চীনা ঋণে হচ্ছে ৪২৮২ কোটি টাকার প্রকল্প

jugantor

 হামিদ-উজ-জামান 
 ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
মোংলা বন্দর

আধুনিক সুবিধা বাড়ছে মোংলা বন্দরের। এজন্য হাতে নেওয়া হচ্ছে ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫০০ কোটি ৩৯ লাখ এবং চীনের দেওয়া ঋণ থেকে ৩ হাজার ৭৮২ কোটি ৩৬ লাখ বা প্রায় ৩৫ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সোমবার যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার্থে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় যুক্ত আছে। এটি সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। চীন থেক ৩৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ইউএস ডলারের সমপরিমাণ ২ হাজার ৫৩১ মিলিয়ন চাইনিজ ইউয়ান পাওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চুক্তি স্বাক্ষরসহ পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ঋণের ধরন হিসাবে বলা হয়েছে এটি জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতির ঋণ হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যেমন ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে মোংলা বন্দর একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এটি জল ও স্থলভাগের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে। কিন্তু এখানে কোনো কনটেইনার জেটি নেই। এই বন্দরে বর্তমানে ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং ১ লাখ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। নিরাপদ ও দ্রুত পণ্য পরিবহণ বিবেচনায় এবং অর্থনেতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎপাদনকারী হতে ভোক্তা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্য পরিবহণে গুরুত্ব পাচ্ছে কনটেইনারাইজেশন। কনটেইনার জাহজের জন্য নির্ধারিত কনটেইনার বার্থ, স্টাফিং আন স্টাফিং এবং যথাযথ সংরক্ষণ করার জন্য কনটেইনার ইয়ার্ড প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব বিবেচনায় মোংলা সমুদ্র বন্দরের আধুনিকায়নের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোংলা বন্দর দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের সীমান্ত এলাকার কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এসব দেশের জন্য ট্রানজিট কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা বিদ্যমান। এছাড়া খুলনা-মোংলা রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি শেষ হলে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিং অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, প্রশাসনিক ও অন্যান্য অস্থায়ী কাজ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এছাড়া ভূমি উন্নয়নে ৩২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পেভমেন্টের (আরসিসি ওয়ার্কস) জন্য ৫৫৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। মেরিন স্ট্রাকচার তৈরিতে ৬৬৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট কিনতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৬ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা।

একনেকে উঠতে যাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্প। এছাড়া ফেনী (মোহাম্মদ আলী বাজার)-ছাগলনাইয়া-করেরহাট সড়ক প্রশস্তকরণ এবং ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু নির্মাণ। ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক সেতু ও কালভার্টগুলোর জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নং গুদারাঘাটের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন। রায়েরবাজার এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ। মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন। চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল এবং কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন। হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প। সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। কৃষক পর্যায়ে বিএডিসির বীজ সরবরাহ কার্যক্রম জোরদারকরণ। মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন। মেঘনার শাখা নদীর ভাঙন হতে হিজলা উপজেলাধীন পুরাতন হিজলা, বাউশিয়া ও হরিনাথপুর এলাকা রক্ষা। শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন হতে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) এবং উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ গ্রহণে নারীর সামর্থ্য উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প।