শান্তির আহ্বানে সাড়া দেয়নি, উল্টো হুমকি কেএনএফের

শান্তির আহ্বানে সাড়া দেয়নি, উল্টো হুমকি কেএনএফের 

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বান্দরবানের ১২টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারা। তবে গতকাল রোববার পর্যন্ত সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি কেএনএফ। উল্টো ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেছে, ‘পূর্বপুরুষের ভূমি রক্ষায় একবিন্দু ছাড় নয়। পাহাড়-পর্বত ও বন-জঙ্গল সংরক্ষণের দায়িত্ব কেএনএফের।’

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বান্দরবানের ১২টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’। এর নেতৃত্বে আছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা। আর সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বম সম্প্রদায়ের মূল সংগঠন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম। লুট করা অস্ত্র ও নিজেদের ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।

গত শনিবার বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে (কেএসআই) জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি মতবিনিময় সভা হয়। সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা বলেন, ‘কেএনএফের সশস্ত্র নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি ও মুখোমুখি কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও চলতি বছরের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকে অস্ত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ নিজেদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আবার বসার দিন ধার্য ছিল। তার আগেই তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে।

কেএনএফের দাবি, তাদের সঙ্গে আরও পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে। এগুলো হলো– ম্রো, খেয়াং, পাংখোয়া, লুসাই ও খুমী। তবে গত বছর শহরের অর্নণ সারকী টাউন হলে এই পাঁচটি নৃগোষ্ঠী কেএনএফের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। শনিবার মতবিনিময় সভায়ও তারা বিষয়টি পরিষ্কার করে।

ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সভাপতি খুশীরায়

ত্রিপুরা বলেন, ‘পাঁচটি সম্প্রদার ঘোষণা দিয়েছে, তারা কেএনএফের আন্দোলনের সঙ্গে নেই। তাদের মতো করে বম নেতাদেরও ঘোষণা দেওয়া উচিত, তারা কেএনএফের সঙ্গে নেই।’ বম সম্প্রদায় এই ঘোষণা না দেওয়ায় অন্য সম্প্রদায়ের নেতারা মনে করছেন কেএনএফের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে। জেলা পরিষদ সদস্য জুয়ের বম মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘কেএনএফের সঙ্গে বম সম্প্রদায়ের সবাই জড়িত– এ অভিযোগ সঠিক নয়। আতঙ্কের কারণে সাধারণ বমরা মুখ খুলতে পারছে না।’

সভায় মারমা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মংসিনু মারমা, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম, আইনজীবী উবাথোয়াই মারমা, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি রাংলাই ম্রো, বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজার লম বম, বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান, পাড়াপ্রধান ও বিভিন্ন পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

হেডম্যান-কার্বারি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা সভায় বলেন, ‘কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে না ফিরলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। মানুষজন আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে।’ তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আলোচনা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

নিহত সেনা রফিকুলের দাফন সম্পন্ন

বান্দরবানে কেএনএফের গুলিতে নিহত সেনাসদস্য মো. রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার রাতে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ আলী কাইদার বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসেন সেনাসদস্যরা। পরে বাড়ির পাশের মসজিদ মাঠে জাতীয় ও সামরিক বাহিনীর পতাকায় আচ্ছাদিত সেনাসদস্য রফিকুল ইসলামের কফিনে গান স্যালুট দেয় সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মো. রফিকুল ইসলাম ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে করপোরাল পদে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও তিন পুত্রসন্তান রয়েছে।

নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, রোজার আগে সর্বশেষ বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালেও স্বামীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেখার আর কেউ রইল না!’

বান্দরবান সীমান্তের বড়থলি ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর ৩৮ বেঙ্গলের একটি ক্যাম্প রয়েছে। ওই ক্যাম্পের একটি দল অভিযানে নামে। চার কিলোমিটার দূরে রুমা পলি প্রাংসার মধ্যবর্তী একটি যাত্রী ছাউনিতে পৌঁছায় দলটি। টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে কেএনএফ হামলা চালায়। এতে করপোরাল রফিকুল ইসলাম, ওয়ারেন্ট অফিসার ইদ্রিস মিয়া ও সৈনিক মিলন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে রুমার গ্যারিসনে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর সংকটাপন্ন অবস্থায় করপোরাল রফিকুল ইসলামকে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

বাঘাইছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ

বান্দরবানে যৌথ অভিযানের প্রতিবাদ ও গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবিতে গতকাল রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফের সহযোগী কয়েকটি সংগঠন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক থুইলাপ্রু মারমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলী এলাকায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপির উপজেলা শাখার সভাপতি কিরণ চাকমা। বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের উপজেলা শাখার সভাপতি অমিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য অপর্ণা চাকমা ও পিসিপির উপজেলা শাখার সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক পুলেন চাকমা। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

সমকাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here