসব দেশে শ্রম অধিকার বেশি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাই আমরা।’
ফারুক হাসান বলেন, ‘পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, শ্রম অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিতে অনুরোধ জানাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই নীতি নিয়ে করণীয় কিছু আছে কি না, সে বিষয়ে আমরা শিগগিরই আলোচনায় বসব। কারণ, বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।’
সূত্র : প্রথম আলো