ঘটনার শুরু ২০১৮ সালে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। সেই চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে খুশি হওয়ার কথা সিটি করপোরেশনের; কিন্তু ঘটনা গড়াল ভিন্ন দিকে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শাহবাগে যে শিশুপার্ক রয়েছে, সেটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্পের (স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ–তৃতীয় পর্যায়) আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৭৮ কোটি টাকা দেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর কারণ ওই প্রকল্পের জন্য শিশুপার্কের নিচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পার্কিং হবে। এতে পার্কের কিছু রাইড (খেলনার উপকরণ ও বিনোদনের সরঞ্জাম) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন রাইড কেনার পাশাপাশি পার্কের আধুনিকায়নের জন্য মূলত ওই টাকা দিতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এত ‘অল্প টাকায়’ আধুনিকায়নের কাজটি করা যাবে না উল্লেখ করে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
এরপর ২০২০ সালের মে মাসে শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব নেন। কিছুদিন পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবের বিষয়টি তাঁর নজরে আসে; কিন্তু তিনিও মন্ত্রণালয়ের ৭৮ কোটি টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করেন, শিশুপার্কের আধুনিকায়নের কাজটি সিটি করপোরেশন নিজেরাই করবে। পরে তাঁর উদ্যোগে শিশুপার্ক নিয়ে ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছোট কাজকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর একটা প্রবণতা ছিল। শাহবাগের শিশুপার্কের ক্ষেত্রেও এটি দেখা গেল।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, সভাপতি, বিআইপি
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করিয়ে নেন তৎকালীন মেয়র তাপস। প্রকল্প পাসের সময় ঠিক হয়, ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে ৪৮৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। সরকারের দেওয়া টাকার অর্ধেক হবে অনুদান, বাকিটা ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে। আর দক্ষিণ সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে ১২০ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পের বেশির ভাগ ব্যয় (৪৪১ কোটি টাকা) ধরা হয় শিশুপার্কের জন্য ১৫টি রাইড কেনা ও স্থাপনে। এসব রাইডের দাম নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারি খাতে বিনোদনকেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনজন উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাইডের যে দর দেখানো হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। সরকারি কাজ, তাই অস্বাভাবিক বেশি দাম ধরা হয়েছে। বিভিন্ন রাইডের দাম এতটা বেশি কেন ধরা হয়েছে, তা কারও না বোঝার কারণ নেই।
একসঙ্গে ৩০ জন চড়তে পারে এমন একটি রাইড ‘মাইন ট্রেন’ (মাইন কোস্টার নামেও পরিচিত) কেনা ও স্থাপন করার জন্য ৯৭ কোটি টাকা খরচ করার কথা প্রকল্পে উল্লেখ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। এই রাইডের জন্য প্রকল্পে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য ও মানের কথা বলা হয়েছে, তাতে এর দাম কোনোভাবেই ৫ কোটি টাকার বেশি হবে না। ঢাকা ও এর আশপাশের চারটি বড় বিনোদনকেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শাহবাগে যে শিশুপার্ক রয়েছে, সেটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্পের (স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ–তৃতীয় পর্যায়) আওতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৭৮ কোটি টাকা দেবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মাইন ট্রেনের দাম কত হতে পারে, তা জানতে পরে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে হেনান স্নোডার অ্যামিউজমেন্ট রাইডস কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, ৩০ আসনের একটি মাইন ট্রেন (সিটি করপোরেশনের দেওয়া বিবরণসহ) বাংলাদেশে এসে স্থাপন করার জন্য ব্যয় হবে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্যদিকে আরেকটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, খরচ হবে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব যন্ত্র আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য দাম বেশি পড়ছে। এরপরও দরপত্রের মাধ্যমে কম দামে যন্ত্র কেনা গেলে তাঁরা সেটা কিনবেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছোট কাজকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর একটা প্রবণতা ছিল। এটা করতে গিয়ে বেশির ভাগ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতো। শাহবাগের শিশুপার্কের ক্ষেত্রেও এটি দেখা গেল। এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বিগত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা চলতেন খেয়ালখুশিমতো, কোনো কিছুই তোয়াক্কা করতেন না তাঁরা।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান
