মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরের তিনটি গ্রামে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ৫১টির বেশি শক্তিশালী গ্রেনেড বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। নাফ নদীর ওপরের নাকপুরা, বলিবাজার ও কাওয়ারবিল এলাকার বিকট শব্দের ওই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে টেকনাফ সীমান্তের অন্তত সাত কিলোমিটার এলাকা।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, নাকপুরা, কাওয়ারবিল ও বলিবাজারে থাকা সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের ( বিজিপি) একাধিক সেক্টর ও সীমান্তচৌকি দখলের জন্য হামলা চালাচ্ছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। আরাকান আর্মিকে প্রতিহত করতে আর্টিলারি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী।
টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের সাত কিলোমিটারের মধ্যে থাকা লোকজন শেষরাতে ওপারের শক্তিশালী বিস্ফোরণ শুনতে পেয়েছেন। অন্ধকার রাতে মর্টার শেল বিস্ফোরণের (আগুনের শিখা) ঝলক এপার থেকে দেখা যায়।
টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সাত থেকে আট দিন ধরে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের দক্ষিণ-পূর্বের শহর রাচিডংয়ে হামলা বাড়িয়েছে এবং গত রোববার রাতে রাচিডং শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে।
এরপর পাশের বুচিডং ও মংডু শহর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। দিনের বেলায় উভয় পক্ষ চুপচাপ থাকলেও রাতের বেলায় সরকারি অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে আরকান আর্মি। মংডু থেকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ে (আকিয়াব) যাতায়াতের মধ্যভাগে রাচিডং ও বুচিডং শহরের অবস্থান।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, সাত থেকে আট দিন ধরে দিনের বেলায় গোলাগুলি–সংঘাত বন্ধ আছে, কিন্তু তিন দিন ধরে মধ্যরাতে মংডুর উত্তরে নাকপুরা, কাওয়ারবিল, বলিবাজারসহ কয়েকটি গ্রামে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটছে। সম্ভবত সেখানকার সেনাবাহিনী ও বিজিপির ঘাঁটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।
স্থানীয় কয়েক জনপ্রতিনিধি জানান, গতকাল সারা দিন শান্ত পরিস্থিতি গেলেও রাত দুইটার দিকে ওপারে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটছিল। ভোর চারটা পর্যন্ত ৫০টির বেশি বিস্ফোরণ শোনা যায়। এরপর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ কানে আসেনি।
হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি বলেন, টানা দেড় মাসের বেশি চলমান সংঘাত ও শক্তিশালী মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় টেকনাফ সীমান্তের চারটি ইউনিয়নের অন্তত ২১ হাজার মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন। এর মধ্যে অন্তত সাত হাজার জেলে মাছ শিকারে নাফ নদীতে নামতে পারছেন না।
আরও অন্তত ১৩ হাজার কৃষক ও মৎস্যজীবী ধান–শাকসবজির চাষাবাদ এবং কাঁকড়া–চিংড়ি উৎপাদনের জন্য নাফ নদীর তীরের জমিতে যেতে পারছেন না। পবিত্র রমজান মাসে পরিবারগুলোর দুর্বিষহ জীবন কাটলেও এ পর্যন্ত সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে কোনো সহায়তা পায়নি।
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে টেকনাফ–২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
prothom alo