অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কিছু বিমান আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এয়ারক্রাফট, তুলা, সয়াবিন, গম আমদানির উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সচিবের অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এর আগে কিছুটা বাড়তি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির ঘোষণা দেয় সরকার।
বাণিজ্য সচিব জানান, পাল্টা শুল্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরশু বৈঠক হবে। তিনি বলেন, শুল্ক চুক্তির খসড়া পাওয়ার পর কয়েক দফায় আমরা কাজ করেছি। ওয়াশিংটনে দুই দফা সরাসরি এবং অনলাইনে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২৩শে জুলাই আমরা আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। এরপর তাদের কাছে নতুন করে সময় চেয়েছি।
মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) অফিস ২৯ ও ৩০শে জুলাই সরাসরি বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব উপস্থিত থাকবেন। আমরা যখন ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় বসবো, তখন আমাদের ব্যক্তি খাতের যে ব্যবসায়ীরা, তারাও বসবেন ওই সমস্ত এসোসিয়েশনের সঙ্গে। আশা করি যে, সেখানে তাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা হবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, ৩১শে জুলাই সেখানে আরেকটি সভা হতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আজ সন্ধ্যায় রওনা দেবে। যেহেতু তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, ফলে আগামী ১লা আগস্টের যে সময়সীমা আছে, তার মধ্যেই হয়তো শুল্কের বিষয়ে ফলাফল ঘোষিত হয়ে যাবে বলে আমাদের ধারণা।
বোয়িং বিমান কেনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, বোয়িংয়ের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নয়, এটি বোয়িং কোম্পানি করে।
বাংলাদেশ মোট ২৫টি বোয়িংয়ের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। অন্য দেশও এমন ক্রয়াদেশ দিয়েছে। যেমন ভারত ও ভিয়েতনাম ১০০টি করে এবং ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং বিমান অর্ডার দিয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন বোয়িং কোম্পানি তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহ করবে। অর্ডারের বোয়িং পেতে অনেক সময় লাগবে। যারা আগে অর্ডার দিয়েছে, তাদের আগে দেবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী বিমান সরবরাহ করবে। বাংলাদেশের অতিদ্রুত কিছু বোয়িং দরকার। আগামী দু’-এক বছরের মধ্যে হয়তো কয়েকটি বিমান পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ বিমানের বহর বাড়াতে হবে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, এই পরিকল্পনা সরকারের বেশ আগে থেকেই ছিল। আগে ১৪টি বোয়িংয়ের অর্ডার ছিল। পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার, হ্যাঙ্গার বোয়িংনির্ভর। তাই বোয়িং কিনতে হবে। পাশাপাশি এয়ারবাস বা অন্যান্য বিমান যে কিনবো না, তেমন নয়। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কেনা হবে, সেটি বলা হয়নি। সুবিধা আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বিভিন্ন জিনিস আমদানি করা হয়। অসুবিধা থাকলে ব্যবসায়ীরা আনতো না। সরকার কাউকে চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনার প্রভাব বাজারে পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে সয়াবিন ও তুলা আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিন আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তুলা আমদানি নিয়ে আগেই আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তাদের উদ্দেশ্য এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, সে জন্যই পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। সরকারি খাত-বেসরকারি খাত মিলিয়ে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। কখনই একটি দেশ থেকে এ গম আনা হতো না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি হতো। রেড সি এলাকায় পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা আগের মতো নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার ওপর নির্ভরশীলতা রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে গম আনা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে নেয় না।
বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৮ বিলিয়ন কেনে, যা আমাদের কাছ থেকে কেনে, সুতরাং তার কাছ থেকেও আমাদের কেনা উচিত। আমাদের একটু অগ্রসর হওয়া উচিত। বেসরকারি খাতকে অনুরোধ করেছি, সেখান থেকে কিনে শুল্ক ইস্যুতে সহায়তার জন্য।
বাণিজ্য সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে চীনের ওপর চাপ সবার চেয়ে বেশি পড়ছে। তাদের ওখান থেকে উৎপাদন স্থানান্তর হতে পারে। সেটার হিস্যাদার আমরাও হতে পারি। আরেকটি দেশ থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক পণ্য আমদানি করলে সেটি চীন বা অন্য দেশের সঙ্গে টানাপড়েন তৈরির কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ভিয়েতনাম বা ভারতের ওপর যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তার চেয়ে কম সুবিধা পাবে- এমন মনে করছি না। প্রতিযোগীদের চেয়ে আমাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বেশি চাপিয়ে দেবে এমন মনে করছি না।
উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ১৬২ সিটের ৪টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৪১৯ সিটের ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এবং ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার এয়ারক্রাফট রয়েছে।