এই প্রকল্পে ‘১২ডি থিয়েটার’ (দর্শকের কাছে মনে হবে সবকিছুই যেন জীবন্ত) স্থাপন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি টাকা। এই থিয়েটারের ভেতরে একসঙ্গে ৩৬ জন মানুষ বসতে পারবে। এ ধরনের একটি থিয়েটার নির্মাণ করতে সাকল্যে সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয় বলে জানান ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি বিনোদনকেন্দ্রের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একই আকৃতির থিয়েটার কেউ যদি ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ডে নির্মাণ করেন, তাহলে সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা খরচ হবে।
কিন্তু এত ‘অল্প টাকায়’ আধুনিকায়নের কাজটি করা যাবে না উল্লেখ করে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তখন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
এই প্রকল্পের অন্য রাইডগুলোর মধ্যে ‘ডিসকো মেগার’ দাম ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এই রাইড মূলত নৌকা আকৃতির কাঠামো, ভেতরে ৪০ জন বসতে পারে। রাইডটি দুলতে থাকে। এ ছাড়া ‘সুপার এয়ার রেসের’ দর ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এটি দেখতে কিছুটা নাগরদোলার মতো। আশুলিয়া ও নরসিংদীর দুটি বিনোদনকেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ ভালো মানের হলেও রাইড দুটির দাম ২০ কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। যদিও সিটি করপোরেশন রাইড দুটি কিনতে চাইছে ৭৭ কোটি টাকায়।
এমনকি সিটি করপোরেশনের এই প্রকল্পে একটি জিপ গাড়ি (এসইউভি বা স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল) ও একটি পিকআপ কেনার জন্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। পার্কের আধুনিকায়নে এই গাড়ি কী কাজে লাগবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
একসঙ্গে ৩০ জন চড়তে পারে এমন একটি রাইড ‘মাইন ট্রেন’ (মাইন কোস্টার নামেও পরিচিত) কেনা ও স্থাপন করার জন্য ৯৭ কোটি টাকা খরচ করার কথা প্রকল্পে উল্লেখ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। এই রাইডের জন্য প্রকল্পে যে ধরনের বৈশিষ্ট্য ও মানের কথা বলা হয়েছে, তাতে এর দাম কোনোভাবেই ৫ কোটি টাকার বেশি হবে না।
সাধারণত দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনুমোদন হওয়ার পর কাজ শুরু হতে বেশ দেরি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেড় বছরও সময় লাগে। কিন্তু এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। তাপসের পছন্দের পাঁচজন ঠিকাদারকে কাজটি ভাগ করে দেওয়া হয়। অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্প পাস হওয়ার পর দ্রুতই ৫৫ লাখ টাকা ছাড় করা হয়। চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা ছাড় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শিশুপার্কের আধুনিকায়নের নামে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে রাইড কেনার প্রকল্প শিগগিরই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, রাইডগুলোর দর নতুন করে যাচাই-বাছাই করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন দর ঠিক করতে হবে।
৭৮ কোটি টাকায় যে কাজ করা যেত, সেই কাজ ৬০৪ কোটি টাকায় করা আসলে লুটপাটের আয়োজন বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সাবেক মেয়র তাপসসহ যাঁরা লুটপাটের এ আয়োজনে সহায়তা করেছেন, তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করতে তদন্ত হওয়া উচিত।
এই প্রকল্পের অন্য রাইডগুলোর মধ্যে ‘ডিসকো মেগার’ দাম ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এই রাইড মূলত নৌকা আকৃতির কাঠামো, ভেতরে ৪০ জন বসতে পারে। রাইডটি দুলতে থাকে। এ ছাড়া ‘সুপার এয়ার রেসের’ দর ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এটি দেখতে কিছুটা নাগরদোলার মতো।
টাকা খরচের সুযোগ যেভাবে এল
