Prothom Alo
ঢাকা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে ২৭টি। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। এখনো পলাতক ১৩২ জন।
আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে মারা গেছেন একজন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে গত ২৫ জুন মামলা ও গ্রেপ্তার–সংক্রান্ত এসব তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তা মিস কেস বা বিবিধ মামলা হিসেবে ট্রাইব্যুনালে নথিভুক্ত হয়। এরপর তদন্ত সংস্থা ওই অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে মিস কেস মামলায় রূপ নেয়। এরপর ফরমাল চার্জ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গঠনের আদেশ দিলে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪২৯টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৪টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর তিনটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে।
সে হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাও রয়েছে। বাকি দুটির একটি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলা। অন্য মামলাটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪২৯টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৪টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর তিনটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। জুলাই মাসের মধ্যে আরও ৫-৭টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হতে পারে। এসব মামলার বিচার যদি শুরু হয় আর যদি আদালত চান, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ট্রায়ালের (বিচারের) পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গত বছরের ১ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়। দ্রুতই এ আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। একপর্যায়ে কোটা বাতিলের এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। টানা ৩৬ দিনের সেই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী আজ। এই গণ-অভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়, যার বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারি গেজেটে এখন পর্যন্ত উল্লেখ আছে।
তিনটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। জুলাই মাসের মধ্যে আরও ৫-৭টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হতে পারে। এসব মামলার বিচার যদি শুরু হয় আর যদি আদালত চান, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ট্রায়ালের (বিচারের) পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর
শেখ হাসিনার বিচার কোন পর্যায়ে

গণ-অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এখন চারটি মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার দায়; চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যার দায় এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়।
এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি।
এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে—এমন চেষ্টা থেকেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। সেই সময় সংঘটিত সব অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে সব অপরাধীরও ‘প্রাণভোমরা’ ছিলেন শেখ হাসিনা।
ট্রাইব্যুনালে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাসহ চারটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অগ্রগতি দৃশ্যমান।
এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হবে আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই)। পলাতক থাকায় তাঁর পক্ষে এ মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলা হয়েছে। আগামী ২৪ আগস্ট এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারিত রয়েছে।
শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলাতেও। এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা আগামী ১২ আগস্ট।
আদালত অবমাননার অভিযোগেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা আছে ট্রাইব্যুনালে। আগামীকাল বুধবার এ মামলার শুনানি আছে।
দেশের যেকোনো বিচারব্যবস্থার চেয়ে এখানে (ট্রাইব্যুনালে) দ্রুত বিচার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল আইনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বিচার শুরু হয় মূলত চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম, প্রসিকিউটর
আরও তিন মামলায় অগ্রগতি
ট্রাইব্যুনালে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাসহ চারটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় অগ্রগতি দৃশ্যমান। বাকি তিন মামলার মধ্যে চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে। এ মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি। বাকিরাও পুলিশের সাবেক সদস্য।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর ঘটনায় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয় ১৯ জুন। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামীকাল বুধবার।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গতকাল সোমবার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন। আসামিদের মধ্যে গ্রপ্তার করা হয়েছে চারজনকে।
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের যেকোনো বিচারব্যবস্থার চেয়ে এখানে (ট্রাইব্যুনালে) দ্রুত বিচার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল আইনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বিচার শুরু হয় মূলত চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) গঠনের মাধ্যমে।
যদিও এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন হয়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ১৭ জন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আলোচিত যাঁরা
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ১৭ জন। তাঁরা হলেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামরুল ইসলাম, শামসুল হক, আতিকুল ইসলাম, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহ্মেদ পলক ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল, পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক সহকারী কমিশনার জাবেদ ইকবাল, রাঙামাটি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, মিরপুর বিভাগের সাবেক এডিসি মইনুল ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, সাবেক এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম, উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. মুজিবুর রহমান, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মোহাম্মদ আরশাদ হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক চঞ্চল চন্দ্র সরকার ও মালেক, সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ইমাজ হোসেন, মো. নাসিরুল ইসলাম, মো. সুজন হোসেন, মুকুল চোকদার, হোসেন আলী ও মো. আকরাম হোসেন।
এ ছাড়া সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহিনুর মিয়া, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বশির উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ (নিষিদ্ধ সংগঠন) নেতা ইমরান চৌধুরী প্রমুখ গ্রেপ্তার আছেন।
পলাতক আসামিদের মধ্যে একটি অংশ বিদেশে চলে গেছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, হাছান মাহমুদ, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বেনজীর আহমেদকে ফিরিয়ে আনতে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে সরকার। বেনজীর ছাড়া কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারপোল।
পলাতক যত নেতা
প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, হাছান মাহমুদ, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বেনজীর আহমেদ, হাসান মাহমুদ খন্দকার, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও ইমরান এইচ সরকার। এ ছাড়া পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল প্রমুখ।
পলাতক আসামিদের মধ্যে একটি অংশ বিদেশে চলে গেছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, হাছান মাহমুদ, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বেনজীর আহমেদকে ফিরিয়ে আনতে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করে সরকার। বেনজীর ছাড়া কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারপোল।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বলেছে, ইন্টারপোল এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। যদি এটা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে।
গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যে অগ্রগতি, তাতে অসন্তুষ্ট শহীদ পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’–এর সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল।
বিচার দ্রুত করার দাবি শহীদ পরিবারের
শহীদ পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’। এর সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল। তাঁর ছোট ভাই ইমাম হাসান ভূঁইয়া (তাইম) গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী-সেতুর কাছে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যে অগ্রগতি, তাতে অসন্তুষ্ট রবিউল আউয়াল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরে ট্রাইব্যুনালে কেন একটি মামলারও আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো না? বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি জানান তিনি।
রবিউল আউয়াল বলেন, সরকার আইন সংশোধন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থাকে আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়েছে। তারপরও আসামি গ্রেপ্তার কম হচ্ছে। জুলাই শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানান তিনি।
‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই’
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে এখনই অবশ্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশে নতুন একটি পরিস্থিতি। তাদের (প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা) সুযোগ দেওয়া দরকার। পরবর্তী সরকার এসেও বিচার অব্যাহত রাখবে। তা ছাড়া এখন দুটি ট্রাইব্যুনাল হয়েছে। আশা করা যায়, বিচারকাজ আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।