শীর্ষ নেতারা কারামুক্ত, ব্যর্থতা কাটাতে কোন পথে এগোবে বিএনপি

কারাবন্দি দলের শীর্ষ নেতারা মুক্তি পেয়েছেন; এবার কী করবে বিএনপি? দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলটির নেতারা বলেছিলেন– এ মুহূর্তে দলের গণগ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীকে মুক্ত করাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। দলীয় নেতাকর্মীর মুক্তির পরই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। সম্প্রতি দলের প্রায় সব নীতিনির্ধারক নেতাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এখন রাজনৈতিক সচেতন মহলে একটাই প্রশ্ন– সামনে কীভাবে এগোবে বিএনপি? নির্বাচন বর্জনকারী প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে রাজপথে টানা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে, নাকি গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা এড়াতে ‘দায়সারা’ ও ‘গণসংযোগমূলক’ কর্মসূচি দিয়ে পাঁচ বছর পর আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে– এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে এবং দলের নেতাকর্মীর মধ্যে। অবশ্য দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনে আছেন এবং থাকবেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প পথও খোলা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ১৫ বছরে তিন দফায় আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও ‘হাল’ ছাড়ছে না বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা কারামুক্ত হওয়ার পর নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবির আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না দলটি। দেশের জনগণও দলটির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে দাবি করেন বিএনপি হাইকমান্ড। একই সঙ্গে তাদের দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা হিসেবে নানা উদাহরণও দিচ্ছেন তারা। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি বলে বক্তব্য ও বিবৃতি অব্যাহত রেখেছে বলে জানান দলের নেতারা।

এমনকি সরকার দাবি পূরণ না করলেও ‘নৈতিকভাবে দুর্বল’ অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। সামনে দেশের ‘অর্থনৈতিক সংকট’ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। দেশি-বিদেশি সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজপথে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিরোধী দলটি। এ লক্ষ্যে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগের আন্দোলনের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে হাঁটতে চায় তারা।

সদ্য কারামুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল শুক্রবার সমকালকে জানান, তারা কারামুক্ত হলেও মহাসচিবসহ অনেকে এখনও অসুস্থ ও চিকিৎসাধীন। তাছাড়া বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই আছে। পবিত্র রমজান মাসেও ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চলছে। রজমানের পর দল ও যুগপৎ আন্দোলনের সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনের দিনক্ষণ ও ধরন এ মুহূর্তে আগাম বলা যাবে না। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণ হবে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর একে একে গ্রেপ্তার হন বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সব নেতার জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর অবশ্য পর্যায়ক্রমে দলটির নেতারা কারামুক্তি পেতে থাকেন। ইতোমধ্যে শীর্ষ, কেন্দ্রীয়, মহানগরসহ মাঠপর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পেয়ে মুক্ত হয়েছেন।

বিশেষ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ। এ ছাড়া আগাম জামিনে মুক্ত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।

তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে জহির উদ্দিন স্বপন গেছেন ব্যাংককে। অসুস্থ অপর নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেক দিন কারাগারে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। বর্তমানে তারাও দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাশাপাশি দলীয় ইফতার মাহফিলের কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন তারা।

হাল ছাড়বে না, রাজপথে নামার প্রস্তুতি

দলটির নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা জামিনে কারামুক্তির পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। কারামুক্ত অন্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

সূত্র জানায়, ওইসব বৈঠকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মুখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, রাজপথের আন্দোলন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াগুলোর চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। বিশেষ করে আন্দোলন মোকাবিলায় সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্রাসী মনোভাব, রাজপথে দল ও সমমনা দলগুলোর উপস্থিতি, গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের সঙ্গে কারাগারে আচরণসহ সার্বিক বিষয়াদি আলোচনা করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

বিএনপির নেতারা জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা, পৃথিবীর অনেক সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে অসুস্থ শীর্ষ নেতাদের দ্রুত সুচিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিলের কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ডামি নির্বাচন করেছে– এটা শুধু দেশের মানুষ নয়, সারাবিশ্ব জানে। কীভাবে এই ডামি সরকারকে হটানো যায় তা চিন্তাভাবনা করেই এগোতে হবে। মানুষকে সজাগ করতে হবে। সবকিছু নতুন করে সাজাতে হবে। রমজানের পর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জিয়ার বিএনপি না হলেও ৯১-র বিএনপি গড়া

দলীয় সূত্র জানায়, দেরিতে হলেও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপলব্ধি হয়েছে, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ের ১৯ দফার আলোকে গড়া বিএনপি না হলেও ১৯৯১ সালের খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের মতো বিএনপিকে গড়তে হবে। অভিমানে ও বঞ্চিত হয়ে সরে যাওয়া নেতাদের একত্রিত করতে হবে। এ উপলব্ধি থেকেই দলটির নেতারা দেরিতে হলেও মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর দলের হেভিওয়েট নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা বুঝতে পারিনি যে, আমাদের বাইরে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন করতে চায়। তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে দাবি না মানলে দলের ‘বিকল্প সিদ্ধান্ত’ কী হবে– তা না নেওয়ার ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করেন তিনি।