শাহবাগের শিশুপার্কের আধুনিকায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ৭৮ কোটি টাকার প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দিয়েছিল ভিন্ন একটি কারণে। শাহবাগের শিশুপার্কটির মালিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। পার্কের একটি অংশসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের কাজের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শাহবাগ শিশুপার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি শিশুপার্কের ভেতর দিয়ে ভূগর্ভস্থ পার্কিং নির্মাণের বিষয়টিও রয়েছে। এ কাজের জন্য পার্কের অনেক রাইড (খেলা ও বিনোদনের সরঞ্জাম) খুলে ফেলতে হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের কাজ চলার সময় শিশুপার্কের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই প্রকল্পে যদি বড় ধরনের কোনো অসংগতি থাকে, তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য দ্রুত শিশুপার্কটি চালু করে মানুষকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান
যে কারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মূলত ক্ষতিপূরণ হিসেবে সিটি করপোরেশনকে ওই প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করলে প্রকল্প তৈরি করে ‘ইচ্ছেমতো খরচ’ করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে, সেই বিবেচনায় সিটি করপোরেশন ভিন্ন চিন্তা করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, মূলত তৎকালীন মেয়র তাপস ও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তার আগ্রহে তিন বছর (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত) মেয়াদি এই প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্প যাতে একনেকে দ্রুত পাস হয়, সে ব্যবস্থা করেছিলেন তাপস। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তা না হলে এত দিনে এই প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকা (চলতি অর্থবছরের জন্য) ছাড় হয়ে যেত।
শিশুপার্ক আধুনিকীকরণে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রকল্পে যদি বড় ধরনের কোনো অসংগতি থাকে, তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। এখন তাঁদের মূল লক্ষ্য দ্রুত শিশুপার্কটি চালু করে মানুষকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া।
শিশুপার্কের নামও বদলে গেছে
সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীন এই শিশুপার্ক স্থাপন করা হয়। ১৫ একর জমির ওপর এই পার্কের অবস্থান। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কাছে এই পার্ক হস্তান্তর করা হয়। তখন এটি ‘ঢাকা শিশুপার্ক’ নামে পরিচিত ছিল।
সাদেক হোসেন খোকা যখন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হন, তখন তিনি এই পার্কের নামকরণ করেন ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’। তবে শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পার্কটির নতুন নামকরণ হয় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’।
নাম যা-ই হোক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের কাজ চলায় প্রায় ছয় বছর ধরে শিশুপার্ক বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পের একাধিক সূত্র বলছে, প্রকল্পটি ২৬৫ কোটি টাকার। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করে ৩৯৭ কোটি টাকা করা হয়। সঙ্গে মেয়াদও বাড়ানো হয়। সব ঠিক থাকলে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বলছেন, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলে শাহবাগ শিশুপার্কের কাজ পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হবে না। ফলে শিশুপার্ক কবে খুলবে, তা বলা যাচ্ছে না। আরও দু-তিন বছর সময় লাগবে।
তবে কোনো শিশুপার্ক কিছুতেই ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের জায়গা হতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এ ধরনের নকশা করেছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। রাজধানীতে যেখানে মানুষের অবসর কাটানোর জায়গার প্রচণ্ড অভাব, সেখানে একটি পার্ক ছয় বছর বন্ধ করে রাখার বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না। এখন বলা হচ্ছে সংস্কারকাজ শেষ করতে আরও দু-তিন বছর লাগবে। যাঁরা এই পরিকল্পনার সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছোট কাজকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর একটা প্রবণতা ছিল। এটা করতে গিয়ে বেশির ভাগ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতো। শাহবাগের শিশুপার্কের ক্ষেত্রেও এটি দেখা গেল। এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বিগত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা চলতেন খেয়ালখুশিমতো, কোনো কিছুই তোয়াক্কা করতেন না তাঁরা।
prothom alo