অন্যদিকে, কারামুক্ত হয়ে প্রবীণ নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি তাঁকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি দল থেকে নির্বাচনে যাননি এবং যাবেনও না।

এই দুই নেতার দুটি বক্তব্য থেকে দলের ভেতর নতুন উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়, অবমূল্যায়িত হয়ে হাফিজ উদ্দিন দলের ভেতর কোণঠাসা হয়েও দল ত্যাগ করেননি। অপর নেতা মির্জা আব্বাস আগে সত্য কথাটি না বললেও নির্বাচনের পর বলেছেন। এমনকি তাঁর দেওয়া বক্তব্য সংশোধনের জন্য পরদিন সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও নিজের বক্তব্যটিতে অটল থাকেন তিনি।

একজন সিনিয়র নেতা জানান, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পটপরিবর্তনে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আর ক্ষতি করা যাবে না। এই উদ্যোগ দলের শুধু শীর্ষ নেতৃত্বের নয়– জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, জিয়া পরিবারের প্রতি আস্থাশীল, দলের প্রতি প্রতিশ্রুতি রেখে নৈতিক শক্তি নিয়ে কিংবা ‘সৎসাহস’ নিয়ে সবাইকে আগামীর পথ চলার নীতি তৈরি করতে হবে।

বিএনপির অপর একজন নেতা বলেন, শুধু ‘ইয়েস মার্কা’ নেতাদের দিয়ে দেশ ও দলের মঙ্গল হবে না। দেশ, গণতন্ত্র ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় ফোরামে ‘সত্য কথা’ বলতে হবে। ’৯১ সালে বিএনপি যেভাবে মানুষের কাছে ‘গ্রহণযোগ্যতা’ অর্জন করেছিল– এখনও তা করতে হবে। বিএনপির ব্যাপক ‘জনপ্রিয়তার’ কথা উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, কেন এই জনপ্রিয়তাকে আমরা কাজে লাগতে পারছি না। দলের প্রথম দিকের ছাত্র নেতারা এখন সিনিয়র বিএনপি নেতা হয়ে গেছেন। তারাও যদি সৎসাহস নিয়ে দলকে নেতৃত্ব না দেন, তাহলে দলের ভবিষ্যৎ কোথায় যাবে– প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নানা পরিকল্পনা

বিগত ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের আন্দোলনের ‘ব্যর্থতা’ থেকে ‘অভিজ্ঞতা’ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে দলটিতে। আন্দোলনগুলোতে দলের ভেতর ও বাইরে নানা সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপি মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে ত্যাগী, যোগ্য নেতাকর্মীর মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। যথাযথ মূল্যায়নের অভাবে অভিমানে দূরে থাকা নেতাদের একত্রিত করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের ভেতর অবমূল্যায়িত প্রবীণ নেতা মেজর হাফিজকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য নেতাদেরও মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। শিগগির দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠন ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত ছিল দলটির। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের সঙ্গে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে পর্দার আড়ালে আরও বেশি করে তৎপরতা চালাতে হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক এক নেতা জানান, এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে। শীর্ষ নেতারা সবাই সুস্থ হলে আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সমমনাদের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিএনপি এককভাবে গ্রহণ করায় ক্ষুব্ধ তারা। একই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার ইস্যুতে একমত নন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। প্রতিবেশীকে দূরে সরিয়ে না দিয়ে সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষে তারা। এ পরিস্থিতিতে সমমনাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিএনপি নেতাদের কারামুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ‘আইওয়াশ’ ছাড়া আর কিছু নয়। যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশিরা নির্বাচনকে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’ অনুযায়ী হয়নি বলছে, তখন তাদের মুখ বন্ধ করতে বিরোধী নেতাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তার পরও আমরা অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে সামনে পথ চলার কৌশল নির্ধারণ করব। যেভাবে আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন, সেভাবেই আমরা এগোব। এর আগে দলকে শক্তিশালী, সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।

অনেক কিছু বিচার-বিবেচনায় নিয়েই এগোতে হবে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এখন কেউ কেউ মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিভ্রান্তি ও আত্মঘাতীমূলক কথাবার্তা বলছেন। কারণ, যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করতে না পারলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় না। ১৯৯৪-৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিকে আওয়ামী লীগ-জাপা-জামায়াত চাপের মধ্যে ফেলে দাবি আদায় করেছে। এখন দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাও বিবেচনায় নিতে হবে। দলীয় কর্মীর বাইরে গিয়ে জনগণকেও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ মুহূর্তে তাদের দল গোছানোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তারপর দাবি-দাওয়া নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত হবে। দলের দু’জন শীর্ষ নেতৃত্বের অবর্তমানে এমন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত, যিনি দলকে সত্যিকার অর্থে নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

samakal